সাত গুণী শিল্পী পেলেন শিল্পকলা পদক

পদক পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাত গুণী শিল্পী। সঙ্গে আছেন অন্য অতিথিরা। জাতীয় নাট্যশালা, শিল্পকলা একাডেমি, ২৮ মে। ছবি: ফোকাস বাংলা
পদক পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাত গুণী শিল্পী। সঙ্গে আছেন অন্য অতিথিরা। জাতীয় নাট্যশালা, শিল্পকলা একাডেমি, ২৮ মে। ছবি: ফোকাস বাংলা

সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্বিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত গুণী শিল্পীকে শিল্পকলা পদক দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের হাতে পদক, সনদ ও এক লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিজস্ব সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হওয়ার মাধ্যমে আমাদের টেলিযোগাযোগ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সম্প্রচার কার্যক্রমসহ মহাকাশ গবেষণার বিশাল ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে। এই সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পকলা পদক প্রদান অনুষ্ঠান। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী।

শিল্পকলা পদক ২০১৭ প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন কণ্ঠসংগীতে মিহির লালা, যন্ত্রসংগীতে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মিয়া, নাট্যকলায় এস এম মহসীন, লোকসংস্কৃতিতে কাঙালিনী সুফিয়া, চারুকলায় চন্দ্র শেখর দে, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন এবং নৃত্যকলায় শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। পদকপ্রাপ্ত গুণীজনদের পক্ষে অনুভূতি জানিয়ে বক্তব্য দেন মিহির লালা।

বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সংস্কৃতির ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মুক্তিসংগ্রামসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ দেশের শিল্পী সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। জাতির যেকোনো প্রয়োজনে বা সংকটময় মুহূর্তে সংস্কৃতিকর্মীরা সব সময় সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একটি জাতির তরুণ ও যুবসমাজের মধ্যে শৃঙ্খলা, জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেমের চেতনা বিকাশসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য জাগিয়ে তুলতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শিশু, কিশোর ও যুবদের ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প থেকে দূরে রাখতে তাদের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের জানাতে হবে, আমাদের এই মাতৃভূমিতে জঙ্গিবাদ বা সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। হাজার বছর ধরে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ এই ভূখণ্ডে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সুমহান ঐতিহ্য।’ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক, সংস্কৃতিমনা ও সৃজনশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির পথে। জাতির পিতা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা অর্জনে আমরা অনেকটা দূর এগিয়ে এসেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। দারিদ্র্যের হার কমছে। উন্নয়নের সূচকে আমরা মধ্য আয়ের দেশে ধাবিত হচ্ছি। বাংলাদেশ আজ মহাকাশে প্রতিনিধিত্ব করছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।’

পদকপ্রাপ্ত গুণী ব্যক্তিদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজ শিল্পকলা পদকে ভূষিত হলেন। এটি অত্যন্ত সম্মানের, গৌরবের। এ গৌরব আপনার নিজের, পরিবারের ও সমাজের। আমি আশা করি, এই পুরস্কার আপনাদের নিজ নিজ অঙ্গনে আরও অবদান রাখতে উৎসাহিত করবে। আপনাদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণ শিল্পীরাও উৎসাহিত হবেন। আমি মনে করি, এ পুরস্কার আপনাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।’

অনুষ্ঠানের শেষে শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দল অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শন করে।