সামিয়া রহমানের করা মামলা সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাস্তি দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমান
ফাইল ছবি

ভুয়া ই-মেইলে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য দেওয়ার অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ২০ মের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী শামীম আল মামুন। এর আগে গতকাল বুধবার সামির রহমান বাদী হয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালে এই মামলা করেন।

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে সম্প্রতি সামিয়া রহমানকে শাস্তি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। সহযোগী অধ্যাপক থেকে পদাবনতি ঘটিয়ে তাঁকে সহকারী অধ্যাপক করা হয়। তবে সামিয়া চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

সামিয়া রহমান আদালতে অভিযোগ করেন, শিকাগো জার্নালের যে ই-মেইলের ভিত্তিতে তাঁকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তা ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর’। বাস্তবে শিকাগো জার্নালের পক্ষ থেকে অফিশিয়ালি তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর কোনো ই-মেইল পাঠানো হয়নি। অ্যালেক্স মার্টিন নামের কোনো ব্যক্তি শিকাগো জার্নালে কাজ করেন না। শিকাগো জার্নালের সম্পাদক ক্রেগ ওয়াকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন সামিয়া। তিনি বলেছেন, ‘ক্রেগ ওয়াকার জানিয়েছেন, অ্যালেক্স মার্টিন বলে কেউ কখনো শিকাগো জার্নালে ছিলেন না। কাজও করেননি। অ্যালেক্স মার্টিন একটি ভুয়া নাম।’

সামিয়া রহমান দাবি করেন, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ভুয়া ই-মেইল আইডি তৈরি করে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য দিয়ে মেইলটি করেছিলেন। আর যে ই-মেইলের ওপর ভিত্তি করে তাঁকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, সেই ই-মেইলের কোনো সফট কপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে পাঠায়নি।

২০১৬ সালে সামিয়া রহমান এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: আ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শীর্ষক আট পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিজস্ব জার্নাল সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউয়ে প্রকাশিত হয়। তখন অভিযোগ ওঠে, ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে পাঁচ পৃষ্ঠার মতো হুবহু নকল করেছেন তাঁরা।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানায় ওই গ্রন্থের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। নিবন্ধটিতে ফুকো ছাড়াও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিন্তক এডওয়ার্ড সাঈদের‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতা হুবহু কপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগটি তদন্তে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সিন্ডিকেট। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সামিয়া-মারজানের চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটির সত্যতা মিলেছে। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজানের পদাবনতি করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

পরে সামিয়া রহমান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, তাঁকে ষড়যন্ত্র করে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাননি।

সংবাদ সম্মেলনেও সামিয়া দাবি করেছিলেন, শিকাগো জার্নালের অ্যালেক্স মার্টিন নামে যে ব্যক্তির চিঠির (ই-মেইল) কথা বলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে, পদাবনতি করা হয়েছে, সেই চিঠিটি আদতে ভুয়া।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন