সেই ইউএনও এবার সাংবাদিক পিটিয়ে এলাকাছাড়া করলেন

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরামের বিরুদ্ধে সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। আহত সাংবাদিককে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত সাংবাদিক হলেন সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক হিজল-করচ-এর শাল্লা উপজেলা প্রতিনিধি বকুল আহমেদ তালুকদার (৪৭)। তিনি একই সঙ্গে সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক শ্যামল সিলেট-এর উপজেলা প্রতিনিধি।
আসিফ বিন ইকরাম সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় থাকতে পরিবেশবিধ্বংসী বোমামেশিন চালানোর সুযোগ দিতে আবদুল আলী নামের এক পাথর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে রেখে দেন। এ নিয়ে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ঘটনার তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় ইউএনওর দুটি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রেখেছে। এ নিয়ে ‘৩০ লাখ টাকা ঘুষের সাজা দুটি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ’ শিরোনামে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় আরেকটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
আহত বকুল বলেন, শাল্লা উপজেলা সদরের ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারে তাঁর একটি মুদি দোকান আছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওই দোকানটি খোলেন। এরপর ইউএনও পুলিশ নিয়ে সেখানে যান। ইউএনও বকুলকে সামনে পেয়েই গালাগাল শুরু করে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। পরে ইউএনও পুলিশকে নির্দেশ দেন তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য। একপর্যায়ে বকুল দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে রক্ষা পান। বকুল অভিযোগ করেন, এরপর ইউএনও নিজে দোকানের জিনিসপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলে দেন এবং সঙ্গে থাকা লোকজনকে নির্দেশ দেন পেট্রল নিয়ে এসে দোকানে আগুন দিতে। এরপর দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বকুল তালুকদারকে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন তাঁর সহকর্মীরা। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। তিনি জানান, এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড়ে ডান কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না। একইভাবে ডান চোখে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইউএনওর হুমকি-ধমকিতে উপজেলার সাংবাদিকেরা আতঙ্কে আছেন। ইউএনও আমাকে গুলি করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।’
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আসিফ বিন ইকরাম বলেন, ‘ওই ছেলে সাংবাদিক নয়, দোকানদার। উপজেলা পরিষদের গেটের কাছে সরকারি জায়গায় তাঁর একটি টং-দোকান আছে। তাঁকে সেটি সরিয়ে নিতে বললেও সে নেয়নি। সকালে মোবাইল কোর্ট করে সেটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়েছে।’ নিজে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও বলেন, ‘আমি হাত তুলিনি, পুলিশ তাকে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় দিয়েছে।’
তবে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলাম পুলিশের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। ইউএনও সাহেব মোবাইল কোর্ট করে একটি টং-দোকান তুলে দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে দৈনিক হিজল-করচ-এর নির্বাহী সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর ইউএনও উপজেলায় ১০ টাকা কেজি ধরে সরকারিভাবে চাল বিক্রি উদ্বোধন করেন। শাল্লা সদর বাজারে চালের ডিলার মহাদেব সাহার দোকানে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু ঘরের বারান্দায় ওঠার স্থানটি কিছুটা উঁচু থাকায় সেখানে চালভর্তি বস্তা ফেলে সিঁড়ি উচু করা হয়। তখন স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ নিয়ে দৈনিক হিজল-করচ পত্রিকায় পরদিন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ইউএনও ক্ষুব্ধ হন। এমরানুল আরও বলেন, ‘আমি ওই সংবাদের বিষয়ে কথা বলতে ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইউএনওকে ফোন দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই অশালীন ভাষায় আমাকে গালমন্দ শুরু করেন। পরে আমার কথা না শুনেই সংযোগ কেটে দেন।’
সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লতিফুর রহমান বলেন, ‘শাল্লার সাংবাদিকেরা রীতিমতো আতঙ্কে আছেন। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিককে মারধরের বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। আমি শুনিনি, তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।’