সরদার ফজলুল করিমের জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

আজ ১ মে বাংলাদেশর অন্যতম চিন্তক ও দার্শনিক সরদার ফজলুল করিমের ৯৬তম জন্মদিন। ‘স্মৃতির কুসুম মালিকা’র লেখক সুলতানা রাজিয়া (কলি) ছিলেন সরদার ফজলুল করিমের সহধর্মিণী, সংগ্রামী জীবনের চলার পথের সঙ্গী। নিভৃতচারী সুলতানা রাজিয়াকে কমিউনিস্ট সরদার ফজলুল করিমের সঙ্গে পথ চলতে গিয়ে পার হতে হয়েছে জীবনের অনেক চড়াই–উতরাই। সংসারসংগ্রামে ‘ক্লান্ত সংগ্রামী’ দিনান্তে লিখেছেন তাঁর দিনলিপি। সেই দিনলিপি থেকেই কিছু অংশ এবং তাঁর মৃত্যুর পর সরদার ফজলুল করিমের ‘স্মৃতি-বিস্মৃতি’র দিনলিপি উদ্ধৃত করে সরদার ফজলুল করিমের জন্মদিনের শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

সুলতানা রাজিয়ার দিনলিপি থেকে

১ মে ২০০৫

সরদার ফজলুল করিম
ছবি : সংগৃহীত

সকাল সাড়ে ৯টায় কবি শামসুর রাহমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আগমন। ফুলের তোড়া এবং মিষ্টি নিয়ে তাকে জন্মদিনের অভিনন্দন জানালো ড. আতিয়ার রহমান অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা আকাশকে নিয়ে। ব্যারিস্টার শফিক (রানীর দেবর), তার স্ত্রী মাহফুজা—এদের আমি চিনেছি। পরে এসেছিল রামেন্দু এবং মফিদুল হক। ৩০শে এপ্রিল এসেছিলেন ডা. শাফি মজুমদার আঙ্গুর এবং ফল নিয়ে।

৭ মে ২০০৫

আজ প্রথম আলোর ‘ছুটির দিনে’ ছোট পত্রিকাটিতে সর্দার সাহেবের ছবি বেরিয়েছে মলাটে। আর ভেতরের পাতায় আছে তার সম্বন্ধে আলোচনা, তার পরিবারের কথা—লিখেছে মশিউল আলম। ছবিও দিয়েছে—আমার, জ্যোতি-তিতুসহ ওদের আব্বার ১৯৭৭– এ তোলা ছবি, আর ১৯৪৬–এ তোলা দুই বন্ধুসহ সর্দার নিজে, অনার্সে 1st class পেয়ে রেজাল্ট বের হবার পরে। ছবিতে নুরুল ইসলাম সাহেব আছেন। তিনি Ambassador ছিলেন। মশিউল ঔপন্যাসিক, কল্পনার রঙ মিশিয়ে লিখেছে। ছবি আমার কাছ থেকেই সংগ্রহ করেছে। স্বাতী আমার সঙ্গে রাগ এবং অভিমান করে অনেক দুঃখ প্রকাশ করলো, তার ছবি দেইনি বলে। তাড়াহুড়োতে confused হয়ে আমি ছবি প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই এটা বড় ভুল হয়ে গেছে—স্বাতীর একটা ছবি দেওয়া হয়নি।

১২ মে ২০০৫

সর্দারের জন্মদিনের অভিনন্দনের অনুষ্ঠান টিএসসির ক্যাফেটারিয়ায়— বিকেল সাড়ে ৪টায়। আমিও গিয়েছিলাম ওর সঙ্গে। আকাশ ওকে নিয়ে যাবার জন্য অর্ণব নামের একটি ছেলেকে পাঠিয়েছিল,সে ট্যাক্সি-ক্যাব সাথে নিয়ে এসেছে। আমরা প্রস্তুত ছিলাম। ৪টায় রওয়ানা দিয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম টিএসসি ভবনে। হেনা দাশকে প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে। তখন তিনিও গাড়ি থেকে নামলেন। একটি মেয়ে ধরে ধরে তাকে নিয়ে যাচ্ছিল। গেটে কামাল লোহানী, আকাশ এবং আরও কয়েকজন Prominent ব্যক্তি দাঁড়িয়েছিলেন সর্দার সাহেবকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য, আমি হেনাদির সঙ্গে ধীরে ধীরে হাঁটছিলাম। শেষে পেছনের দরজা দিয়ে আমরা ক্যাফেটারিয়ায় প্রবেশ করলাম।

অনুষ্ঠান শেষে আমাদের বাসায় পৌঁছে দিল ড. আতিয়ার রহমান তার গাড়িতে। ফুলের তোড়া সব ও টিএসসিতেই আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠজনদের বিলিয়ে দিয়েছে। ভাগ্নে সেলিম, কামাল এবং আলমগীর তার মেয়েকে নিয়ে এসেছিল। সেলিম তার স্ত্রী শেলী, মেয়ে সাদিয়া ও তার নতুন বৌমাকে (সাগরের স্ত্রী) নিয়ে এসেছিল। অ্যারোমা,পূর্ণবাবু, প্রফেসর ডালিম, পাভেল (ফটোগ্রাফার), প্যাপিরাসের মোতাহার সবাই এসেছিল। রতনতনুকে দেখলাম না।

১৩ মে ২০০৫

সরদার ফজলুল করিম
ছবি : সংগৃহীত

দেশনেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সুলতানা রাজিয়ার আলাপচারিতা

বেলা ১১টায় রামেন্দু মজুমদার এবং মফিদুল হক এলেন। ফেরদৌসী মজুমদার পাঠিয়েছে ২ বোতল জুস। রামেন্দু আগে একটি জিনিস দিয়েছে—কর্ডলেস ফোন। ওর ড্রাইভারকে দিয়ে সেট করে দিয়েছে। এ দুজনই হলেন দুই বিশেষ ব্যক্তিত্ব—প্রকাশক এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব। সর্দার সাহেব দুই কপি প্লেটোর সংলাপ উপহার দিলেন তার দুই প্রীতিভাজন বন্ধু এবং ভক্তকে। সর্দার বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছিল—স্মৃতি অসহযোগিতা করছিল—মাঝে মাঝে ভুলে যাচ্ছে কারো নাম বা বইয়ের নাম।

রামেন্দু মজুমদারের সঙ্গে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে মনে হলো। কেননা কর্ডলেস ফোন দিয়ে সর্দারের সাথে সংযোগ করিয়ে দিল। সংযোগ করিয়ে দেওয়ার সময়ে হাসিনাকে ‘আপু’ বলে সম্বোধন করলো। সর্দার emotional হয়ে বেশি কিছু বলতে পারলো না। শুধু বললো, তুমি তো আমার বড় ভাইয়ের কন্যা। তোমার বাবা আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। তোমাকে ধন্যবাদ—মনে করে তুমি আমার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ফুল পাঠিয়েছো। বললো, আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলো। এই বলে কর্ডলেস আমার হাতে দিল। আমি তো মুশকিলে পড়ে গেলাম। সামনে বসে রয়েছেন রামেন্দু মজুমদার ও মফিদুল হক। আমি বললাম, তুমি বয়সে আমার ছোট, কিন্তু গুণে-মানে অনেক বড়, আপনাকে তুমি বলি কি করে? শেখ হাসিনা বললেন, অবশ্যই তুমি বলবেন। আমি বলি, বঙ্গবন্ধু আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সম্ভবত শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। তিনি আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান করে আমাদের পরিবারকে ধন্য করেছিলেন। তুমি দেশ নেত্রী, সুযোগ্য পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা। গত ২১শে আগস্ট তোমার উপরে যখন গ্রেনেড হামলা হলো, তখন আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। তুমি ব্যস্ত মানুষ, বেশি কথা বলবো না, বাংলার জনতা তোমাকে ভালোবাসে, সামনের নির্বাচনে তোমার পার্টি ক্ষমতায় আসবেই এবং তোমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। এই বলে ফোনে দেশনেত্রীর সঙ্গে কথা বলা শেষ করলাম। রামেন্দু আর মফিদুল বললো, ‘এই যে আপনি বলছিলেন, আপনার সঙ্কোচ হচ্ছে, ভালোই তো কথা বললেন শেখ হাসিনার সঙ্গে।’

২০০৯ সালের ২৩ আগস্ট মা সুলতানা রাজিয়া (কলি)–র প্রয়াণের পর আব্বা (সরদার ফজলুল করিম)–এর দিনলিপি থেকে।

২৪ আগস্ট২০০৯

সরদার ফজলুল করিম
ছবি : সংগৃহীত

কলির দেহান্তরের পরে আমাদের যা করণীয়।

কলির রচনাবলী সংগ্রহ করে তা যত্ন করে রক্ষা করা; কলির ‘স্মৃতির কুসুম মালিকা’ র উপর বাংলা একাডেমির একটি স্মারক অনুষ্ঠানে আলোচনা করা এবং আনুষ্ঠানিকভাবে স্মৃতির কুসুম মালিকা, আমার হজ্জ্ব কথা এবং বাংলাদেশ-ভারত ভ্রমণ কাহিনীর একটি করে কপি বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারে দান করে এইসব গ্রন্থগুলো সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেওয়া।

বাৎসরিকভাবে ২৩ আগস্ট তারিখে সুলতানা রাজিয়া বেগম–এর প্রয়াণ দিবস উপযুক্ত আলোচনাদির মাধ্যমে পালন করা।

‘সুলতানা রাজিয়া বেগম’ শিরোনামে একখানি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের ব্যবস্থা করা।

এ জন্য একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশনা কমিটি গঠন করা এবং নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে এই স্মারকগ্রন্থের প্রকাশের ব্যবস্থা করা।

স্মারক কমিটির প্রস্তাবনা:

আফসানা করিম স্বাতি—সম্পাদক

সদস্যবৃন্দ— ডা. শাকিল আখতার, মোহাম্মদপুরের মিসেস আলী, বেবী মওদুদ, জনাব মোহাম্মদ আলী, প্রয়াতের ভ্রাতা ইকবাল হোসেন (হারুন), মাসুদ করিম তিতু, মিসেস দিনা, বেগজাদী আপা, সেলিনা হোসেন।

স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক ডা. আফসানা করিম স্বাতির আমাদের বাসার সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণকারী বুয়া তথা রহিমার মা’র কাছ থেকে প্রয়াত সুলতানা রাজিয়া বেগম সম্পর্কে স্মৃতিকথা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এ জন্য একটি টেপ রেকর্ডার ব্যবহার করতে পারলে ভাল হয়।

স্মারকগ্রন্থের প্রকাশকাল: ২০১০–এর ২৩ আগস্ট: স্মৃতিদিবস পালনের দিবসকাল।

এই প্রস্তাবিত স্মারকগ্রন্থের জন্য একটি শব্দগ্রাহক যন্ত্র তথা Sound Recorder ক্রয় করে ব্যবহার করা গেলে ভাল হয়।

আগামীকাল কলির কুলখানি বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে। মন্টি, স্বাতী, তিতু আসবে। তারা আমাকে যেমনভাবে চলতে বলে, আমি আগামীকাল তেমনভাবে চলার চেষ্টা করব। কলি তার নিজের রাজ্য থেকেও আমার এমন চেষ্টাকে অনুভব করতে পারবে—সে বিশ্বাস আমার আছে।

২৭ আগস্ট ২০০৯

আজ গেল ২৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার ২০০৯, আজ ছিল কলির শোকসভায় আহুত অনুষ্ঠান। আমার জানা অজানা সকলেই এসেছিলেন।

এখন রাত ১০টা। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে, এর ব্যাপকতা এবং যাঁরা এসেছেন তাঁদের আন্তরিকতা সম্পর্কে আমার নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করার কোন ক্ষমতা আমার নাই। স্মৃতির কুসুম মালিকার লেখিকা সুলতানা রাজিয়াকে আমি তার জীবনের সরদার কেবল এটুকুই বলতে পারি। কলি তুমি যেখানেই থাকো, তুমি আমার কাছ থেকে শুধু এটুকু শুনে রাখ—তোমার নিজের জীবনের আহবানে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা সকলেই তোমাকে, তোমার জীবনকে আন্তরিক আশীর্বাদ করেছেন, তোমার পরিবারের সকলের জন্য মঙ্গল কামনা করেছেন। বস্তুত তোমার স্মৃতির উদ্দেশে সংগঠিত এই অনুষ্ঠান আমার জীবনে একেবারেই অচিন্তনীয়। আমি নিজেকে একেবারে ভাগ্যবান বলে গণ্য করছি। যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সকলের নাম যে আমি জানতাম, তাও নয়। এবং তোমার স্মৃতির কুসুমের ডাকে এত আন্তরিক অনুষ্ঠানের কথা কল্পনাও করতে পারিনি।

আমার চাইতে অধিকতর তোমার জীবনের আবর্তনে তাঁদের আগমন ঘটেছিল, তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আজ এর চাইতে বেশি কোন কথা আমার দিনলিপিতে লিপিবদ্ধ করতে পারবো না। আমার শেষ বাক্য শুধু এটুকু যে, আমার জীবনকে তোমার সাহচর্যের জন্য ধন্য বলে গণ্য করছি। তুমি আমাদের জীবনে যেমন নাই, তুমি তেমনি আছ আমাদের জীবনে, আমাদের স্বপ্নে। তাতে তোমার নিজের জীবনের স্বপ্ন আমরা সবাই তোমার জন্য বাস্তবে যে প্রস্ফুটিত করতে একান্ত সংকল্পবদ্ধ, এ কথা তুমি সত্য জেনো। জয়তু স্মৃতির কুসুম মালিকা সুলতানা রাজিয়া।

তোমার সরদার ফজলুল করিম

১৪ নভেম্বর ২০০৯

সন্ধ্যার পরে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, তাঁর সঙ্গী সোহরাব হাসান সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর লোকদের দিয়ে বিরাট একসাজি ফলমূলও দিয়ে গেছেন।

আমি নিজের মনে বলেছি, আমার এত আত্মজন থাকতে আমি এই দুনিয়া থেকে চলে যাই কেমন করে। সে জন্যই আমি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কলি যেখানে গেছেন সেখানে যেতে পারছি নে। মৃত্যুকে আমি বিশ্বাস করি না ঠিকই কিন্তু সমাজ নামের পারস্পরিক যাতায়াতকে অস্বীকার করি কি করে! মতিউর কলির স্মৃতির মালিকা খানি হাতে নিয়ে বলেছেন, আমি তাঁর এই বইয়ের আলোচনা প্রথম আলোতে প্রকাশ করব। তাঁর এই কথা শুনে আমার মনেও ভাল লাগল। আমি ভাবলাম এতদিনে কলির স্মৃতির কুসুম মালিকার নিশ্চয়ই একটি গতি হবে।

মতিউরের এমনভাবে আসাতে আমার খুব ভাল লাগছে।

১৯ নভেম্বর ২০০৯

১৯ নভেম্বর; বৃহস্পতিবার আমার দিনলিপিটি প্রথম আলোতে ব্যবহারের জন্য প্রেরণ করছি।

সম্পাদক, প্রথম আলো

প্রীতি ভাজনেষু

আজকের তো দিনলিপিটি লেখার বেশ মালমশলা তৈরী হয়েছে। এমনটা যে হবে তা সকালেও ভাবতে পারিনি। এখন দেখছি, আজকের দিনটা পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য খুবই জরুরী ছিল।

আমি তো গতকালও শ্বাসকষ্টতে মারা যেতে পারতাম এবং আমি যথার্থই যদি মারা যেতাম, তাহলে ঘটনাসমূহ এমন সাক্ষাৎভাবে দেখতে পারতাম না;

সকালের দিকেই হাইকোর্টের, সুপ্রিমকোর্টের বিস্ময়কর রায় বেরিয়েছে যে, তাঁরা আদৌ চিন্তা করতে পারেনি এমনভাবে মানুষ হত্যা করতে পারে মানুষকে। আমরাও কল্পনা করতে পারি নি,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকেসহ সমস্ত পরিবার পরিজনকে গুলি করে হত্যা করা যেতে পারে! ১৯৭৫ সালের হত্যাকান্ড আজকের ২০০৯ সাল থেকে অন্তত চৌত্রিশ বছর আগের ঘটনা। সুপ্রিমকোর্ট বলেন, এই মানুষগুলো কি মানুষ না পশু? পশু তো অন্য কোন পশুকে এমন করে হত্যা করে না! হ্যাঁ এই ভাষাতে হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট তাঁদের আজকের এই কথা ঘোষণা করেছেন।

তাঁরা আরও বলেছেন: এই হত্যাকারীদের আমরা দেশের সরকারকে অবিলম্বে বন্দী করার হুকুম দিচ্ছি। ওদের ধরা আদৌ কোন ব্যাপার নয়, রাষ্ট্র তো পারে এবং এটা তাদের করতে হবে।

তাই বলছিলাম, গতকাল যদি আমি মরে যেতাম, তাহলে আমার ব্যক্তিগত জীবনটাও যথার্থই ব্যর্থ হয়ে যেত!

আগামীকালের দৈনিক প্রথম আলোতে নিশ্চয়ই আরও বিস্তারিতভাবে আজকের ঘটনা প্রকাশিত হবে!সেই কাগজের জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। আমি জানি এ কারণে এ রাতে আজ আর ঘুম হবে না। তা না হোক। জীবনের অনেক রাতেই আমার ঘুম হয়নি। আজকের নির্ঘুম রাত্রিটা আমার জীবনের একটা আনন্দের নির্ঘুম রাত হোক তাতে আমার কোন অনিচ্ছা হবে না।

সরদার ফজলুল করিম

৮ জানুয়ারী ২০১০

একটু পরেই সকাল ছয়টায় শুরু হবে শুক্রবার ৮ জানুয়ারী ২০১০; ফোন করে যে রাতটা পার করেছি তার বিবরণ দেওয়াও সম্ভব নয়। আমার বই এর বনের এই বৃক্ষ তো, এই বৃক্ষ, ঐ বৃক্ষ করতে করতে যথার্থই পুরো বনটার এ মাথা থেকে ও মাথায় চলাচল করেছি। মনে হয়েছে আমার এ জীবনের শেষ রাতের এ দরজা থেকে ও দরজায় গমনাগমন করেছি। আজ যদি ‘স্মৃতির কুসুম মালিকা’ র লেখিকা থাকতেন তবে তাঁর ধমকের আঘাতে রাতটাকে আমি এভাবে কি পাড়ি দিতে পারতাম? এ কথা তাঁকে মনে করেই বলতে পারলাম।