সাভার ট্র্যাজেডি এবং শিশু তানভীর

ফুটফুটে চার বছরের শিশু আবদুল্লাহ তানভীর। মানসিক রোগী মা নিরুদ্দেশ। তাই মায়ের আদর জোটেনি তার। বাবার আদরে যা-ও বা দিন কাটছিল, তা-ও যেন বিধাতার সইল না। সাভারের রানা প্লাজা ধসে মারা গেছেন তিনি। খেলার ফাঁকে ফাঁকে চেনাজানা কাউকে পেলেই জিজ্ঞাসা করে, ‘আমার বাবা মইরা গ্যাচে? আসে না ক্যা?’

পিতৃ-মাতৃহীন এই শিশুর এখন অভিভাবক সাভার মহিলা পরিষদের আড়াপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক তমা খন্দকার। নিজের দুটি সন্তানের সঙ্গে মাতৃস্নেহে তিনি লালন করছেন তানভীরকেও।

তমা খন্দকার জানান, তানভীরের মায়ের নাম মনিমালা। তিনি ফরিদপুর জেলার সালতা থানার মাদ্রাসাপট্টি গ্রামের সাত্তার মোল্লার মেয়ে। তানভীরের বাবার নাম কাবিলা। তবে তাঁর ঠিকানা জানা নেই। অভাবের তাড়নায় ২০০৪ সালে এলাকার মেয়ে মনিমালা সাভারে এসে তাঁর (তমা) কাছে আশ্রয় নেন। ২০০৫ সালে নিজেই পছন্দ করে কাবিলাকে বিয়ে করেন মনিমালা। বিয়ের পর রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন কাবিলা। থাকতেন সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়া মহল্লায়। 

মহিলা পরিষদের এই কর্মকর্তা জানান, তানভীরের জন্মের পর থেকে মনিমালার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। স্বামী-সন্তানকে ফেলে প্রায়ই নিখোঁজ হয়ে যেতেন তিনি। বাবাই তানভীরকে লালন-পালন করতেন। রানা প্লাজা ধসে মারা যান তিনি। দুর্ঘটনার পর তাঁর মৃতদেহের কোনো দাবিদারও ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে মনিমালাও নিরুদ্দেশ। মনিমালার বোন মনোয়ারা সাভারে এসে কিছুদিন তানভীরের দেখভাল করেন। কিন্তু হতদরিদ্র মনোয়ারাও জীবিকার তাগিদে চলে গেছেন। কিন্তু অসহায় শিশুটিকে রাস্তায় ফেলে দিতে পারেননি তিনি।

তানভীর আর তমা খন্দকারের সঙ্গে কথা হয় মহিলা পরিষদের সাভার কার্যালয়ে। বাবা কোথায় জানতে চাইলে তানভীর অস্পষ্টভাবে বলে, ‘আমার বাবা মইরা গেচে।’ আবার বলে, ‘তুমি আমার বাবারে দেকচো? আসে না ক্যা?’ মায়ের কথা জানতে চাইলে কাচুমাচু হয়ে বলে, ‘মা পাগল অইয়া গ্যাচেগা। খালি মারে।’

তমা খন্দকার বলেন, ‘তিন মাস আগেও আমি এক ছেলে আর এক মেয়ের মা ছিলাম। এখন আমার তিন ছেলেমেয়ে। ঈদে তিন সন্তানকেই নতুন জামাকাপড় দিয়েছি।’