সেমিস্টার পদ্ধতির নিয়ম যথাযথ না মানার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ফল বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে। বিভাগের একাডেমিক কমিটির বৈঠকে বৈষম্যের কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটমুক্ত করতে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা হয়। মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষার মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে ৫০ নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়। ক্লাস চলাকালীন মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল, প্রেজেন্টেশন, ক্লাস উপস্থিতি—এসব মিলিয়ে ‘ইনকোর্সে’ শিক্ষকদের হাতে বরাদ্দ থাকে আরও ৫০ নম্বর।
চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে ‘ইনকোর্সে’র এই ৫০ নম্বরের ফল প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক বলে জানান সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতির নিয়ম না মানার কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সবাই যদি আইন-কানুন মেনে চলে, তাহলে কোনো সমস্যা হয় না।’
বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যের শিকার হওয়া স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ‘খ’ শাখার চার বিষয়ের চার কোর্স শিক্ষকের মধ্যে কেবল একজন চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে ইনকোর্সের ফল প্রকাশ করেছেন। ফল প্রকাশের তিন সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার এক শিক্ষক নোটিশ বোর্ডে ইনকোর্সের নম্বর টানিয়ে দিলে তা ছিঁড়ে আগুন দেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যথাসময়ে ইনকোর্সের ফল দেওয়া না হলে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য কেমন প্রস্তুতি নিতে হবে, তা বুঝতে পারেন না তাঁরা। একই সঙ্গে কোন বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, তা খুঁজে বের করতেও ইনকোর্সের নম্বর পরীক্ষার আগে দেওয়া প্রয়োজন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের জরুরি একাডেমিক কমিটির বৈঠকে গতকাল বুধবার বৈষম্যের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। বৈঠকে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশও করা হয়।
কমিটির একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ফল বৈষম্য হয়েছে। এটি সুস্পষ্ট। ইনকোর্সের নম্বরই এই পরীক্ষায় দুই শাখার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান তাঁরা। পরবর্তী সময়ে যেন এমনটা না হয়, সে জন্য দুই শাখার মধ্যে জ্যেষ্ঠ ও নতুন শিক্ষকদের সমন্বয়, যথাসময়ে ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে এই বৈঠকে। চলমান সমস্যা শেষে একাডেমিক কমিটি একটি বিশেষ বৈঠকে বসে এসব সিদ্ধান্ত নেবে বলেও বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল আমিন বেপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য ও ডিনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ১২ মার্চ প্রথম সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, ‘ক’ শাখার ৯৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৪ জন জিপিএ-৩.৫০ এর বেশি পেয়েছেন। অথচ ‘খ’ শাখার ১৩৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৮ জন এই জিপিএ পেয়েছেন।