সাকা চৌধুরীর 'সনদ' জাল

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার প্রমাণ হিসেবে সাকা চৌধুরী যে ‘সনদ’ জমা দিয়েছেন, তা একটি জাল নথি। আদালতকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ নথি দাখিল করা হয়।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত বুধবার সাকা চৌধুরীর পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই আবেদনের ওপর ১৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় লিখেছেন প্রধান বিচারপতি, এর সঙ্গে বেঞ্চের অন্য তিন বিচারপতি একমত পোষণ করেছেন।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, ওই ‘সনদ’ ২০১২ সালের ২২ মে দেওয়া। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার ২০১৫ সালের ৪ ও ৫ নভেম্বর তা সত্যায়িত করেছেন। আদালত বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন, কেন আবেদনকারী (সাকা চৌধুরী) ওই ‘সনদ’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা আপিল বিভাগে মামলা চলাকালে জমা দিলেন না। অথচ মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানে থাকার কথা প্রমাণ করতে যেসব নথি তিনি জমা দিয়েছেন, সেগুলো জোগাড় করা হয়েছে ২০১৩ সালে। ওই সব নথি জমা দেওয়া গেলে এ ‘সনদ’ও আগেই জমা দেওয়া যেত। যখন এ বিষয়ে তাঁর আইনজীবীকে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি এর সদুত্তর দিতে পারেননি।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আরও বলেন, ওই ‘সনদ’ ও অন্যান্য নথি থেকে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মে মাসে আসামি সাকা চৌধুরী পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, আর ওই বছরের আগস্ট মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এ গল্প বিশ্বাস করা কখনোই সম্ভব নয়। এ নথির ওপর কোনোভাবেই নির্ভর করা যায় না।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আরও বলা হয়, রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনে আবেদনকারী ১৬টি বিষয় তুলে ধরলেও শুনানির সময় তাঁর আইনজীবী একটি বিষয়েও যুক্তি উপস্থাপন করেননি। তাঁর আইনজীবী মামলার মূল উপাদানের ওপরও যুক্তি দেননি।
সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে আদালত কোনো ভুল করেননি: জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, মুজাহিদকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে আদালত কোনো ভুল করেননি। মুক্তিযুদ্ধকালে গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর নেতা হিসেবে ওই বাহিনীর করা অপরাধের দায় তিনি কিছুতেই এড়াতে পারেন না।
২৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এই রায়ে বলা হয়েছে, আপিলের রায়ে মুজাহিদকে তিনটি অভিযোগে কারাদণ্ড ও একটি অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়। আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদনে ৩২টি বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে, যদিও মুজাহিদের আইনজীবী শুধু ফাঁসির সাজার ওপর যুক্তি দিয়েছেন। যার অর্থ, অন্য তিন অভিযোগে কারাদণ্ডের সাজা মুজাহিদ মেনে নিয়েছেন।
রায়ে আদালত বলেন, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে ১৯৭১ সালের আগে মুজাহিদ প্রথমে জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের ফরিদপুর শাখার সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি যে ছাত্র সংঘকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই ছাত্র সংঘ পরে আলবদর বাহিনীতে পরিণত হয়। তখন তিনি আলবদর বাহিনীর নেতা হয়ে যান। আপিল বিভাগের রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদরের কর্মকাণ্ড ও অপরাধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আদালত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে আলবদরের নেতা হিসেবে অধীনস্থ বাহিনীর অপরাধের দায়ভার মুজাহিদকে নিতে হবে। নেতা হিসেবে এ দায় তিনি কিছুতেই এড়াতে পারেন না।
মুজাহিদের ফাঁসি পুনর্বিবেচনার আবেদনের রায় লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ বেঞ্চের অপর তিন সদস্য ওই রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।