সিরাজগঞ্জে পানি বাড়ার সঙ্গে শুরু হয়েছে নদীভাঙন

যমুনা নদীর গর্ভে চলে গেছে বসতভিটা। এখন কোথায় আশ্রয় নেবেন, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এই ব্যক্তি। শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
যমুনা নদীর গর্ভে চলে গেছে বসতভিটা। এখন কোথায় আশ্রয় নেবেন, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এই ব্যক্তি। শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জে যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ নদীভাঙন শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে সিরাজগঞ্জ সদরের সিমলা, পাঁচঠাকুরী গ্রামে হঠাৎ শুরু হয় ভয়াবহ নদীভাঙন। ভাঙন চলতে থাকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত। ভাঙনের তীব্রতায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় দুই শতাধিক বসতভিটা, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা এবং আবাদি জমি। বসতভিটা, আবাদি জমি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। আবার অনেকেই ভাঙনের আতঙ্কে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে বসতঘর।

এই সময় নদীভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় আব্বাস আলী অভিযোগ করেন, ‘প্রতিবছর শুকনা মৌসুমে বাঁধ ভালো করে সংস্কার করলে এমনভাবে নদীভাঙন শুরু হতো না। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীভাঙন শুরু হলে এসে কাজ করতে থাকে। আগে তাদের দেখা মেলে না বলে আমাদের এমন দুর্গতির মধ্যে পড়তে হয়।’

শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় নদীভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদসচিব কবির বিন আনোয়ার। এ সময় তিনি নদীভাঙন ঠেকাতে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ পেয়ে শনিবার সকালে ওই এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করে পাউবো।

সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বলেছেন, ‘পাঁচঠাকুরী এলাকায় শুক্রবার বিকেলে নদীভাঙন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেশ কিছু বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ রকম নদীভাঙন আগে কখনো দেখিনি। মুহূর্তেই শতাধিক বাড়িঘর এবং একটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর ভাঙন একটু কমে শনিবার আবার শুরু হয়। এখনো হুমকিতে রয়েছে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১ জুন সিমলা-পাঁচঠাকুরী স্পারের বাঁধের প্রায় ৭০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধটি সংস্কার করা হলেও তিন সপ্তাহের ব্যবধানে স্পারের মূল স্যাংকসহ অধিকাংশ বাঁধ নদীগর্ভে চলে গেছে।

পাউবোর সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, সিমলা স্পার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যমুনার স্রোত গতি পরিবর্তন করে সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে। এ কারণে পানির প্রবল স্রোতে হঠাৎ করেই নদীভাঙন শুরু হয়েছে। নদীভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়েছে।

পাউবোর সূত্র জানায়, যমুনা নদীর পানি শনিবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রবল বৃষ্টিতে জেলার নদ–নদীগুলোতে পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। এতে আবারও প্লাবিত হচ্ছে রাস্তাঘাট, বসতঘর। এর মধ্যে বাঁধে ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেওয়া মানুষ রয়েছেন চরম কষ্টে।

সিরাজগঞ্জ সদরের কাওয়াখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আলীম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় এই এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে রয়েছে।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, বন্যায় জেলার ৬টি উপজেলায় ৪৫টি ইউনিয়নের ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নদ–নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়ছে মানুষ। বন্যার্তদের জন্য ২৬৭ মেট্রিক টন চাল, ৩ হাজার ৯৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং শিশু ও গোখাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।