সরকারের কাছে নুরুলের ‘সরল প্রশ্ন’

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক
ফাইল ছবি

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক সরকারের কাছে একটি ‘সরল প্রশ্ন’ রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশেই দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে৷ দেশে হাটবাজার, মাঠঘাট, বাস-লঞ্চ-স্টিমার, অফিস–আদালত—সবকিছুই চলছে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে সমস্যা কোথায়? সিম্পল কোয়েশ্চেন। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছিল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মঘণ্টা ও লোকবল কমিয়ে আনা হয়েছিল, তার একটা যৌক্তিকতা ছিল। সব একই প্রক্রিয়ায় চলেছে। এখন কিন্তু কোথাও সংকুচিত করে কাজকর্ম চলছে না, একেবারে ফুল স্পিডে চলছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ থাকছে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিল ছাত্র অধিকার পরিষদ। আজ বুধবার ১৫তম দিনে কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি।

নুরুল বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে দূরে আছে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা মানসিকভাবে সমস্যায় আছেন। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ থাকে না। অনলাইন ক্লাসে যেখানে শিক্ষকেরা সামনে থাকেন না, শিক্ষার্থীদের সরাসরি দেখার সুযোগ নেই, সেখানে কীভাবে তাঁরা মনোযোগ ধরে রাখবেন? ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, তার সুবিধা সারা বাংলাদেশে আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। এখন পর্যন্ত আমরা সেই অবকাঠামো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারিনি।

এই মুহূর্তে শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন দরকার, কিন্তু তা তো আমরা পারছি না। ডিভাইস সরবরাহের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। সুতরাং আমাদের দাবি, অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে, প্রয়োজনে শিক্ষা কার্যক্রমের সময়সীমা কমিয়ে আনতে হবে। সেটা পাঁচ দিনের পরিবর্তে প্রয়োজনে তিন দিন করে দিতে পারেন, একই ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিফটে ভাগ করে ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম আর একটা দিনের জন্যও বন্ধ রাখা যাবে না।’

একটা সান্ত্বনার বাণী তো শোনানো যেত

হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ১৫ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি করেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে নুরুল বলেন, ‘এটা লজ্জাজনক যে ১৫ দিনের মতো কয়েকজন শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করলেন, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন এসে তাঁদের খোঁজখবরটুকুও নিতে পারলেন না। একটা সান্ত্বনার বাণী তো শোনানো যেত যে বাবা, তোমাদের দাবির বিষয়ে আমরা উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

আজকে যখন ছেলেগুলো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, একজনের আমাশয়, আরেকজনের ডায়রিয়া হয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা তাঁদের অনুরোধ করেছি যে তোমাদের দাবির বিষয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-প্রগতিশীল ছাত্রজোটসহ সব ছাত্রসংগঠনই একমত হয়েছে। কাজেই এখানে তোমাদের আর কষ্ট করা লাগবে না, তোমরা একটা সমাপ্তি টানো। তখন তাঁরা আজকের এই সমাবেশের আয়োজন করেছেন।’ ক্যাম্পাস খোলার পর ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে সব ছাত্রসংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে সরব হওয়ার আহ্বান জানান নুরুল।

হল খোলার আগপর্যন্ত পরীক্ষায় না বসতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান

১৫ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি করা ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আমাদের অবস্থান কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষার্থীরা ভালো থাকবে। আমি প্রচণ্ডভাবে অসুস্থ হয়ে গেছি।কনকনে শীতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ধুলাবালুর মধ্যে অবস্থান করতে হয়েছে। ১৫ দিন ধরে একই চাদর, প্যান্ট ও পাঞ্জাবি পরে এখানে অবস্থান করেছি। মাঝেমধ্যে ঘুম থেকে উঠে দেখেছি, আমাদের পাশে কুকুর শুয়ে আছে। এত কষ্ট ও ত্যাগের মধ্যেও অবস্থানের একটাই কারণ, শিক্ষার্থীদের চাওয়া পূরণ। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই অবস্থান শুরু করেছিলাম। আজ দুপুরে খবরে জানতে পারলাম যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং আগামী মার্চ থেকে খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমাদের অবস্থান কর্মসূচিতে সরকারের টনক নড়েছে, আমরা ইতিমধ্যে ঘোষণা পেতে শুরু করেছি। তাই অবস্থান কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করছি, কিন্তু উই উইল কাম ব্যাক অ্যাগেইন।’ হল খোলার আগপর্যন্ত পরীক্ষায় না বসতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।