সুইসসহ বিদেশি ব্যাংকে অর্থ পাচারকারী কারা, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

সুইস ব্যাংকসহ দেশের বাইরে বিদেশি ব্যাংকে গোপনে পাচার করে অর্থ রাখা ব্যক্তির নাম–ঠিকানা, অর্থের পরিমাণ এবং ওই অর্থ উদ্ধারে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এই আদেশ দেন।

বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিক ও কোম্পানির পাচারের মাধ্যমে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে, বিশেষত সুইস ব্যাংকে গোপনে জমা রাখা বিপুল অর্থ উদ্ধারে অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস ওই রিট করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক। শুনানি নিয়ে আদালত নির্দেশনার পাশাপাশি কয়েকটি বিষয়ে রুল দেন।

রুলে বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিক ও কোম্পানির পাচারের মাধ্যমে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে, বিশেষত সুইস ব্যাংকে গোপনে জমা রাখা অর্থ উদ্ধারে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অতীত ও বর্তমানে এ ধরনের অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন—পর্যবেক্ষণ, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ তদন্ত দল গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল হয়েছে।

একই সঙ্গে ‘পানামা পেপারস’ ও ‘প্যারাডাইস পেপারস’ প্রতিবেদনে নাম আসা বাংলাদেশি কোম্পানি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত ও অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রতি মাসে আদালতে দাখিল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। অর্থসচিব, বাণিজ্যসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১৪ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পরে আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান প্রথম আলোকে বলেন, সুইস ব্যাংকসহ দেশের বাইরে বিদেশি ব্যাংকে গোপনে অর্থ রাখা ব্যক্তির নাম–ঠিকানা এবং ওই অর্থ উদ্ধারে জমাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। ৩০ মার্চের মধ্যে বিবাদীদের এসব তথ্য জানাতে হবে।

দুই বিষয়ে শুনানি হবে একসঙ্গে
এ দিকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বাড়ি বানানো বা কেনা—এমন বাংলাদেশির দ্বৈত নাগরিকত্বসংক্রান্ত তথ্য জানাতে সময় চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী ৩০ মার্চ শুনানির দিন রেখে এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে ওই সব তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিদেশে অর্থ পাচার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, তাঁর কাছে ২৮টি কেস এসেছে। এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে গত বছরের ২২ নভেম্বর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। দেশের বাইরে অর্থ পাচারে জড়িত দুর্বৃত্তদের নাম–ঠিকানা, পাচার করা অর্থে তাঁদের বিদেশে বাড়ি তৈরিসহ বিস্তারিত তথ্যও জানতে চান। এরপর ১৭ ডিসেম্বর বিষয়টি আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত দেশের বাইরে অর্থ পাচারে জড়িত ও পাচার করা অর্থে যাঁরা বিদেশে বাড়ি তৈরি করেছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা ও তাঁদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন।

স্বতঃপ্রণোদিত রুলের ধারাবাহিকতায় গত ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট অপর এক আদেশে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বাড়ি বানানো বা কেনা, এমন বাংলাদেশি নাগরিক, যাঁদের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট আছে এবং যাঁরা দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে নিয়মিত দেশ-বিদেশে যাতায়াত করেন, তাঁদের বিষয়ে তথ্য জানাতে ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এম এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে বলেন, কতগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তি আছে, যে কারণে বিএফআইইউ নাম প্রকাশ্যে দিতে পারে না। তবে তদন্তের জন্য বিএফআইইউ এ–সংক্রান্ত তথ্য দুদককে দিয়েছে।

বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা জানিয়ে দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, অর্থ পাচারকারীদের নাম, ঠিকানা ও ক্রয় করা বাড়ি বা ফ্ল্যাটের তথ্য সংগ্রহের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিএফআইইউ ও স্পেশাল ব্রাঞ্চকে অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানামা পেপারস দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। প্যারাডাইস পেপারস দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশিদের তালিকায় মূসা বিন সমশের ও মাল্টিমোডের স্বত্বাধিকারী আবদুল আউয়াল মিন্টু উল্লেখযোগ্য।

ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষে দুই দিন সময় চেয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক শুনানিতে বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে নথি প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রায় ১ হাজার পৃষ্ঠার নথি আসার অপেক্ষায়, যেখানে সম্ভাব্য ১২–১৩ হাজার দ্বৈত নাগরিক রয়েছেন। শুনানি শেষে আদালত বলেছেন, স্বতঃপ্রণোদিত রুল এবং ওই রুল (আজ দেওয়া) একসঙ্গে শুনানি হবে। আগামী ৩০ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন রাখা হলো।