সুন্দরবনের বাইরে বাঘের প্রজন্ম
সুন্দরবনের বাঘ বনের বাইরে শাবক জন্ম দেবে—এ আশা একসময় দেশের প্রাণিবিজ্ঞানীরা ছেড়েই দিয়েছিলেন। বেঙ্গল টাইগারখ্যাত সেই বাঘই দেশে প্রথমবারের মতো আবদ্ধ পরিবেশে বা ক্যাপটিভ অবস্থায় তিনটি শাবকের জন্ম দিয়েছে।
কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত মঙ্গলবার ওই তিন শাবকের জন্ম দেয় জ্যোতি নামের বাঘিনী। সদ্যোজাত তিন শাবক এবং বাঘ জয় ও বাঘিনী জ্যোতিকে রাখা হয়েছে ওই সাফারি পার্কে। ব্যাঘ্রশাবক তিনটিকে প্রাণী চিকিৎসক মুস্তাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পরিচর্যা করা হচ্ছে। মায়ের দুধ পান করা শাবক তিনটি গতকাল বুধবার পর্যন্ত সুস্থ ছিল।
বিশিষ্ট প্রাণিবিশেষজ্ঞ ও দুবাই সিটি সরকারের প্রধান চিড়িয়াখানা ও বন্য প্রাণিবিশেষজ্ঞ রেজা খান আবদ্ধ পরিবেশে সুন্দরবনের বাঘের বাচ্চা জন্মের ঘটনাকে ঐতিহাসিক হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবনের জিনগত সম্পদ রক্ষার দিক থেকে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এর মধ্য দিয়ে আমরা সুন্দরবনের বাঘের একটি নতুন ধরনের দ্বিতীয় প্রজন্ম পেলাম। বন বিভাগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে যেকোনো মূল্যে ব্যাঘ্রশাবক তিনটিকে বাঁচিয়ে রাখতে।’
সুন্দরবনের বাঘের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে যাওয়া নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে। স্মৃতি হাতড়ালেই মনে পড়ে যেতে পারে এ প্রশ্নের উত্তর। কারণ, ঘটনাটি প্রায় তিন বছর আগের। ২০১২ সালের জুনে ঢাকার শ্যামলীর একটি বাড়ি থেকে র্যাব ও বন বিভাগের অভিযানে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় দুই মাস বয়সী তিনটি ব্যাঘ্রশাবক। তখন গড়ে দুই কেজি ওজন ছিল এগুলোর। সুন্দরবনের চোরা শিকারিদের হাতঘুরে ক্রেতার খোঁজে শ্যামলীর ওই বাড়িতে রাখা হয়েছিল তাদের।
উদ্ধারের পর বন বিভাগ শাবক তিনটির নাম দেয় জয়, জ্যোতি ও জুঁই। বন বিভাগের বন্য প্রাণী চিকিৎসক জাহেদ মোহাম্মদ মালেকুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচর্যা ও চিকিৎসা পায় এই ব্যাঘ্রশাবকেরা। চার মাস মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের রিয়ারিং হাউসে থাকে তারা। সেখানে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়। পরে ওই বছরের ১৩ অক্টোবর জয় ও জ্যোতিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বাঘের বেষ্টনীতে অবমুক্ত করা হয়। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি মিনি বেষ্টনীসহ ঘর তৈরি করা হয়। তাদের চিকিৎসা ও বেড়ে ওঠার অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় বন বিভাগের বন্য প্রাণী চিকিৎসক মুস্তাফিজুর রহমানকে। বন্য প্রাণিবিশেষজ্ঞ শহিদুল্লাহও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। জুঁইকে পাঠানো হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়।
মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, বাঘ জয় ও বাঘিনী জ্যোতিকে পূর্ণাঙ্গভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করা হয়েছে। তাই স্বাভাবিক প্রজনন হয়েছে। তাদের পর্যায়ক্রমিকভাবে মুরগি, গিনিপিগ, খরগোশ, শূকর, ছাগল ও হরিণ ছেড়ে দিয়ে শিকারি ও হিংস্র করে তোলা হয়। এ জন্য তাদের পর্যায়ক্রমিকভাবে ছোট বেষ্টনী থেকে বড় বেষ্টনীতে ছাড়া হয়। বর্তমানে মা ও শাবকেরা ভালো আছে।