সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তিতে ৪০ শতাংশ এলাকা কোটার উদ্যোগ

মহানগর এলাকায় অবস্থিত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে এলাকার ভর্তি-ইচ্ছুকদের অগ্রাধিকার দিতে তাদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা রাখার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। আসন্ন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সময় থেকেই এটি বাস্তবায়নের চিন্তাভাবনা চলছে।
মাউশির সূত্র বলেছে, এলাকার শিক্ষার্থীরা এলাকার বিদ্যালয়ে পড়বে—এই চিন্তা থেকেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে আসন্ন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উপপরিচালক ও কয়েকজন প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা প্রায় সবাই ভর্তির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান সভায় উপস্থিত না থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ বুধবার আবারও সভা হবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ ছাড়া আজ বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি নিয়েও সিদ্ধান্ত হতে পারে।
মন্ত্রণালয় এবং মাউশির কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, এলাকা কোটা করার উদ্যোগটি ভালো। তবে তাড়াহুড়ো করে এটি করতে গেলে নানা সমস্যা হতে পারে। তাঁরা বলেন, মহানগর এলাকায় বেশির ভাগ লোক ভাড়া বাসায় থাকেন। সে ক্ষেত্রে এলাকাবাসী চিহ্নিত করার কাজটি হবে জটিল। এ ছাড়া অনেক এলাকায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। অনেক বিদ্যালয়ের মান ভালো নয়। আবার নামী বিদ্যালয়গুলো যেসব এলাকায় অবস্থিত, সেগুলোর আশপাশে বিত্তশালী ও অবস্থাপন্ন পরিবার বসবাস করে। ফলে ওই সব বিদ্যালয়ে গরিব কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ভর্তির বিষয়টি জটিল হবে।
অবশ্য কোনো কোনো কর্মকর্তা বলেছেন, এ ব্যবস্থা চালু হলে এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয়গুলোকে ভালো করার তাগিদ সৃষ্টি হবে। প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হলেও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে একটি সময়ে সব এলাকায় ভালো বিদ্যালয় তৈরি হবে। তখন আর সমস্যা থাকবে না। তবে এই সিদ্ধান্ত শুধু সরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নিলেই হবে না, বেসরকারি বিদ্যালয়েও তা চালু করতে হবে।
অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে এলাকার শিশু সেই এলাকার বিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। এরপর তাঁরা এ উদ্যোগ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত আছে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তিতে ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা রাখার উদ্যোগের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এটি কীভাবে করা যায়, সেটি এখন ঠিক করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষার্থীই কীভাবে নিজ এলাকার বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে, সেটি বিবেচনা করা হবে।
মাউশির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে ৩২৮টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে আছে ৩২টি বিদ্যালয়। ঢাকা মহানগরকে সম্প্রতি ১৬টি ‘শিক্ষা থানায়’ ভাগ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরকে পাঁচটি এবং রাজশাহী ও খুলনা মহানগরকে দুটি শিক্ষা থানায় ভাগ করা হয়েছে।
মাউশির পদস্থ একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ওই সব শিক্ষা থানাধীন বিদ্যালয়গুলোতে ওই সব শিক্ষা থানার শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। পরে পর্যায়ক্রমে আরও কাছাকাছি এলাকাকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতেও এলাকাবাসী নির্ধারণ করা যেতে পারে।
এদিকে গতবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসন্ন ভর্তির সময় থেকে ছয় বছর বয়সের আগে কোনো শিশুকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা যাবে না। গতকালের সভায় এ কথা জানানো হয়। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষানীতি অনুযায়ী, পাঁচ বছর-ঊর্ধ্ব বয়সী শিশুদের এক বছরমেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক এবং ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সভা সূত্র বলেছে, সভায় উপস্থিত একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স পরিবর্তন করায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ন্যূনতম বয়স (১৪ বছর) পরিবর্তন করতে হবে।