সরকারকে দুষলেন প্রধান কৌঁসুলি

মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা এখনো কাটেনি। এক সপ্তাহ ধরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুতির কাজ বন্ধ৷ আর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু এ জন্য সরকারকেই দায়ী করলেন৷
জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা করা এবং তার নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের অন্তর্দ্বন্দ্বে ১৯ মে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুতের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে প্রধান কৌঁসুলির কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য গঠিত কৌঁসুলিদের দল। তবে এখন পর্যন্ত প্রধান কৌঁসুলি কোনো নির্দেশনা দেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অপেক্ষা করছি। এ সমস্যা সরকার সৃষ্টি করেছে, তারাই খুব দ্রুত এর সমাধান করুক। এটা তেমন কোনো সমস্যা নয়। জামায়াতের মামলার প্রস্তুতি বন্ধ হয়নি, সাময়িক স্থবিরতা ঘটেছে মাত্র। যদি সরকার সমস্যার সমাধান না করে, তবে আমরাই কঠোর ব্যবস্থা নেব।’ কত দিন অপেক্ষা করবেন এবং না হলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা সময়ই বলে দেবে।’
সরকার কীভাবে সমস্যা সৃষ্টি করল—এ প্রশ্নের জবাবে গোলাম আরিফ বলেন, প্রথমত, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এ ভারপ্রাপ্ত প্রধান কৌঁসুলির কোনো পদ নেই। গত চার বছরে তাঁর অনুপস্থিতিতে কখনো এ পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি, এবারই প্রথম এটা অবৈধভাবে করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, চিকিৎসা শেষে গত ৩০ এপ্রিল তিনি কার্যালয়ে যোগদান করেছেন। যার অর্থ, ওই দিন থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান কৌঁসুলির আর দরকার নেই। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। আর এই বিষয়কেই কেন্দ্র করে জামায়াতের মামলায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল গোলাম আরিফ চিকিৎসার জন্য এক মাসের ছুটি নিয়ে বিদেশে যান। ২০ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, গোলাম আরিফের অনুপস্থিতিতে প্রধান কৌঁসুলির দায়িত্ব পালন করবেন সৈয়দ হায়দার আলী। এরপর ১৫ মে জামায়াতের বিষয়ে তদন্তের সব নথিপত্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান কৌঁসুলির কাছে হস্তান্তরের নোটিশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা পরিচালনার জন্য গঠিত কৌঁসুলিদের দলটি অভিযোগ প্রস্তুতের কাজ বন্ধ করে পরবর্তী নির্দেশনা চেয়ে প্রধান কৌঁসুলিকে চিঠি পাঠায়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে তঁার বক্তব্য নেওয়া যায়নি৷ আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনমন্ত্রী বুধবার (আজ) দেশে ফিরবেন৷ এরপর তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য বা ব্যাখ্যা দিতে পারবেন৷’ আজ বুধবার আইনমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে৷
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সাত ধরনের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ এনে গত ২৫ মার্চ জামায়াতের বিরুদ্ধে ৩৭৩ পৃষ্ঠার মূল তদন্ত প্রতিবেদনসহ নয় হাজার ৫৫৭ পৃষ্ঠার নথিপত্র চূড়ান্ত করে তদন্ত সংস্থা। ২৭ মার্চ ওই প্রতিবেদন ও নথিপত্র ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। ওই দিন প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ সংবাদ সম্মেলনে জানান, তুরিন আফরোজের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কৌঁসুলি দল তদন্ত প্রতিবেদন ও নথিপত্র যাচাই করে অভিযোগ প্রস্তুত করবে৷ এ সময় ঠিক করা হবে, রাষ্ট্রপক্ষ জামায়াতের নিষিদ্ধ বা সম্পদ বাজেয়াপ্ত, না উভয় শাস্তিই চাইবে৷ পরে তা ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য দাখিল করা হবে৷ কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের অন্তর্দ্বন্দ্বে গত দুই মাসেও অভিযোগ তৈরির প্রস্তুতি শেষ হয়নি৷ এখন তা বন্ধই আছে।
এ প্রসঙ্গে গোলাম আরিফ বলেন, ‘সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা যেন এগোতে না পারে, সে জন্য নানা ধরনের সংকট তৈরি করা হচ্ছে। তবে আমি আশাবাদী, সব প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে আমরা জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলার বিচার শেষ করতে পারব।’
গোলাম আরিফের এই বক্তব্যে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হলো৷ এ নিয়ে সৈয়দ হায়দার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গোলাম আরিফের বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেন৷ প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গোলাম আরিফকে ছুটি দিয়েছে মন্ত্রণালয়৷ সুতরাং তাঁকে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে কাজে যোগ দিতে হবে৷ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করা পর্যন্ত তিনিই ভারপ্রাপ্ত প্রধান কৌঁসুলি৷
এদিকে, দীর্ঘ এক মাস পর ছুটি শেষে গোলাম আরিফ গত সোমবার ট্রইব্যুনাল-১-এ বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন৷