সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও সোভিয়েত প্রতিনিধির যুক্তি

একাত্তরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন মঈদুল হাসান। পরবর্তী সময়ে তিনি লিখেছেন মূলধারা ’৭১ এবং উপধারা একাত্তর, মার্চ-এপ্রিল নামে দুটি বই। বিভিন্ন দেশে অবমুক্ত হওয়া মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ঘেঁটে ও তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি লিখছেন আরও একটি বই। তাঁর প্রকাশিতব্য সেই বইয়ের দ্বাদশ অধ্যায়ের প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হলো আজ।

মঈদুল হাসান

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষস্থানীয় নীতি উপদেষ্টা পি এন হাকসারের সঙ্গে আমার দ্বিতীয় বৈঠকের চার দিন পর দুটি ঘটনা ঘটে। একটি ঘটনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায়। আরেকটি সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে। এ দুটি ঘটনার পেছনে হাকসারের উদ্যোগ ছিল সক্রিয়।

মস্কোর ঘটনাটি আমি জেনেছি অনেক বছর পর। আর কলকাতার ঘটনা জেনেছি সঙ্গে সঙ্গে। কেননা তা ছিল আমাকে যুক্ত করেই। দিল্লি থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী প্যাট্রিয়ট সংবাদপত্র গ্রুপের প্রধান অরুণা আসফ আলী ৫ জুন সকালে হঠাৎ কলকাতায় আসেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। কলকাতায় আমি একটি সাশ্রয়ী হোটেলে ছিলাম। তিনি নিজের পরিচয় দিতেই তাঁকে চিনলাম। ভারতের বামপন্থী মহলের সুপরিচিত নেতা তিনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন–সমর্থিত আফ্রো এশীয় সংহতি কমিটির ভারতীয় শাখার সভাপতি। তাঁর সঙ্গে একজন ভদ্রলোক ছিলেন। অরুণা আসফ আলী আমাকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভদ্রলোক তাঁর প্যাট্রিয়ট পত্রিকার কলকাতা ব্যুরো চিফ প্রফুল্ল রায়চৌধুরী।

অরুণা আসফ আলী আমাকে জানালেন, তিন দিন আগে পি এন হাকসারের অনুরোধে তিনি ভারতে নিযুক্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত নিকোলাই পেগভের সঙ্গে দিল্লিতে দেখা করেন। এ সময় তিনি পারস্পরিক মতবিনিময়ের জন্য তাঁদের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত প্রতিনিধির এক বা একাধিক বৈঠকের ব্যাপারে বলেছেন। আলোচনার বিষয়ে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রাখার শর্তে পেগভ রাজিও হয়েছেন। পেগভ জানিয়েছেন, পরবর্তী সোমবার কলকাতার সোভিয়েত কালচারাল সেন্টারের প্রধান ভি আই গুরগিয়ানভ এই আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। যদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতিনিধিকে ওই সময় সেখানে পাঠাতে পারেন।

অরুণা আসফ আলীর দেওয়া এই সংবাদ আমি দ্রুত তাজউদ্দীন আহমদকে জানাই। সংবাদটি পেয়ে তাজউদ্দীন যথাপ্রত্যাশিত আনন্দিত হলেন। তারপর আমাকে বললেন, ‘আমার পক্ষ থেকে আপনিই এ আলোচনা চালিয়ে যান। কিন্তু কেউই যেন এ ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে।’ আরও বললেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন ও সাহায্য আমাদের খুবই দরকার। কাজেই আমাদের সম্পর্কে তারা যা জানতে চায়, সবই বলবেন অকপটে। তারা তো আমাদের সম্পর্কে তেমন জানেই না। ওদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার কোনো চেষ্টা করা হয়নি অতীতে। গত এক মাসে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা আমরা করেছি। কিন্তু সেই চেষ্টায় তেমন কিছু হয়নি। অবশেষে উন্মুক্ত যখন হয়েছে, তখন আলোচনার এই পথকে খোলা রাখতে হবে।’ এর বাইরে দু-একটি কথা ছাড়া বিশেষ কিছু আর তাজউদ্দীন সেদিন আমাকে বলেননি।

মুক্তিবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ শিবির।
ছবি: আনন্দবাজার পত্রিকার (ভারত) সৌজন্যে

সোভিয়েত প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক

কলকাতায় সোভিয়েত প্রতিনিধি গুরগিয়ানভের সঙ্গে আমার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৫ জুন বিকেল চারটায়। ১ উড স্ট্রিটে সোভিয়েত কালচারাল সেন্টারে।

গুরগিয়ানভের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই আমার যোগ্যতার সীমাবদ্ধতার কথা জানাই। তাঁকে বলি, আমাদের দেশ ও মুক্তিসংগ্রামকে পরিচিত করানোর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী এক অসাধারণ দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর অনুমতি নিয়েই বলছি, আমি কোনো সরকারি কর্মকর্তা নই। এমনকি আওয়ামী লীগ দলের সদস্যও নই। তবে এক দশকের বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক দূরত্ব বৃদ্ধির প্রক্রিয়া আমি দেখেছি। এ বিষয়ে এক দশকের বড় একটা সময় ধরে একটি দৈনিক সংবাদপত্রে আমি লিখেছি। এটা অবগত থেকেই হয়তো তাজউদ্দীন আহমদ মনে করেছেন, যথাসম্ভব নির্দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি আমার পক্ষে তুলে ধরা সম্ভব। তিনি আমাকে বলেছেন, আমাদের সবকিছু অকপটে তুলে ধরতে এবং একমাত্র তার ভিত্তিতেই হয়তো আমরা কাছাকাছি একটা জায়গায় আসতে পারি।

গুরগিয়ানভ নির্বিকার আমার ভূমিকা শুনলেন। তারপর বলতে শুরু করলেন স্বাচ্ছন্দ্য ইংরেজিতে। রাশিয়ান উচ্চারণের কোনো প্রবণতা ছাড়াই। তাঁর বয়স তখন বোধকরি চল্লিশের কোঠায়।

সোভিয়েত প্রতিনিধির যুক্তি

২৬ মার্চ থেকে যে নির্মম হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানের সেনাবাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে, তা দিয়ে গুরগিয়ানভ শুরু করলেন। বিপুলসংখ্যক নিরপরাধ মানুষকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশত্যাগে বাধ্য করে চলেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তা অবিলম্বে বন্ধ করার এবং সমস্ত শরণার্থীর ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাসহ রাজনৈতিক মীমাংসায় পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি গুরুত্ব দেন। যার সব কথাই ছিল বিঘোষিত সোভিয়েত নীতির অনুবর্তী। প্রায় আড়াই মাস আগে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগনি৴ বিশ্বনেতাদের মধ্যে প্রথম ও প্রকাশ্যে নিন্দাবাক্য উচ্চারণ করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পাকিস্তানের আঞ্চলিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা যেমন দাবি করেছিলেন, অনেকটা সে রকমই।

আমি যুক্ত করলাম, তারপর আড়াই মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার ব্যাপকতা ও তীব্রতা একটুকুও কমেনি। ফলে শরণার্থীর স্রোত অবিরাম বাড়ছে। বাড়ছে দেশত্যাগী তরুণদের ক্রোধ। ক্রমেই নেতাদের ওপর তাদের চাপ বাড়ছে, তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার এবং গেরিলাযুদ্ধ শুরু করার জন্য।

এ সময় হঠাৎ শুদ্ধ বাংলায় গুরগিয়ানভ বলে ওঠেন, গেরিলাযুদ্ধের নেতৃত্ব দেবেন ওই উকিল বাবুরা, যাঁরা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়ার পর দুপুরে না-ঘুমিয়ে পারেন না!

গুরগিয়ানভের এই মন্তব্যে আমাকে একটু থমকে যেতে হলো। শুনেছিলাম তাদের সাবেক নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের সময় থেকেই দেশটির কূটনীতিকদের কেউ কেউ তাঁকে অনুসরণ করে মাঝে মাঝে চাঁছাছোলা কথা বলে থাকেন।

যাহোক, গুরগিয়ানভও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে দীর্ঘ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার বিপক্ষের যুক্তিগুলো অন্যভাবে দিলেন। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সশস্ত্র লড়াই করার মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ কোনো দল নয়। দলটির কর্মী, সংগঠন ও নেতৃত্ব গেরিলাযুদ্ধের উপযোগী নয়। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক সমর্থকদের কোনো সংগঠন নেই।

এখানেও এত শরণার্থী জড়ো হয়েছে এবং হয়ে চলেছে যে তা দীর্ঘদিন বহন করার মতো অর্থনৈতিক সক্ষমতা ভারতের নেই। এখানকার সরকারকে বহুশ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে চলতে হয়। যাদের অনেকেরই কোনো সমর্থন থাকার কথা নয় ভিনদেশি এক বিশাল সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনী সৃষ্টি করার ব্যাপারে।

সর্বোপরি যে পশ্চিমবঙ্গের ওপর নির্ভর করে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, সেই ভূখণ্ডেও নিজেদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দমনের চেষ্টা তাদের চলছে কয়েক বছর ধরে। এ রকম সংঘাতপূর্ণ বিদেশি ভূখণ্ডের ওপর নির্ভর করে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে অনেক দিন ধরে আপনাদের পক্ষে নিজেদের যোদ্ধাবাহিনী গড়ে তোলা এবং তারপর পাকিস্তানের পেশাদার সেনাদের পরাভূত করার ব্যবস্থা করা আদৌ সম্ভব কি না? অথবা কত দিনে সম্ভব, তা ভেবে দেখা আবশ্যক।

গুরগিয়ানভ আরও বললেন, মার্চ-এপ্রিলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্বিচার হত্যা ও নির্যাতন পূর্ববাংলার সব তরুণকে বিদ্রোহী করে তুলেছিল। তাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে এসেছে প্রতিশোধের সংকল্প নিয়ে। কিন্তু প্রতিকূল বাস্তবতা দৃষ্টে ক্রমে তারা নিরুদ্দীপ্ত হয়ে উঠছে। গত এক মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরাই বেশির ভাগ দেশ ছেড়ে আসছে। যাদের অনেকেরই আগ্রহ কোনোরকমে এ দেশে থেকে যাওয়ার, যা এই দেশকে আরেক ধরনের সামাজিক সংঘাত সৃষ্টির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

সবশেষে গুরগিয়ানভ বললেন, এই সমগ্র পরিস্থিতি বিবেচনা করে, পাকিস্তানের সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করে তাদের আপস-নিষ্পত্তিতে বাধ্য করা, তাদের হত্যা ও নিপীড়ন বন্ধ করা, সমস্ত শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনসমেত গোটা দেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্মত করা বরং কম দুরূহ।

আমার পাল্টা যুক্তি

আমি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম, সরাসরি কোনো বিতর্কে জড়াব না। সেই সিদ্ধান্ত মনে রেখে গুরগিয়ানভকে বললাম, যা ঘটেছে তার সবকিছুর পরেও নতুন উদ্যোগে পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের সঙ্গে আপস নিষ্পত্তির চিন্তা আমাদের নেতৃত্বের মধ্যেও যে নেই, এমন নয়। কিন্তু তাঁদের কেউই পরিষ্কার করতে পারেননি, কীভাবে তা সম্ভবপর হবে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের শাসকেরাও যে স্বায়ত্তশাসনের কিছু অংশ মেনে নিয়ে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মত হবে, এমন সামান্য নিদর্শনও কি তাদের আচরণে এ পর্যন্ত দেখতে পাওয়া গেছে? প্রেসিডেন্ট পদগর্নি অবিলম্বে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সংকট নিষ্পত্তির দাবি করেছিলেন। এরপর আড়াই মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু তার কোনো প্রভাব কি পাকিস্তানের আচরণে দেখা গেছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যদের অন্য কেউ কি পদগর্নির অনুরূপ কোনো দাবি জানিয়েছেন? কে এবং কোন শক্তিতে পাকিস্তানকে এই হত্যা অভিযান থেকে নিবৃত্ত করবে?

আরও যুক্তি তুলে ধরলাম, পাকিস্তান জানে অদ্যাবধি তারা যা করেছে তার ফলে কখনোই কোনো রাজনৈতিক মীমাংসায় পৌঁছানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই এক দিনের জন্যও তারা এই অভিযান বন্ধ করেনি। ফলে আক্রান্ত মানুষ প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসছে। তরুণেরা যারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের বিশেষ লক্ষ্য, তারাও দলে দলে সীমান্ত অতিক্রমে বাধ্য হচ্ছে। তারা এসেই অনেকে জিজ্ঞেস করছে, কোথায় তারা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প পাবে? তারা বিশ্বাস করে, কেবল সশস্ত্র লড়াই করেই এ অত্যাচারীদের হাত থেকে তারা দেশকে মুক্ত করতে পারবে। তারা যদি দেখতে পায় তাদের নেতৃত্বের অসামর্থ্যের দরুন তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রায়িত হওয়ার পথ রুদ্ধ, তাহলে তার প্রতিক্রিয়ায় তাদের পক্ষে বেঁচে থাকার জন্য এক ধ্বংসাত্মক অরাজকতার শক্তিতে পরিণত হওয়া অথবা নিগৃহীত নকশালবাদীদের নিষ্প্রভ আন্দোলনে সংযুক্ত হওয়া কি একেবারেই অসম্ভব? কার পক্ষে সেই নকশালীয় অরাজকতা অথবা বৈপ্লবিক সংমিশ্রণের ভয়াবহ প্রক্রিয়াকে রোধ করা সম্ভব?

এরপর গুরগিয়ানভের নিরুত্তর মুখের দিকে তাকিয়ে অযাচিতভাবেই জানালাম, সত্যিই আওয়ামী লীগ কোনো বিপ্লবী দল নয়। এর কোনো বিপ্লবী নেতৃত্ব নেই। কিন্তু সীমিত সংখ্যায় হলেও গেরিলা ও কমান্ডো বাহিনী গড়ে তোলার মতো কিছু অভিজ্ঞ যোদ্ধা, সংগঠক ও উদ্যমী শক্তি এখানে রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে একত্রে সক্রিয় করার কথাবার্তাও সম্প্রতি সচল হয়েছে। এই মিলিত চিন্তার ধারা সচল রয়েছে একটি প্রতিপাদ্যকে ভিত্তি করে। সেটি হলো; পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা, ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতা। ২৩ বছর ধরে জনসংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলকে উপনিবেশিকভাবে শোষণের পর যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার রায় অকার্যকর করার জন্য লাখ লাখ মানুষের প্রাণ সংহার করা হয়েছে। এর মধ৵ দিয়ে সেই রাষ্ট্রসত্তা শেষ হয়েছে। একে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখার নৈতিক শক্তি ও রাজনৈতিক যুক্তি যেমন বাংলাদেশের কোনো নেতারই নেই, তেমনি ছয় দফা অথবা কার্যকর স্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নিয়ে পাকিস্তানের কোনো শাসকের পক্ষেও ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।

আমার আরেকটি অনুমানের কথা বললাম। তা হলো ভারতে আশ্রয় নেওয়া ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পাকিস্তানের ওপর কোনো কার্যকর চাপ সৃষ্টিতে অপারগ হয়, তবে ভারত সরকারকে একসময় নিজের সামরিক শক্তি ব্যবহার করেই এই সংকটের অবসান করতে সচেষ্ট হতে হবে।

সে অবস্থায় মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার বিষয়টি অন্যভাবে প্রভাবিত হবে। আপাতত সে বিষয়ে জল্পনা–কল্পনার বোধ হয় কোনো প্রয়োজন নেই।

এমনিভাবে একজন অপরজনের অভিমতের কাছাকাছি আসার দৃশ্যত কোনো চেষ্টা না করেই প্রথম দিনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়। আলোচনা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দরজার মুখে অপ্রত্যাশিতভাবে গুরগিয়ানভ প্রশ্ন করলেন, পরের সপ্তাহে একই দিন, একই সময়ে এই জায়গাতেই পুনরায় কি আমরা আলোচনায় বসতে পারি?

আমি সম্মতি জানিয়ে ফিরে আসি। (চলবে)