সুমা কি এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে?

সুমা আক্তার।
সংগৃহীত

আর কয়েক মাস বাকি এসএসসি পরীক্ষা হতে। স্কুল বন্ধ থাকলেও পরীক্ষার্থীরা যে যার মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্যস্ত থাকার কথা সুমারও। কিন্তু সে এখন জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। তবে তার আশা, সুস্থ হয়ে সে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে। আর মেয়েকে বাঁচানোর জন্য তার পোশাককর্মী মা ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে।

সুমা আক্তার (১৫) ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব বালিচান্দা গ্রামের বাসিন্দা। সে সুমন খাঁ ও মিনারা খাতুনের মেয়ে। তাঁর বাবা মারা গেছেন ১১ বছর আগে। অভাবের সংসারে দুই মেয়েকে মিনারা তাঁর ভাই শহিদুল ইসলামের কাছে রেখে রাজধানীর আশুলিয়া থানার একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। মামাবাড়ি হালুয়াঘাট উপজেলায় থেকে লেখাপড়া করছে সুমা। সে উপজেলার চরবাঙ্গালিয়া নাইট মণীন্দ্র রেমা মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী।

মিনারা বলেন, তাঁর উপার্জিত অর্থে দুই সন্তানের খরচ চালাতেন। হঠাৎ করে এক মাস আগে সুমা অসুস্থ হয়ে পড়ে। দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে তার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান। পরে সুমাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা সুমার দুটি কিডনি প্রতিস্থাপনসহ উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এতে প্রয়োজন প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।

মিনারা বলেন, ‘মেয়েডা বিরাট দুঃখী। লেখাপড়া করতে চায়। এক মাস ধইরা হাসপাতালে ভর্তি রাইখা চিকিৎসা দেওয়া হইতাছে। সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করন লাগে। চিকিৎসকেরা কইছে কিডনির লাইগা সাত লাখ টাকা প্রয়োজন। এত টেকা কই পামু?’

এরপর এলাকাবাসী আর সুমার বিদ্যালয় থেকে কিছু সহায়তা পাওয়া যায়। সেই টাকায় এক মাস ধরে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি রেখে সুমার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের এত টাকা জোগাড় করতে না পেরে সুমার মা ও মামা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

মামা শহিদুল বলেন, এ পর্যন্ত এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিডনির জন্য আরও অনেক টাকা প্রয়োজন। কিন্তু কীভাবে তা জোগাড় হবে, তা বুঝতে পারছেন না। মেয়েরা ছোট থেকে তাঁর কাছে বড় হয়েছে। মানুষের একটু সহযোগিতা ও আল্লাহর রহমত থাকলে সুমাকে হয়তো তাঁরা ফিরে পাবেন।

চরবাঙ্গালিয়া নাইট মণীন্দ্র রেমা মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়া রানী দে বলেন, সুমা খুব অসহায়। তারা বাবা নেই, মা কাজের সন্ধানে ঢাকায় থাকেন। মেয়েটা মেধাবী ছাত্রী। কিন্তু তার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাঁরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বিদ্যালয়ের তরফ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।