সোনারগাঁয়ে ৫০ কোটি টাকার সরকারি জায়গা দখল

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা ঘাট এলাকায় আল মোস্তফা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পাঁচ বিঘা খাসজমি ও একটি খাল ভরাট করে ভবন নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা-কর্মী এ কাজে প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকে জানান, দখল করা জমির দাম প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এম আল-আমিন বলেন, উপজেলার মেঘনা ঘাট এলাকার চর রমজান সোনা উল্লাহ মৌজার আরএস ৩৪০৯ দাগ ১ নম্বর খাস খতিয়ানের নদী শ্রেণীভুক্ত। এই দাগের পাঁচ বিঘা জমি আল মোস্তফা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মোস্তফা কামাল সরকারি অনুমতি ছাড়া বালু দিয়ে ভরাট করে দখল করেন। এরপর চারদিকে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে কারখানা নির্মাণ শুরু করা হয়। তা ছাড়া একটি সরকারি খাল পুরোপুরি ভরাট করে ওই প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে। এতে এলাকায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

কে এম আল-আমিন জানান, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে উচ্ছেদ মামলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করলেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর জহুরা খাতুন গত ৩ জুলাই সরকারি ভূমির দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য মোস্তফা কামালকে চূড়ান্ত নোটিশ দেন। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে সরকারি ভূমি থেকে সব ধরনের স্থাপনা অপসারণ করে নিতে বলা হয়। নোটিশে বলা হয়, তা না হলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। অভিযান পরিচালনার সব ব্যয় দখলদার প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করা হবে। কিন্তু এই নোটিশের পরও সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করা হয়নি।

পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, দখল করা খাস জায়গায় ১৯৯১ ও ২০০৫ সালে ভূমিহীনদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসীদের দিয়ে ওই জায়গা থেকে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে দখল করে নেয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, কারখানার পক্ষে সরকারি জায়গা দখলে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের একাধিক নেতা-কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন বলেন, মেঘনা ঘাট এলাকার একজন প্রভাবশালী যুবলীগের নেতা সরকারি জমি ও খাল দখলে নেতৃত্ব দেন। যুবলীগের ওই নেতার ভয়ে এলাকাবাসী জায়গা দখলের প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।

আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা ভূমিহীন ধনু মিয়া ও নূর মোহামঞ্চদ জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করেছে।

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এই এলাকার সরকারি জমি শুধু আমি দখল করিনি। এ জায়গার পাশের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আমাদের চেয়ে বেশি সরকারি জায়গা দখল করেছে। আমি স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে জায়গা কিনেছি। কেনা জায়গার সঙ্গে কিছু খাসজমি আমাদের প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে এসেছে। আমরা এ জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি খাসজমি ও সরকারি খাল দখল করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুব শিগগির সরকারি জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।