রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন হত্যাকাণ্ডের সাত বছরেও বিচার শেষ হয়নি। সাক্ষীরা সময়মতো আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। ফারুক হত্যাকাণ্ডের সপ্তম বার্ষিকীতে দ্রুত বিচারকাজ শেষ করে আসামিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁর পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
দ্রুত বিচার শেষ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর আদালতের পিপি আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটি এখনো বিচারাধীন। মামলার সাক্ষীরা সময়মতো আদালতে না আসায় বিচারকার্য শেষ হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, হল দখল নিয়ে ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রশিবির ক্যাডাররা। এতে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক নিহত হন। পরে তাঁর মরদেহ ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম বাদী হয়ে নগরের মতিহার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় শিবিরের ৩৫ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অসংখ্য অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর ২০১২ সালের ২৮ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এতে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন কেন্দ্রীয় আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, রাজশাহী মহানগর আমির আতাউর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ, সেক্রেটারি মোবারক হোসেন, নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসমত আলী, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সভাপতি রাইজুল ইসলাম, শিবির কর্মী রুহুল আমিন ও বাপ্পীসহ ১১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। আসামিদের মধ্যে জামায়াত নেতা মুজাহিদ ও নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন সাঈদী। তবে অভিযুক্ত শিবির নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই জামিনে রয়েছেন।
৮ ফেব্রুয়ারি ফারুকের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ক্যাম্পাসে শোক র্যা লি ও সমাবেশে করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্ট থেকে শোক র্যা লি বের হয়ে ফারুকের স্মৃতিবিজড়িত শাহ্ মখদুম হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তাঁর অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও ফারুকের বোন আসমা খাতুন।
সমাবেশে বক্তারা ফারুক হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। এ ছাড়া আসামিদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সনদ বাতিল এবং ফারুক স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানান।
দরিদ্র পরিবারের ছেলে ফারুকের মৃত্যুতে অন্ধকার নেমে আসে তাঁর পরিবারে। ফারুকের বড় বোন আসমা বেগমকে ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে নিম্নমান সহকারী পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আসমা বেগম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে অনেকবার। কিন্তু তা এখনো কার্যকর হয়নি। আর ভাই হত্যার বিচারও শেষ হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবা অনেক অসুস্থ। আমার স্বামীও মারা গেছে। ফলে মামলার বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে পারি না। ভাইয়ের হত্যাকারীদের যেন শাস্তি হয় এটাই চাওয়া।’