সরকারি অনুদানের ১৩% স্টার্টআপ ভালো অবস্থানে

স্টার্টআপব্লিঙ্কের প্রতিবেদনে স্টার্টআপে ১০০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৮তম। ভারত ২৩ ও পাকিস্তানের অবস্থান ৮২।

দেশে এখন পর্যন্ত ১৭০টি স্টার্টআপকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৩ শতাংশ ব্যবসায়িকভাবে ভালো অবস্থানে আছে। অবশ্য এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছে, বৈশ্বিকভাবেই স্টার্টআপের সফলতা ১০ শতাংশের বেশি না।

অবশ্য সরকারি সহায়তার বাইরে বেশ কিছু স্টার্টআপের নাম এখন মানুষের মুখে মুখে। প্রযুক্তিবিদেরা মনে করেন, বাংলাদেশে স্টার্টআপের সম্ভাবনা অনেক। এ জন্য প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনা, জ্ঞান ও পর্যাপ্ত সহায়তা।  

দেশে স্টার্টআপের কথা উঠলেই সামনে আসে পাঠাও, শপআপ, সহজ, সেবা এক্সওয়াইজেড, চালডালসহ বেশ কিছু নাম। এর বাইরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া অভিযাত্রিক, কুকআপস, জাহাজি, ট্রাক লাগবেসহ কিছু স্টার্টআপের নামও আসছে।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) অধীনে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সাল থেকে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে স্টার্টআপদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া শুরু করে। এ প্রকল্পের ব্যয় ২৭১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

প্রকল্প থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত ১৭০টি স্টার্টআপকে ১০ কোটি টাকার বেশি অনুদান দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্টার্টআপ ২৬৫ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে। অনুদান পাওয়া উদ্যোগগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসায়িক পণ্য, যোগাযোগব্যবস্থা সংক্রান্ত।

আইডিয়া প্রকল্পের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি অনুদান পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভালো করছে ১৩ শতাংশ, টিকে আছে ৩২ শতাংশ, উঠতি ২ শতাংশ, লড়াই করছে ২২ শতাংশ, নতুন ২৭ শতাংশ এবং হারিয়ে গেছে ২ শতাংশ। এ ছাড়া ২ শতাংশ স্টার্টআপ টাকা নেয়নি।  

গ্লোবাল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের র‍্যাঙ্কিং নিয়ে কাজ করে স্টার্টআপব্লিঙ্ক। তাদের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৮। র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ আগের বছরের চেয়ে ১১ ধাপ পিছিয়েছে। র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত ২৩, পাকিস্তান ৮২, শ্রীলঙ্কা ৯৯, নেপালের অবস্থান ১০০তম। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরকারি সহায়তা, ভালো অবকাঠামো এবং স্থিতিশীল ইন্টারনেট ছাড়া বাংলাদেশ তার সম্পূর্ণ সম্ভাবনায় উন্নীত হতে পারবে না এবং কাঙ্ক্ষিত স্টার্টআপ হাব হয়ে উঠতে সক্ষম হবে না।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ অবশ্য বলেছেন, পাঁচ বছরে প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি অনেক বেশি। দেশি–বিদেশি মিলিয়ে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ওপরে বিনিয়োগ এসেছে। যারা শূন্য থেকে শুরু করেছিল, তাদের অনেকে এখন ১৫০-২০০ কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

সফল ও পিছিয়ে পড়া স্টার্টআপ

সরকারের আইডিয়া প্রকল্পের সিলেকশন কমিটির সদস্য অনন্য রায়হান বলেন,নতুন উদ্যোগগুলোর ধরন শুরুতে প্ল্যাটফর্ম কেন্দ্রিক হলেও এখন অনেক বৈচিত্র্যময়।

অনুদান নিয়ে ভালো করা একটি স্টার্টআপ হচ্ছে অভিযাত্রিক। ভ্রমণ নিয়ে তারা কাজ করে। এক লাখ টাকা নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু, যা এখন কোটি টাকার ওপরে দাঁড়িয়েছে। তারা সরকার থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদান পায়।

অভিযাত্রিকের অন্যতম উদ্যোক্তা নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাফল্য পেতে হলে লেগে থাকতে হবে। যে আইডিয়া নিয়ে আমরা নেমেছিলাম, কাজ করতে গিয়ে তার ৮০ শতাংশই পরিবর্তন করতে হয়েছে। প্রচুর মার্কেট রিসার্চ করতে হবে।’

‘৩০০ মিলিয়ন ডলারের ওপরে বিনিয়োগ এসেছে। শূন্য থেকে শুরু করা অনেকে এখন ১৫০-২০০ কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’
জুনাইদ আহমেদ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী

আইডিয়া প্রকল্প থেকে ১০ লাখ টাকা পায় গারবেজম্যান। এর উদ্যোক্তা ফাহিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ভালো করার চেষ্টা করছেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম রোকনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্টার্টআপগুলোর মূল কাজ হচ্ছে ভাবনার উন্নয়ন (আইডিয়া ডেভেলপ)। কিন্তু আমাদের এখানে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও ক্লাউড কম্পিউটিং এক করে একটি ডিজিটাল সেবা দেওয়া হচ্ছে। এটা টেকসই না।’

আইডিয়া প্রকল্প প্রি-সিড স্টেজে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অনুদান দেয়। কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ধাপে ধাপে এই টাকা দেওয়া হয়।

অনুদান নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া উদ্যোক্তাদের মধ্যে ড্রাইভারবিডিডটকমের মোহাম্মাদ শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ড্রাইভাররা চুক্তি ভঙ্গ করতেন এবং গাড়ির কিছু হলে তার ক্ষতিপূরণের জন্য আমাদের ওপর চাপ আসত। তাই বন্ধ করে দিই।’ তিনি পাঁচ লাখ টাকা অনুদান নিয়েছেন।

১০ লাখ টাকা অনুদান নেওয়া স্মার্ট বেড ও হুইলচেয়ার তৈরির ফাইভডি টেকনোলজি এখন আর কার্যকর নয়।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেটার স্টোরিজের মিনহাজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, বৈশ্বিকভাবেই স্টার্টআপগুলোর সফলতা ১০ শতাংশের বেশি না। বাংলাদেশের অনেক দুর্বলতা আছে।

সম্প্রতি স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড সাতটি স্টার্টআপে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এ বছর ৫০টি স্টার্টআপে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে তারা।

আইসিটি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অনুদান দিতে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি আছে। তিনি বলেন, এখন বিদেশ থেকেও বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে।