সুবোধ এখন সিলেটে

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার একটি বাসভবনের দেয়ালে আঁকা হয়েছে সুবোধের গ্রাফিতি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরেছবি : প্রথম আলো

রাজধানী ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে ২০১৭ সালে আঁকা সেই সুবোধের গ্রাফিতি আবার ফিরে এসেছে। এবার আর ঢাকায় নয়, প্রতিবাদী এ গ্রাফিতির দেখা মিলল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এলাকাসংলগ্ন একটি বাসভবনের দেয়ালে। তবে এত দিনকার চিরপরিচিত পলায়নরত সুবোধকে সেখানে দেখা যায়নি। নতুন আঁকা এ গ্রাফিতিতে দেখা যাচ্ছে, হাস্যোজ্জ্বল সুবোধ টেলিফোনে কথা বলছেন। টেলিফোন সংযোগের অপর প্রান্তে ইংরেজিতে লোগো আকারে লেখা ‘হবেকি?’।

শাবিপ্রবির পাশেই একটি বাসভবনের দেয়ালে আঁকা এ গ্রাফিতির অর্থ কী? এর একটা ব্যাখা দিয়েছেন সিলেট চারুশিল্পী সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব ও নাট্যব্যক্তিত্ব শামসুল বাসিত শেরো। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাফিতি দেখে যা মনে হচ্ছে, এখানে হাস্যোজ্জ্বল সুবোধ হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বোঝানো হয়েছে। আর টেলিফোনের অপর প্রান্তে যেখানে ‘হবেকি?’ লেখা, সেটাকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের প্রতীকী হিসেবে দেখানো হয়েছে।

নতুন আঁকা গ্রাফিতিতে লেখা হয়েছে ‘হবেকি?’
ছবি: প্রথম আলো

শামসুল বাসিত আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা এখন তাঁদের দাবি–দাওয়া বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছেন। দাবি আদায়ের বিষয়ে তাঁদের মনে প্রশ্ন, ‘হবে কি?’। যে ‘ও’ অক্ষরটি লাল রং দিয়ে ভরাট করা, সেটি উদীয়মান সূর্যকে বোঝানো হয়েছে। উপাচার্যের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেই সূর্য উঠবে কি না, সেটি বোঝাতেই লাল বৃত্ত আঁকা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়টি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত। শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রায় আধা কিলোমিটার আগে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সিলেট সেক্টরের অবস্থান। বিজিবির এ দপ্তরের বিপরীতে একটি বাসার দেয়ালে সুবোধের গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। এতে হাস্যোজ্জ্বল সুবোধকে টেলিফোনে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। টেলিফোনের দীর্ঘ সংযোগ তারের অপর প্রান্তটি ইংরেজিতে লেখা ‘HOBEKI?’ (হবেকি)-এর সঙ্গে যুক্ত। সেই ‘হবেকি’ শব্দের ইংরেজি ‘o’ অক্ষরটি লাল রঙে ভরাট করা রয়েছে। সেই অক্ষরের সঙ্গেই টেলিফোনের তারটি সংযুক্ত করে দেওয়া আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কে বা কারা এই গ্রাফিতিটি এঁকেছেন, তা তাঁরা জানেন না। পরদিন বুধবার সকালে এ গ্রাফিতি সবার চোখে পড়ে। ঠিক কী কারণে এ গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে, সেটা কেউই বলতে পারছেন না। তবে যেহেতু পাশেই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করছেন, এর সঙ্গে এ গ্রাফিতি আঁকার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। কারণ, সুবোধ চরিত্রটি ইতিমধ্যে দাবি আদায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

গ্রাফিতিতে দেখা যাচ্ছে, হাস্যোজ্জ্বল সুবোধ টেলিফোনে কথা বলছেন
ছবি: প্রথম আলো

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী জানান, গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নির্বিচার পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর যখন শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন, তখন তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি পূরণের আশ্বাসের পাশাপাশি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়টি আচার্যকে (রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ) অবহিত করবেন বলে কথা দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, যেহেতু শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, তাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে উপাচার্যবিরোধী কোনো কর্মসূচি পালন করছেন না। এ অবস্থায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়টি আলোচনায় রাখতেই ক্যাম্পাসের বাইরে কেউ এ গ্রাফিতি এঁকেছেন বলে অনেকে মনে করছেন। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বে থাকা শাহরিয়ার আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কে বা কারা এ গ্রাফিতি এঁকেছেন, আমরা জানি না। তবে অনুমান করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে গ্রাফিতিটি আঁকা হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি হিসেবেই আমরা দেখছি।’

আরও পড়ুন

গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে এই আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।