সিডিএর প্রস্তাবে সিটি করপোরেশনের না

আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক। ফাইল ছবি
আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক থেকে টোল আদায়ের প্রস্তাবে রাজি না সিটি করপোরেশন। করপোরেশনের দাবি, এতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উড়ালসড়কটি তাদের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে করপোরেশন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির জবাবে গত সোমবার এসব প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। টোল আদায়ের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মতামত জানতে চেয়ে ৩ এপ্রিল এই চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত ৫ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘আখতারুজ্জামান উড়ালসড়ক টোলের আওতায় আসছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উড়ালসড়কে টোল আদায়ের পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ৯ জানুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আলম সিডিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, উড়ালসড়কে টোল আদায়ের পদক্ষেপ জনবান্ধব নয়। টোল আদায় করা হলে যানজট আবারও বেড়ে যাবে এবং জনভোগান্তি বাড়বে।

চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণ করে সিডিএ। নগরের সবচেয়ে বড় এই উড়ালসড়কটিতে তিনটি র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ) ও একটি লুপ (উড়ালসড়ক থেকে বাঁক নিয়ে অন্য রাস্তায় সংযুক্ত করা) রয়েছে। ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৭৫ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। গত বছরের নভেম্বরে র‍্যাম্প ও লুপের নির্মাণকাজ শেষে উড়ালসড়ক পুরোপুরি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ।

উড়ালসড়ক সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ তদারকির ব্যয় মেটানোর জন্য টোল আদায়ের পরিকল্পনা নেয় সিডিএ। এ প্রস্তাব দিয়ে গত মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় সিডিএ।

সিডিএ সূত্র জানায়, উড়ালসড়কের ওপর আলোকায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের ১ হাজার ৩৬২টি বৈদ্যুতিক বাতি এবং সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ২ হাজার ১০০টি রঙিন বাতি রয়েছে। উড়ালসড়কের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। উড়ালসড়কের রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পরিচর্যা করার জন্য মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়। ভারী যান চলাচল রোধ করা প্রয়োজন আছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে। তাই উড়ালসড়কের সুষ্ঠু ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টোল আদায় করা প্রয়োজন।

সিডিএর প্রস্তাবের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মতামত চেয়ে ৩ এপ্রিল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়, উড়ালসড়কের রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন। তাই টোল আদায়ের বিষয়ে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে মতামত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

তবে টোল আদায়ের প্রস্তাবে সমর্থনযোগ্য নয় উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কে টোল আদায়ের বিষয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং মানুষের কাছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা সবাই টোল আদায়ের বিরোধিতা করছেন। আর এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) টোল আদায়ের ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। তাই সিটি করপোরেশনও মনে করছে, টোল আদায় সমীচীন হবে না।

যোগাযোগ করা হলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা প্রথম আলোকে বলেন, উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ শেষ হলেও তা এখনো করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়নি সিডিএ। টোল আদায় করা হলে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। আর সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হলে টোল আদায় ছাড়াই উড়ালসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও উড়ালসড়কের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উড়ালসড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পরিচর্যা করার জন্য টোল আদায়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

উড়ালসড়ক সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, বিধি-বিধান ও আইন অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

উড়ালসড়ক থেকে টোল আদায়ের বিষয়টি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই উড়ালসড়ক নির্মাণে জনগণের কোনো দাবি ছিল না। যেটির প্রয়োজন ছিল না, সেটি শত শত কোটি টাকা খরচ করে কেন নির্মাণ করা হয়েছে। আবার নির্মাণের পর কেন জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? টোল আদায় করা হলে এখন যে গাড়িগুলো চলে পরে তাও চলবে না। ফলে দুর্ভোগ আগের মতোই থেকে যাবে।