সূর্যমুখীর ভালো ফলন, তবু চিন্তায় চাষি

এবারই প্রথম জেলায় বড় পরিসরে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো। তবে এখনো বীজ আহরণের পদ্ধতি শেখানো হয়নি কৃষকদের।

সূর্যমুখীর বীজ পাকতে শুরু করেছে। সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার আকাল মেঘ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আলু ও টমেটোর মতো প্রথাগত চাষাবাদ ছেড়ে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন মুন্সিগঞ্জের কৃষকেরা। কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে জেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। পাকা, আধা পাকা সূর্যমুখী ফুলে বিস্তীর্ণ জমি এখন হলুদ। কিন্তু তাতেও রাতে ঘুম নেই কৃষকদের চোখে। ফসল ফলালেও সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি না জানায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অনেকের কপালে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় সূর্যমুখীর চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় এটা খুব লাভজনক। এ বছর কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় জেলায় ৮০০ জন কৃষকের মধ্যে বিনা মূল্যে এক কেজি করে আরডিএস জাতের সূর্যমুখীর বীজ বিতরণ করা হয়। এ বছরই প্রথম জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৩১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হেক্টর, টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় ১০ হেক্টর, সিরাজদিখান উপজেলায় ৬ হেক্টর, লৌহজং উপজেলায় ৭ হেক্টর ও গজারিয়া উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল এলাকার কৃষক লিটন দেওয়ান তাঁর ৬০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত চার মাসে বিভিন্ন প্রকার সার ও পানির সেচ দিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখনো সূর্যমুখী ফুল কীভাবে সংরক্ষণ করে তেল উৎপাদন করবেন, সে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এদিকে ফুলও পেকে ঝরে পড়তে শুরু করেছে।

কৃষকেরা বলেন, ফলন খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু কী করে ফসল (সূর্যমুখীর ফুল) তুলবেন, কীভাবে তেল সংগ্রহ করবেন, এ বিষয়ে কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা বা প্রশিক্ষণ পাননি তাঁরা। এখন সূর্যমুখী ফুল পেকে ঝরে পড়ছে। সঠিক সময়ে উত্তোলন করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

সদর উপজেলার কৃষক রতন মোল্লা প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে প্রথমবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ভালো ফসলও হয়েছে। কিন্তু কপালে চিন্তার ভাঁজ তাঁরও। সূর্যমুখী ফুল পাকতে শুরু করেছে কিন্তু তাঁদের কোনো প্রস্তুতি নেই। তিনি বলেন, ‘কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা পেলে আশা করছি লাভের মুখ দেখতে পারব। শুনেছি সূর্যমুখীর তেল স্বাদে, গুণে ভালো। দামও অনেক বেশি। তাই এ ফসল নষ্ট হতে দিতে চাই না।’

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের চিন্তার কিছু নেই। তাঁরা হাতে–কলমে বীজ আহরণ শিখিয়ে দেবেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মুন্সিগঞ্জের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সূর্যমুখীর বীজ কিছুদিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয়ে উঠবে। কনসেলার যন্ত্র বা হাত ভুট্টার মতো করে সরাসরি বীজ সংগ্রহ করা যাবে। পরে বীজ ভালোমতো শুকিয়ে তা ঘানির মাধ্যমে তেল উৎপাদন করতে হবে। এ বিষয়ে কৃষকদের হাতে–কলমে শেখানো হচ্ছে।