সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ
ছবি: আইএসপিআর

চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

বৈঠকে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল প্রতিশ্রুতি ও অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। গত সোমবার বিকেলে অপারেশন সাপোর্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারের সঙ্গে সেনাপ্রধানের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল বুধবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবারের বৈঠকে সেনাবাহিনীর প্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পরিবহনে বাংলাদেশ বিমানকে তালিকাভুক্ত করার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান। জেনারেল অতুল খারে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ বিমান সফলতার সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পরিবহনে ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়নসহ মানবাধিকার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বশীল ভূমিকার প্রশংসা করেন।

বৈঠকের আলোচনায় বিভিন্ন জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের জনবল আরও বৃদ্ধি, আহত ও নিহত শান্তিরক্ষীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ত্বরান্বিত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনিষ্পাদিত রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধ, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগের ব্যবস্থা, অধিক হারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নির্ধারিত সময়ের পূর্বে প্রতিস্থাপনসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ইউনিট পাঠানোসংক্রান্ত বিষয় প্রাধান্য পায়। এ ছাড়া বৈঠকে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের অপর বাহিনীগুলোর শান্তিরক্ষা অভিযান কার্যক্রমসংক্রান্ত বিবিধ বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

এদিকে মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাগত জ্ঞান, নিয়মানুবর্তিতা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্য পিয়েরে ল্যাক্রুয়া। তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করে বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

ক্রুয়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। আরও বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়েও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। জেনারেল আজিজ জাতিসংঘের ‘পিসকিপিং ক্যাপাবিলিটি রেডিনেস সিস্টেমের’ আওতায় মাত্র ৬০ দিন সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪টি কন্টিনজেন্টসহ মোট ১৫টি কন্টিনজেন্ট মোতায়েন হতে সক্ষম বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেন এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিজিয়ন ও সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানোর ইচ্ছা জানান।

এ ছাড়া শীর্ষ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ও জাতিসংঘ সদর দপ্তরের শান্তিরক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিকসংখ্যক বাংলাদেশি অফিসারের পদায়নের জন্যও তিনি অনুরোধ জানান। একই দিনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাডভাইজার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কার্লোস হামবার্টো লয়টের সঙ্গেও স্বার্থসংশ্লিস্ট বিষয়ে সেনাপ্রধান দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশি সেনাসদস্যদের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রদর্শিত দক্ষতা ও পেশাদারত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল লয়টে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেনারেল আজিজ। বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে পৌঁছালে সেনাপ্রধানকে অভ্যর্থনা জানান রাবাব ফাতিমা এবং শান্তিরক্ষাসহ তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সেনাপ্রধানকে অবহিত করেন। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ সার্বিকভাবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান জেনারেল আজিজ।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে সরকারি সফরে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান গত ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করেন। কাল শুক্রবার তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।