সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের পর ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া

দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম জামিন পেয়েছেন। আজ রোববার সকালে তাঁর জামিনের আদেশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানান সর্বস্তরের সাংবাদিকেরা। সেই সঙ্গে নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরাও তাঁর জামিন নিয়ে মন্তব্য করেন।

খবর পেয়েই অসংখ্য সাংবাদিক পোস্ট দেন, রোজিনা ইসলাম জামিন পেয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল লেখেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম জামিন পেয়েছেন। রোজিনার আইনজীবী ও তাঁর পক্ষে সোচ্চার সব মহলকে আন্তরিক অভিনন্দন। জামিন পাওয়া তাঁর প্রাপ্য অধিকার ছিল। এখন আমরা চাই ন্যায়বিচার, রোজিনাকে অপদস্তকারী ও তাঁর ওপর হামলাকারীদের বিচার। চাই কারা অন্তরীণ সব সম্পাদক ও সাংবাদিকের অবিলম্বে জামিনে মুক্তি।’

জামিনের আদেশের পর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল লেখেন, বিএফইউজের সন্তোষ প্রকাশ।

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘রোজিনা জামিন পেলেন।পরে আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘রোজিনা জেল থেকে বের হওয়ার পর টানা ছয় মাস কারাতে ট্রেনিং করাবো, তারপর আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যেতে বলব রিপোর্ট করতে। তখন আর খামচি দিতে হবে না। ওটা কুংফু। চায়নিজ। কারাতে হল জাপানী, টেকসই।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় নেতা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহিন হোসেন বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত প্রকাশিত দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার তথ্য উন্মুক্ত করো, শ্বেতপত্র প্রকাশ করো।’

সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর লেখেন, ‘রোজিনার জামিন হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছি। তাঁর মিষ্টি মেয়েটা যে, মা সাংবাদিকতার কাজে ঢাকার বাইরে গেছে ভেবে অপেক্ষায় ছিল, তার অপেক্ষার অবসান ঘটেছে, স্বস্তিটা সে কারণে। আরও একটা কারণ আছে স্বস্তির। রোজিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো একসঙ্গে বসে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছে, সে জন্যও। ’

সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কেন যেন মনে হচ্ছে সাংবাদিকতার গোড়ার আইনি সংকট দূর করতে অনেক বছর পর একটা কাজের পরিবেশ-দল তৈরি হয়েছে! সত্যি যদি সেটা হয়ে থাকে, তা হলে তো স্বস্তি খানিকটা হতেই পারে। বাংলাদেশে ভীতিকর সাংবাদিকতার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। কিন্তু তা নিয়ে কাজ শুরু না হলে পরিস্থিতি বদলাবে কীভাবে? আর ভীতিহীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা না গেলে দেশটা এগোবে কীভাবে?’

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা লেখেন, ‘স্বস্তি...রোজিনার জামিন হয়েছে। সংবিধান বাকস্বাধীনতাকে সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দিয়েছে। সংবাদের স্বাধীনতা সাংবিধানিক অধিকার। দেশের নিরাপত্তা বা অন্য কোনো কিছুর অজুহাতে সেই স্বাধীনতা খর্ব করার, তাকে নিয়ন্ত্রণ করার যেকোনো চেষ্টা যেমন ভ্রান্ত, তেমনি বিপজ্জনক। যদি রাষ্ট্রীয় ক্ল্যাসিফাইড কিছু থাকে, সেটা এনক্রিপ্টেড থাকবে।’

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক শরিফুল হাসান তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘জামিন পেয়েছেন সাংবাদিক রোজিনা আপা। স্বস্তি প্রকাশ করছি। তবে লড়াইটা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অবশ্য একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে। সাম্প্রতিক সময়ে আর কোনো ঘটনায় এতটা ঐক্য আমার চোখে পড়েনি।... একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আসলে প্রয়োজন সর্বত্র সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। যত দিন সেটা না হচ্ছে, তত দিন সাংবাদিকতা খুব প্রয়োজন। আর সুশাসন আসার পরও দরকার সাংবাদিকতা, যাতে সেই সুশাসন টিকে থাকে।’

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক মো. মাকসুদ-উন-নবী লেখেন, ‘শুধু জামিনে সন্তুষ্ট হলেই চলবে না। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নির্যাতনের বিচার চাইতে হবে। পাসপোর্ট দিতে বলছে, তার মানে দীর্ঘদিন হয়রানি করাবে।’