সুরভি ফুলের সৌরভ

দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি থেকে সুরভি ফুলের ছবিটি সম্প্রতি তোলা।ছবি: লেখক

যে সড়কটি দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করেছে, তার দুই পাশে চোখে পড়বে অনেকগুলো সুউচ্চ রয়্যাল পাম। উচ্চতা ও গড়নের দিক বিবেচনায় পামগাছগুলোর নামকরণ যথার্থ। কালের সাক্ষী এই গাছগুলো দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, সামনে অপেক্ষা করছে আরও কিছু চমক। উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত দিঘাপতিয়া রাজাদের এই বাড়ির মূল ফটক পেরিয়ে কিছুটা এগোলেই বাঁ পাশে চোখে পড়বে পাখিফুলের দুটি পরিণত গাছ। জানামতে, দেশে শতোর্ধ্ববর্ষী পাখিফুলের এমন আর কোনো গাছ নেই। ডান পাশে আছে একটি প্রাচীন বকুল ও মুচকুন্দ। কাণ্ড ও ডালপালা দেখেই বোঝা যায় গাছগুলোর বয়স শতাব্দী ছাড়িয়েছে। এমন অসংখ্য মহিরুহ বৃক্ষের ছায়ায় এখানে ইতিহাস যেন থমকে আছে।

প্রতিদিন বেড়াতে আসা অসংখ্য মানুষের বাড়িটির প্রতি আকর্ষণ নানা কারণে। উদ্ভিদপ্রেমীদের কাছে বাড়িটির প্রধান আকর্ষণ অনন্য শৈলীর ইতালিয়ান গার্ডেন। রাজপুরীর সুসজ্জিত ছোট্ট এই বাগানের অবস্থান পশ্চিম প্রান্তে, লেকের ধারে। স্বল্প পরিসরে নিখুঁত নকশায় সুশোভিত দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদের মনোমুগ্ধকর উপস্থিতি উদ্যানটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। সেখানে জহুরিচাঁপা, হাপরমালী, কপসিয়া, কুরচি, শতোর্ধ্ববর্ষী তেজপাতা, কর্পূর—এসব গাছের ভিড়ে একগুচ্ছ শুভ্র ফুলে চোখ আটকে গেল। এই ফুল আগে কখনো দেখিনি। কাছে যেতেই মধুর ঘ্রাণে আচ্ছন্ন হলো মন। বাগানের মালি জানালেন, গাছটির নাম সুরভি। নামটি যে সুগন্ধের জন্য, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ইংরেজিতে ফ্র্যাগ্র্যান্ট অলিভ, সুইট ওসমানথাস, সুইট অলিভ, টি অলিভ ইত্যাদি নামে পরিচিত। কিছুদিন পর গাছটি ঢাকায় রমনা নার্সারিতেও দেখেছি। গাছভর্তি ফুলের তীব্র সুবাস ছড়িয়ে পড়েছিল চারপাশে। তবে ফুলের প্রস্ফুটনসৌন্দর্য ও শুভ্রতা ছাড়িয়ে এর প্রধান আকর্ষণ যে তীব্র ঘ্রাণ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হিমালয় অঞ্চলের এই উদ্ভিদ আমাদের দেশে ততটা সহজলভ্য না হলেও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সহজদৃষ্ট। চীন-জাপানের বিভিন্ন শহরে সুগন্ধি ও শোভাবর্ধক হিসেবে পরিকল্পিতভাবে এই উদ্ভিদ লাগানো হয়। তা ছাড়া ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়ও চাষ করতে দেখা যায়।

সুরভি (ওসমানথাস ফ্র্যাগ্র্যান্স) চিরসবুজ ঝোপালো ধরনের গাছ। সাধারণত ৩ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা খানিকটা পুরু, ৭ থেকে ১৫ সেমি লম্বা ও কিনারা দাঁতানো। সাদা রঙের ফুল ছাড়াও এদের ফ্যাকাশে হলুদ, হলুদ বা কমলা-হলুদ রঙের ফুলও দেখা যায়। ৫ মিমি চওড়া ফুলগুলো ১ সেমি লম্বা হতে পারে। বেশি ফোটে শরতে। ১ থেকে দেড় সেমি লম্বা ও শক্ত আবরণের ফলগুলোর গায়ে কালচে বেগুনি দাগ থাকে। ফুল ফোটার প্রায় ছয় মাস পর ফল পরিপক্ব হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় রোদযুক্ত স্থানে এই গাছ ভালো জন্মে। চীনে সুগন্ধি চা ও খাবার তৈরিতে এ ফুলের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ঐতিহ্যবাহী চীনা ভেষজ চিকিৎসায় এই ফুলের চা বেশ কার্যকর মনে করা হয়।