সাড়ে আট লাখ বর্গফুট ভূমিতে এবারের মেলা

বইমেলায় চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নির্মাণের পাশাপাশি বই আনাও শুরু হয়েছে মেলায়। গতকাল বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।  ছবি: সাইফুল ইসলাম
বইমেলায় চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নির্মাণের পাশাপাশি বই আনাও শুরু হয়েছে মেলায়। গতকাল বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

মঙ্গলবার মাঘের চৌদ্দতম দিনে সকালে কুয়াশা কম থাকলেও ঠান্ডা ছিল কাঁপুনি দেওয়ার মতো। দুপুরের হালকা রোদে তুমুল কাজ চলছে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এখানে চার দিন পর অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন। 

বিগত বছরের ব্যতিক্রম ঘটবে এবার, মেলা ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে না। ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মেলা শুরু হবে। তবে গতকাল কর্মযজ্ঞ দেখে মনে হলো, এক দিন পেছানোর বিষয়টি প্রকাশকদের মাথায় নেই। সেখানে কর্মরত শহরের বেশ কয়েকটি বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্মী জানালেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি যেহেতু নির্বাচন, তাই সেদিন কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই যথাসম্ভব কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছেন। 

গতকাল মেলার প্রস্তুতি দেখতে শাহবাগ মোড় ফেলে এগিয়ে যাই। এবার বেশ খানিকটা আগে থেকেই প্রস্তুতি নজরে এল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর থেকে দোয়েল চত্বরমুখী সড়কজুড়ে শুধুই লোহা আর হাতুড়ি পেটার ঠুকঠুক শব্দ। টিএসসি চত্বরের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে চোখে পড়ে বাঁশ, কাঠ আর বাহারি রঙের কৌটা। অবয়ব দাঁড়িয়ে গেছে। কাঠ আর প্লাইউড দিয়ে চলছে ভেতর–বাইরের সাজানোর কাজ। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে এ কর্মযজ্ঞ। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও শ্রমিকেরা করছেন স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ। আয়োজক বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে চলছে সাজসজ্জার কাজ। 

মেলার অবকাঠামো এবং আয়োজনের প্রস্তুতি দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট—এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা হবে বঙ্গবন্ধুময়। সরকার–ঘোষিত মুজিব বর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এর আগে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বঙ্গবন্ধুময় থাকবে। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এবারের মেলাকে আমরা অন্যবারের তুলনায় কিছুটা ভিন্নভাবে করার চিন্তা করছি। ২০২০ সাল থেকেই মুজিব বর্ষের কর্মসূচি শুরু হবে। সে জন্য এবারের মেলা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হয়েছে। মেলার সজ্জা, আলোচনাসহ সর্বত্রই থাকবেন বঙ্গবন্ধু। সজ্জায় এবার আসছে ভিন্নতা। বইমেলাকে বঙ্গবন্ধুময় করে তুলতে সাজসজ্জায় বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত উক্তি, আলোকচিত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেল অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের প্যাভিলিয়ন এবং স্টলে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি রাখছেন। এবার ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বেড়েছে, মোট ৫৫৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। ইউনিট হবে ৯০০টি। প্যাভিলিয়ন থাকবে ৩৪টি। 

এবারের মেলা আরও বিস্তৃত পরিসরে আয়োজন করা হচ্ছে। সাড়ে আট লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে এবারের মেলা। মেলার বিন্যাসের নকশা করছেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে। মেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হবে বটে, তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে মূল মেলা। এ প্রসঙ্গে এনামুল করিমের একটি মন্তব্যে মেলার বিন্যাসের পরিষ্কার ধারণা মেলে। তাঁর ভাষায়, ‘উদ্যান দখল করে মেলা নয় বরং উদ্যানে হাঁটতে হাঁটতে মেলা।’ এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যেন নানা পাশ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে মেলার সঙ্গে মিশে যেতে পারেন পাঠক। 

 চার ভাগে সাজাবে মেলা। শিকড়, সংগ্রাম, মুক্তি এবং অর্জন। থাকবে মুজিব পাঠাগার, যেখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত নানা বইয়ের সম্ভারের পাশাপাশি বই নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আয়োজন হবে। থাকবে প্রদর্শনীও। হাতেখড়ি চত্বরে থাকবে ছোটদের জন্য বিশেষ আয়োজন। কোনো অভিভাবক চাইলে এখানে এসে প্রতিষ্ঠিত মানুষের দিয়ে হাতেখড়ি দেওয়াতে পারেন তাঁদের শিশুদের।