সোহাগের অতিথি তারা

উদ্ধার করা বনবিড়াল ও গন্ধগোকুলের পরিচর্যা করছেন সোহাগ রায়। গত সোমবার বগুড়ার শেরপুরের হুসনাবাদ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা এলাকার একটি আধা পাকা বাড়ির বারান্দার ছাদে সংসার পেতেছিল বনবিড়াল পরিবারটি। একটি ছানাও ফুটিয়েছিল। এর মধ্যেই ২ ফেব্রুয়ারি ঘর সংস্কারের জন্য ছাদ ভেঙে ফেলেন বাড়িওয়ালা। ছাদ ভাঙায় ভেঙে পড়ে বনবিড়ালের বাসাটিও। মা বনবিড়ালটি তখন ছানা রেখে বাইরে। হয়তোবা খাবারের খোঁজে বেরিয়েছিল। আশ্রয়হারা হয়ে পড়ে ১৫ থেকে ২০ দিন বয়সী বনবিড়ালের ছানাটি।

বাসা খুঁজে না পেয়ে আর ফিরতে পারেনি আশ্রয়হারা মা বনবিড়ালটি। মা-হারা ছানাটির দিনরাত কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে স্থানীয় এক কলেজছাত্র এগিয়ে আসেন। খবর দেন পরিবেশ ও বন্য প্রাণী রক্ষায় কাজ করা ‘পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থা’র সভাপতি সোহাগ রায়কে। সোহাগ রায় বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং পরিবেশবাদী সংগঠন তিরের সদস্য।

খবর পেয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি ছানাটি উদ্ধার নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন সোহাগ রায়। শেরপুর উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে বাড়ি সোহাগের।

সোহাগ রায় জানান, বনবিড়ালের ছানাটি মায়ের জন্য প্রচণ্ড কান্নাকাটি করছে। কোনো কিছুতেই কান্না থামছে না। ছানাটিকে ফিডারের মাধ্যমে গাভির দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। তিনি বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সঙ্গে কথা বলেছেন। ছানাটি এমনিতে এখন সুস্থই আছে। কদিন পর সেটিকে রাজশাহীতে বন্য প্রাণী পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। পরে এটিকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হবে।

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান প্রথম আলোকে বলেন, বনবিড়ালের ইংরেজি নাম Jungle Cat আর বৈজ্ঞানিক নাম Felis chaus। শহর ছাড়া গ্রামগঞ্জে যেখানে ঝাউ-জঙ্গল বেশি, সেখানেই বনবিড়াল দেখা যায়। এরা কৃষিবান্ধব। খেতখামারের ক্ষতিকর পোকা খেয়ে কৃষির উপকার সাধন করে। গৃহপালিত মুরগি, মুরগির ছানা, কবুতর প্রভৃতি এদের প্রধান খাদ্য।

এদিকে বনবিড়ালের ছানা উদ্ধারের পরদিনই সোহাগ রায়কে ফোন করে শেরপুরের ভেটেরিনারি সার্জন মো. রায়হান জানান, তাঁর কাছে এক কলেজ কর্মকর্তা একটি গন্ধগোকুল নিয়ে এসেছেন। ফাঁদে পড়ে গন্ধগোকুলটি আহত হয়েছে। প্রাণীটির প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সেটিকে সোহাগের কাছে হস্তান্তর করেন মো. রায়হান।

জানা গেল, শেরপুরের উলিপুর গ্রামের একটি বাড়িতে কবুতরের খোপে ঢুকেছিল গন্ধগোকুলটি। গৃহকর্তা ফাঁদে ফেলে সেটিকে ধরে ফেলেন। এরপর খোঁচাখুঁচিতে সেটি আহত হয়।

ভেটেরিনারি সার্জন রায়হান বলেন, পূর্ণ বয়স্ক গন্ধগোকুলটির ওজন প্রায় ৭ কেজি। ফাঁদে পড়ে পায়ে চোট পায় সেটি। হাসান আমিরুল মোমেনিন নামের এক ব্যক্তি প্রাণীটিকে কাতর অবস্থায় পেয়ে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে গন্ধগোকুলটিকে সেবাযত্নের জন্য সোহাগ রায়ের কাছে দেন তিনি। গন্ধগোকুলটিকে সেবাযত্ন নিয়ে সাগরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল। সেটি সুস্থ হয়েছে।

গন্ধগোকুলটি গতকাল বুধবার বিকেলে শেরপুর বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জঙ্গলে (সামাজিক বনায়নে) ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।