সেই নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো এখন পরিত্যক্ত

অন্য নৌযানের তুলনায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি খরচ বেশি। গতিও কম। এসব কারণে নৌপথে রোগী পরিবহনের এ যান মানুষের কাজে আসেনি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য দেওয়া নৌ–অ্যাম্বুলেন্সটি অচল পড়ে আছে। সম্প্রতি কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদের তীরেছবি: নেছারউদ্দিন

২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর রাঙামাটির লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু সেটিতে একজন রোগীও বহন করা হয়নি। ৩০ লাখ টাকা দামের অ্যাম্বুলেন্সটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, স্পিডবোটে পৌনে এক ঘণ্টায় রাঙামাটি সদরে পৌঁছানো যায়। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। তাই নৌপথে রোগী পরিবহনের যানটিকে রাখতে আগ্রহী নয় তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অরবিন্দ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, খুবই ধীর গতিতে চলে এটি। অনেক কম সময়ে অন্য নৌযান দিয়ে রোগী যাতায়াত করা সম্ভব।’

উদ্বোধনের এক বছরের মধ্যে তলায় ফুটো হয়ে অচল হয়ে পড়ে আছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দেওয়া নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। এটি এখন উপজেলার আন্ধারমানিক নদের পানিতে তলিয়ে আছে। তবে ভাটার সময় কিছুটা জেগে ওঠে। ব্যবহার না হওয়ায় খুলে রাখা হয়েছে এর ইঞ্জিন।

কমিউনিটি বেইস্‌ড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০টি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেশের ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের বেশির ভাগই হয় এখন পরিত্যক্ত, নয়তো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

কলাপাড়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার বলেন, ‘শুরু থেকেই এ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। এ কারণে এটিকে ফেরত নেওয়ার জন্য আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কয়েকবার চিঠি লিখেছি।’

কমিউনিটি বেইস্‌ড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০টি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেশের ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের বেশির ভাগই হয় এখন পরিত্যক্ত, নয়তো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

এটি ধীর গতিতে চলে। উঁচু এবং ঢাকনাওয়ালা হওয়ায় চলার সময় বেশি দোলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব অ্যাম্বুলেন্সের জন্য স্থায়ীভাবে চালক নিয়োগ করা হয়নি। অন্য নৌযানের তুলনায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি খরচ কয়েক গুণ বেশি। গতিও অনেক কম। এসব কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষই এ নৌযান পরিচালনায় আগ্রহী নয়। সাধারণ মানুষও তাই কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। কোথাও কোথাও অবশ্য স্থানীয়ভাবে চালকের ব্যবস্থা করে চালানো হয়েছে।

যেখানে দেওয়া হয়েছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স

পটুয়াখালীর গলাচিপা, দশমিনা ও কলাপাড়া; নেত্রকোনার খালিয়াজুরি; মানিকগঞ্জের হরিরামপুর; শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা; খুলনার দাকোপ; বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ; চাঁদপুর সদর; নোয়াখালীর হাতিয়া; ভোলার চরফ্যাশন, তজুমদ্দিন ও দৌলতখান; বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ; রাঙামাটির লংগদু; গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া; সিরাজগঞ্জের কাজীপুর এবং সুনামগঞ্জের শাল্লা ও জামালগঞ্জ উপজেলায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ভোলার মনপুরা ও মেহেন্দীগঞ্জে আরও দুটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয় ২৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা করে।

একটি সাধারণ স্পিডবোটে যে দূরত্ব যেতে ১ লিটার তেল লাগে, সেখানে এটিতে ব্যয় হতো প্রায় ৫ লিটার ডিজেল। এতে খরচ অনেক বেশি হতো। শুরুর দিকে কিছু মানুষ এটি ব্যবহার করলেও পরে খরচের কারণে সাধারণের মাঝে এর সেবা নিতে অনীহা দেখা যায়।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামাল হোসেন মুফতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বরাদ্দ দেওয়া নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলোর মধ্যে ১১টি সচল আছে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা সম্প্রতি সরেজমিনে শুধু ভোলার মনপুরা ও শরীয়তপুরের জাজিরার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দুটি সচল দেখতে পান। একই সঙ্গে এর আগে বরাদ্দ দেওয়া নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলোও অচল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া হিসাবে এসব নৌযানের উল্লেখ নেই।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ১৯৮৫, ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালে জাপান সরকারের অনুদানে দেশের উপকূলীয় এলাকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে বেশ কয়েকটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল। তবে এগুলো চালাতে কোনো নীতিমালা করা হয়নি, তৈরি করা হয়নি চালকের পদও। এতে এসব নৌ-অ্যাম্বুলেন্সও রোগী পরিবহনে কোনো ভূমিকা রাখেনি। তবে এসব নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।

‘জ্বালানি খরচ পাঁচ গুণ বেশি’

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের সবচেয়ে বড় উপজেলা মোরেলগঞ্জ। এখানকার ১৬টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটির স্থলপথে যাতায়াতব্যবস্থা খুবই খারাপ। এসব ইউনিয়নের মানুষের পানগুছি নদীপাড়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে যাওয়া-আসার ভরসা নৌযান। ফলে সেখানে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স জরুরি রোগী পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করেছিলেন। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বছর না যেতেই অ্যাম্বুলেন্সটি অচল হয়ে পড়ে আছে। যে কদিন চলেছিল, খরচ বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ এটি ব্যবহারে আগ্রহ হারায় বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মোরেলগঞ্জের পাঞ্চকরণ ইউনিয়নের উত্তর কুমারিয়া জোলা গ্রামের কৃষক শাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার অধিকাংশ এলাকার মানুষ জানেনই না তাঁদের এলাকার রোগী পরিবহনের জন্য হাসপাতালে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আছে। এর খরচ অনেক বেশি বলে শুনেছেন তিনি।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামাল হোসেন মুফতি প্রথম আলোকে বলেন, একটি সাধারণ স্পিডবোটে যে দূরত্ব যেতে ১ লিটার তেল লাগে, সেখানে এটিতে ব্যয় হতো প্রায় ৫ লিটার ডিজেল। এতে খরচ অনেক বেশি হতো। শুরুর দিকে কিছু মানুষ এটি ব্যবহার করলেও পরে খরচের কারণে সাধারণের মাঝে এর সেবা নিতে অনীহা দেখা যায়। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অচল রয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে চালকের ব্যবস্থা করে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো হয়েছিল। এর আগেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেটিরও চালক ছিল না, ছিল না তেলের বরাদ্দও। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে সেটিও অচল হয়ে পড়ে আছে।

পটুয়াখালীর গলাচিপা ও দশমিনার চরাঞ্চলের কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, খরচ বেশি হওয়ায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারে তাঁরা আগ্রহ
দেখান না।

জেলার সিভিল সার্জন মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের মূল সমস্যা হচ্ছে গতি কম। এ ছাড়া এত বেশি খরচ হয় যে স্থানীয় লোকজন তা বহন করতে পারেন না। এ কারণে তাঁরা কম খরচের বেসরকারি নৌযান ব্যবহার করেন।

ধীর গতি, তাই ব্যবহারে অনাগ্রহ

করোনার সাধারণ ছুটিসহ বিধিনিষেধের সময় ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সেখানকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করেন। তবে ধীর গতির কারণে রোগী ও তাঁর স্বজনেরা এটি ব্যবহারে আগ্রহ দেখাননি। জেলার অন্য তিন উপজেলা চরফ্যাশন, দৌলতখান ও তজুমদ্দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বরাদ্দ দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সগুলোও রোগী পরিবহনে কাজে লাগেনি বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয় বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে। উদ্দেশ্য ছিল উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের রোগীদের পরিবহনে এটি ব্যবহৃত হবে। তবে সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবহার না হওয়ায় এরই মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটির ইঞ্জিন অকেজো হয়ে গেছে। এর অবকাঠামোগত অবস্থাও জরাজীর্ণ। বর্তমানে এটি মেহেন্দীগঞ্জের মাসকাটা নদীর স্টিমারঘাটসংলগ্ন চরে পড়ে আছে।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি আগে থেকেই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি ধীর গতিতে চলে। উঁচু এবং ঢাকনাওয়ালা হওয়ায় চলার সময় বেশি দোলে।’ এ কারণে রোগীদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দেয় বলে তাঁর ভাষ্য।

অচল, অব্যবহৃত, পরিত্যক্ত

বিকল হওয়ার পর আর ঠিক করা হয়নি সুনামগঞ্জের শাল্লা ও জামালগঞ্জের নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দুটি। এ জেলার ধরমপাশা উপজেলায় ২০১১ সালেও একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল। সেটিও কোনো কাজে আসেনি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। নৌযানটির ইঞ্জিন উপজেলা পরিষদের অন্য কাজে লাগানো হয়েছে। নেত্রকোনার খালিয়াজুরির অ্যাম্বুলেন্স দিয়েও কোনো রোগী পরিবহন করা সম্ভব হয়নি।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি যখন দেওয়া হয়, তখনই এর তলানিতে ছিদ্র ও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর চাঁদপুর সদর উপজেলায় দেওয়া নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি এ পর্যন্ত এক দিনও চলেনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এটি অন্য কোনো হাসপাতালকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর আগেও ২০০৮ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলাকে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের একটি অত্যাধুনিক নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেটিও রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবশ্য এক বছর সেবা দিয়েছিল নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। এটিও বিকল হয়ে হাতিয়ার নলছিরা ঘাটে ডাঙায় পড়ে আছে। এর আগে ২০০৮ সালে এ উপজেলায় আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপজেলা হেলথ কেয়ার প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর মো. রিজওয়ানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা প্রায়োরিটি প্রজেক্ট (অগ্রাধিকার প্রকল্প) ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দ্রুত নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি চালকের পদ তৈরি করা হয়েছে। তবে এখনো চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’ এ ছাড়া নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ নিতে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সঙ্গে আলাপ হয়েছে বলে জানান তিনি।

ধীর গতি ও বেশি খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে রিজওয়ানুর রহমান বলেন, যখন এগুলো কেনা হয়েছিল, তখন বিশেষজ্ঞদের (টেকনিক্যাল এক্সপার্ট) মতামত নিয়েই কেনা হয়েছে। এর বেশি মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।

দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের ৬টিও ‘অচল’

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপেও নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পাচ্ছে না মানুষ। এর একটির বয়স ১৪ বছর, অন্যটি ৬ বছরের পুরোনো। দুটি অ্যাম্বুলেন্স এক দিনের জন্যও রোগী পরিবহন করেনি বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া সবচেয়ে পুরোনো অ্যাম্বুলেন্সটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে একটি ‘মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স বোট’ পায় সন্দীপ উপজেলা প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, সন্দ্বীপ ছাড়াও খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও ভোলা জেলায় মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স বোট দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ এসব বোটের প্রতিটির দাম ছিল কোটি টাকার বেশি।

খুলনা জেলা সদরের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স বোটটি জেলা প্রশাসকের অনুকূলে দেওয়া হয়েছিল। তবে এটি এখন অচল। এ ছাড়া বোট দেওয়া হলেও চালক দেওয়া হয়নি, জ্বালানির ব্যবস্থা কীভাবে হবে বলা হয়নি। এতে এটি চালানো সম্ভব হয়নি।’

‘অর্থের অপচয়’, সেবাবঞ্চিত মানুষ

দুর্গম ও চরাঞ্চলের মানুষকে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নৌপথে রোগী পরিবহনের এসব যানের সেবা সেভাবে কেউ পায়নি। যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া এ প্রকল্প হাতে নেওয়ায় কেবল অর্থের অপচয় হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মো. রুহুল ফুরকান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, আগেই ভাবা দরকার ছিল, জনবল আছে কি না, চালাবে কে, যাদের দিচ্ছেন তারা জ্বালানি খরচ বহন করতে পারবে কি না, রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে কি না। তিনি বলেন, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের উদ্যোগটি অবশ্যই ভালো। কিন্তু চিন্তাভাবনা না করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ না দেওয়ায় এগুলো কাজে আসেনি। মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পায়নি।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদকপ্রতিনিধিরা]