সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে পুলিশ

পরীমনি

চিত্রনায়িকা পরীমনির মামলার দুই আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমিকে মাদক মামলায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বোট ক্লাবের ঘটনারও সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেগুলো বিশ্লেষণ ও তদন্ত করে সেখানে মারামারি, ভাঙচুর ও অকথ্য গালাগালের ঘটনা জানতে পেরেছে পুলিশ।

এদিকে বোট ক্লাবের আগের রাতে ঢাকার গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে পরীমনি ‘ভাঙচুর করেছেন’ বলে গতকাল গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। যাকে ‘ফালতু অভিযোগ’ বলছেন পরীমনি।

এর আগে পরীমনি অভিযোগ করেন, ৮ জুন রাতে তিনি সাভারের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে গেলে সেখানে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা ও হত্যার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় গত সোমবার ছয়জনকে আসামি করে সাভার থানায় মামলা করেন পরীমনি। এরপরই পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিকে গ্রেপ্তার করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নাসির উদ্দিন মাহমুদ আবাসন ও নির্মাণ ব্যবসায়ী। উত্তরা ক্লাবের তিনি তিনবারের সভাপতি এবং ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য। ৮ জুন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসবেন বলে তিনি বোট ক্লাবে যান। রাত ১১টার পর ক্লাবে দুটি গাড়ি পৌঁছায়। একটি গাড়ি থেকে অমি, আরেক গাড়ি থেকে এক তরুণী (পরীমনি) ও আরেক ব্যক্তি নামেন। এরপর তাঁরা ক্লাবের ভেতরে বসেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর নাসির উদ্দিন তাঁর মতো করে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, পরীমনি কাউন্টারে গিয়ে ব্লু লেবেল ব্র্যান্ডের এক লিটারের একটি মদের বোতল চান। পরে অভ্যর্থনা কক্ষে রাখা তিন লিটারের ব্লু লেবেলের একটি বোতল নিয়ে যেতে চান। এ সময় নাসির উদ্দিন বাধা দেন এবং ক্লাবের নিরাপত্তাকর্মীদের ডাকেন। তখন পরীমনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় পরীমনির সঙ্গে থাকা তাঁর কস্টিউম ডিজাইনার ফরিদুল করিম (জিমি) বোতল ভাঙচুর করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরীমনিকে চড় মেরেছেন বলেও স্বীকার করেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বোট ক্লাবে মারামারি, ভাঙচুর ও অকথ্য গালাগালের ঘটনা কোন প্রেক্ষাপটে ঘটেছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অমির প্রতিষ্ঠানে অভিযান

পরীমনির মামলার আরেক আসামি তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমির রিক্রুটিং এজেন্সিসহ উত্তরায় তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়েছে সাভার ও দক্ষিণখান থানার পুলিশ। এর আশকোনার সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামের রিক্রুটিং এজেন্সিতে ১০২টি পাসপোর্ট ও অনেক স্ট্যাম্পসহ প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান ও নির্বাহী বাছির আহমেদকে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় পাসপোর্ট আইনে অমি ও গতকাল আটক দুই ব্যক্তিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আটক মশিউর ও বাছিরকে গতকাল রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জব্দ করা পাসপোর্টগুলো বিভিন্ন নারী-পুরুষের। তাঁরা কারা, তাঁদের পাসপোর্ট রিক্রুটিং এজেন্সিতে কেন, এগুলো বৈধ নাকি অবৈধভাবে রাখা হয়েছে—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রাভেল এজেন্সির বৈধ লাইসেন্স আছে কি না, তা–ও দেখা হচ্ছে।

পরীমনির বিরুদ্ধে ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ

এদিকে পরীমনি ৭ জুন রাতে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুর করেছেন বলে গতকাল গণমাধ্যমে খবর বের হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল পরীমনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ফালতু একটা অভিযোগ। এত দিন পরে কেন এ অভিযোগ?’

পুলিশ সূত্র জানায়, ৭ জুন গভীর রাতে ‘৯৯৯’ থেকে কল পেয়ে গুলশান থানার টহল পুলিশ গুলশান ২ নম্বরে অল কমিউনিটি ক্লাবে যায়। সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায় পরীমনিসহ তিন ব্যক্তি ক্লাব ভাঙচুর করছেন। তাঁদের মধ্যে একজন নারী ও আরেকজন পুরুষ রয়েছেন। এ সময় পুলিশ পরীমনিকে নিবৃত্ত করে বাসায় পাঠায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রাতে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষ বা অন্য কেউ থানায় অভিযোগ, মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেনি। ক্লাব কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলে পুলিশ তা খতিয়ে দেখবে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার দিন পরীমনি একজন নারী ও একজন পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে নিয়ম ভেঙে ক্লাবে হট্টগোল করেছেন। তাঁর পোশাক দেখে ক্লাবের একজন সদস্য আপত্তি তোলেন। তাঁকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন।

কিন্তু পরীমনি কথা না শোনায় ওই সদস্য নিজেই চলে যান। পরীমনি যে সদস্যের মাধ্যমে এসেছিলেন, তিনিও পরীমনিকে চলে যেতে বলেন। পরীমনি কথা না শোনায় একপর্যায়ে ওই সদস্যও চলে যান। তখন পরীমনি চিৎকার–চেঁচামেচি শুরু করেন। ক্ষিপ্ত হয়ে গ্লাস, ছাইদানি ছুড়ে মারতে থাকেন। তিনি ১৫টি গ্লাস, ৯টি ছাইদানি, ১৪টি হাফ প্লেট ছুড়ে মেরেছেন। তাঁরাই আবার ৯৯৯-এ কল করে পুলিশ ডেকে আনেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশের অনুরোধে পরীমনি ও তাঁর সঙ্গীরা চলে যান। এরপর আর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি জানান, পরীমনি যে সদস্যের সঙ্গে ক্লাবে এসেছিলেন, তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।