সৈয়দ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার
ফাইল ছবি

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে এই তথ্য জানান।

সাঈদ আহমেদ বলেন, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা কারা কর্তৃপক্ষ, ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় বরাবর আজ বৃহস্পতিবার পাঠানো হয়েছে।

এর আগে কায়সারের মামলায় আপিল বিভাগের রায়সহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

কায়সারের অন্যতম আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, আপিল বিভাগের দেওয়া ২৬২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি গতকাল অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড গ্রহণ করেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপির জন্য কায়সারের পক্ষ থেকে আবেদন করা আছে। প্রত্যয়িত অনুলিপি পেলে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হবে। কাদের মোল্লার মামলার রায় অনুসারে, প্রত্যয়িত অনুলিপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করার সুযোগ আছে।

মুক্তিযুদ্ধকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে কায়সারের করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হওয়া নবম মামলা এটি।

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল কায়সারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে থাকা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের দুটিসহ সাতটি অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর সাতটি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং পৃথক তিনটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি আপিল করেন কায়সার। আপিলের ওপর গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শেষে আদালত ১৪ জানুয়ারি রায় দেন। এদিন আদালত রায়ের সংক্ষিপ্তসার ঘোষণা করেন।

আপিলের রায়ের পর তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, তিনটি (৫, ১২ ও ১৬) অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগ ছিল ধর্ষণে সহযোগিতা ও পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা। মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণে সহযোগিতা করার দায়ে প্রথম কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রইল।

ট্রাইব্যুনাল ও আপিলের রায়

ট্রাইব্যুনালের রায়ে ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে সৈয়দ মো. কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৮ ও ১২ নম্বর অভিযোগ ধর্ষণের এবং ১৬ নম্বর অভিযোগ ছিল ২২ গ্রামের ১০৮ জনকে হত্যা ও নিপীড়নের। কায়সারের বিরুদ্ধে ৩,৫, ৬ ও ১০ নম্বর অভিযোগ হচ্ছে হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের।

আপিল বিভাগের রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৫, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। আপিল বিভাগের রায়ে ৬ ও ১০ নম্বর অভিযোগে দণ্ড পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৮ নম্বর অভিযোগে দণ্ড পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৩ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।