সাইদুর রহমানকে সফল করেছে তাঁর মানবতাবোধ

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বাংলাদেশ আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের (আপসো) উদ্যোগে আজ শনিবার শোকসভায় সাইদুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বাংলাদেশ আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের (আপসো) উদ্যোগে আজ শনিবার শোকসভায় সাইদুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলো

আমাদের ‘খসরু ভাই’ ছিলেন সবার আপনজন। স্বল্পভাষী এই মানুষটি যেমন চিকিৎসক হিসেবে সফল ছিলেন, তেমনি তাঁর মধ্যে ছিল বিচার বুদ্ধির গভীরতা। ‘খসরু ভাই’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন, কিন্তু সব ক্ষেত্রে তাঁকে পরিচালনা করেছে তাঁর মানবতাবোধ। তিনি ছিলেন প্রগতি ও মানবতাবোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর মানবতাবোধই রাজনীতিতে, সামাজিকতায়, পেশায়, সংস্কৃতিতে ও আন্দোলনে তাঁকে পরিচালনা করেছে। কথা ও কাজের মিল থাকায় তাঁকে আজীবনই অন্যদের চেয়ে আলাদা মনে হয়েছে। 

এই ‘খসরু ভাই’ আর কেউ নন তিনি হচ্ছেন বারডেম হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক প্রধান চিকিৎসক ও বাংলাদেশ আফ্রো-এশীয় পরিষদের (আপসো) সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত ডা. এ এইচ সাইদুর রহমান। সাইদুর রহমানকে সিপিবি, আপসোসহ অন্য সংগঠনের আপনজনেরা ‘খসরু ভাই’ বলেই ডাকতেন।
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বাংলাদেশ আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের (আপসো) উদ্যোগে প্রয়াত সাইদুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অধ্যাপক শিশির মজুমদার, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, নারীনেত্রী ফওজিয়া মোসলেম ও অজয় রায়। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী। শোকসভার শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রত্না সরকার।
সংগঠনের সভাপতি আনিসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন সাইদুর রহমানের অগ্রজ সামছুর রহমানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। তাঁর মাধ্যমেই সাইদুর রহমানের সঙ্গে পরিচয়। ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। তিনিই আমাকে আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদে আনেন। সাইদুর রহমান ছিলেন রাজনৈতিক চিন্তার প্রতি অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তাঁকে প্রথম থেকেই ব্যক্তি হিসেবে, চিকিৎসক হিসেবে মানবতার প্রতীক বলা হয়। তিনি কথা কম বলতেন, তবে তাঁর চিন্তার স্রোতটা সব সময় মনের মধ্যে বয়ে যেত। অনেকখানি অভিমানী ছিলেন সাইদুর রহমান। আঘাত পেলে সহজে ভুলতে পারতেন না। পেশাগত চাপ ও শরীর খারাপ হয়ে আসায় তিনি আর সংগঠনে থাকতে চাননি। কিন্তু এই সংগঠনের সকলকে জড়ো করেছিলেন তিনিই। এই যে সবাইকে নিয়ে চলতে পারতেন, এটাই ছিল তাঁর বড় গুণ। তাঁর অবদান জাতি কখনো ভুলবে না।’
সভায় প্রয়াতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তারা বলেন, সাইদুর রহমানকে দেখার আগেই তাঁর সম্পর্কে সবাই জানতেন। তাঁর সুকুমারবৃত্তির কথাও সবারই জানা ছিল।
বক্তারা বলেন, প্রয়াত সাইদুর রহমানের মৃত্যুতে দেশ একজন প্রগতিশীল ব্যক্তি ও মানবতাবাদী চিকিৎসককে হারিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও এ দেশের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সংগ্রামে সাইদুর রহমানের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।