সাত দিনেই ধূসর স্বপ্ন

মাত্র সাত দিন আগে বাড়িজুড়ে ছিল উৎসব আমেজ। বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ে। তাই আনন্দের সীমা ছিল না আত্মীয়স্বজনসহ পরিবারটিতে। চারদিকে খুশির আমেজ। বিশাল আয়োজন। সরগরম গোটা পাড়া। দেবরের বরযাত্রায় সঙ্গী ছিলেন ভাবিরাও। 
অবশেষে নববধূ এল বাড়িতে। বউভাতও হয়ে গেল ধুমধামে। ১ হাজার ২০০ অতিথির খানাপিনার পর্বও শেষ হলো। নববধূকে নিয়ে সাত দিন ধরে মাতোয়ারা বাড়ির সবাই। খুশির জোয়ারে ভাসলেন বাড়ির আদরের ছেলেটিও। কিন্তু সেই খুশিতে ছন্দপতন ঘটল। সাত দিনের ছুটি শেষে চাকরিতে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সকালে নববধূর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেন সদ্য বিবাহিত বাড়ির আদরের ছেলেটি। নববধূর কাছ থেকে নেওয়া সেই বিদায় রূপ নিল চিরবিদায়ে। সকালে হাসিভরা মুখে বের হওয়া আদরের ছেলেটি বিকেলে বাড়িতে ফিরলেন খাটিয়ায় চড়ে চির নিদ্রায় শায়িত হয়ে।
সাত দিন ধরে যে বাড়িতে বিরাজ করছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস, সেই বাড়িতে নেমে আসে মাতম। ছেলের অকাল মৃত্যুতে শোকে বাকরুদ্ধ বাবা-মা। বাড়ির আদরের ছোট দেবরকে হারিয়ে দুই ভাবি করছেন আহাজারি। আর সাত দিনের মাথায় নববধূর রঙিন স্বপ্ন হয়ে গেছে ধূসর-বিবর্ণ।
বগুড়ায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) উপসহকারী প্রকৌশলী মুশফিকুর আনোয়ারের ভুলে ফুলবাড়ি এলাকায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন মেরামতের সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারান শহীদুল ইসলাম। শহরের মগলিশপুরের বাড়িতে গিয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে দেখা গেছে, শোকে স্তব্ধ গোটা পরিবার। সন্তানহারা বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ বাকরুদ্ধ। দুই ভাবি আসিয়া সুলতানা ও হোসনে আরা দেবরের বিয়ের ছবি দেখছেন আর আহাজারি করছেন। বিধবা হয়ে নববধূ দুলালী আখতার বড় দুই ভাবিকে জড়িয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন।
পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলের গণ্ডি এখনো পেরোনো হয়নি দুলালী আখতারের। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই পরিবারের সম্মতিতে গত শুক্রবার (৩ এপ্রিল) শহীদুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় দুলালীর। বগুড়া সদরের দড়িপাড়া গ্রামের আবদুস সাত্তারের মেয়ে দুলালী ওই দিনই প্রথম বধূবেশে আসেন মগলিশপুরে শ্বশুরবাড়িতে।
বড় ভাবি আসিয়া বেগম বলেন, তিন ভাইয়ের মধ্যে শহীদুল সবার ছোট, বাড়ির খুব আদরের ছেলে ছিল। সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকত। দুই ভাবির কাছেও ছিল সন্তানের মতো। গত বছর পিডিবিতে লাইন সাহায্যকারীর পদে চাকরিতে যোগদান করেন শহীদুল। ৩ এপ্রিল ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন শনিবার ছিল বউভাত। নতুন বউ পেয়ে আহা কী আনন্দ! কয়েক দিন হইহুল্লোড়ে কাটিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যোগ দিতে যান।
মেজো ভাবি হোসনে আরা বলেন, ‘চেংড়াডা সকালে কাজত গেল হাসিমুখে, বিকাল হতে না হতেই বাড়িত আসলো চির ঘুমিয়ে। ওর হাসিমাখা একনা মুখ সদাই ভাসে উঠিচ্চে। ওকে হামরায় ক্যামনে ভুলে থাকমো? সাত দিনও হয়নি বিয়্যা করে লিয়ে আচ্চে। ওর বউয়ের হাত থ্যাকে মেন্দি এখনো মুছে যায়নি। এই মাইয়্যাটাক একন ক্যাংকা করে সান্ত্বনা দেমো?’