স্তন ক্যানসার নিয়ে লুকোচুরি নয়, স্ক্রিনিং জরুরি

মাসব্যাপী স্তন ক্যানসার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং কর্মসূচির মূল্যায়ন ও সুপারিশ উপস্থাপনবিষয়ক আলোচনা সভা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা। ২৭ নভেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসারে সব চেয়ে বেশি নারীর মৃত্যু হয়। দেশের নারীরা স্তন ক্যানসার নিয়ে কথা বলতে এখনো লজ্জা পান। পরিবারে স্বামী বা অন্য কারও সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন না। চিকিৎসকের কাছে যান একদম শেষ পর্যায়ে, যখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের তেমন কিছু করার থাকে না। তাই এই গোপন করার প্রবণতা বা ট্যাবু দূর করতে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ বাড়াতে হবে। নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিং করতে হবে।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মাসব্যাপী স্তন ক্যানসার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং কর্মসূচির মূল্যায়ন ও সুপারিশ উপস্থাপনবিষয়ক আলোচনা সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম ও আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা ৩২৮১ যৌথভাবে এ আয়োজন করে।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসারে সব চেয়ে বেশি নারীর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কম বয়স বা কর্মক্ষম নারীরা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসকেরা ওই পরিবারকে সহায়তা করতে পারেন। স্ক্রিনিং কার্যক্রম এ জন্যই জরুরি।

ক্যানসার রোগী থাকলে পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক নারী এখন পর্যন্ত পুরুষ অভিভাবক ছাড়া চিকিৎসাকেন্দ্রে আসতে পারছে না। তাই নারীর পরিবারের পুরুষ সদস্যদেরও সচেতনতা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে।

মাহমুদ হাসান বলেন, সরকারের কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকে নারী কর্মী আছেন। এই কর্মীদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। টেকনোলজিস্ট বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে যে ব্যয় করা হয়, তা অনেক কম। দুর্নীতি কমানো এবং স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।

মাসব্যাপী স্তন ক্যানসার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং কর্মসূচির মূল্যায়ন ও বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী চিকিৎসক মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার (রাসকিন)। তিনি বলেন, যথাযথভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলে ক্যানসার শনাক্ত বা স্ক্রিনিং নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হয়। স্ক্রিনিং ব্যথা বা কষ্টদায়ক কোনো প্রক্রিয়া নয়, তা–ও মানুষকে বোঝাতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের চলমান স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি গত ১৫ বছরে লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ১০ ভাগের কম নারীকে এর আওতায় আনতে পেরেছে। তাই হাসপাতালভিত্তিক সেবা থেকে জনগোষ্ঠী বা সমাজভিত্তিক সেবার উত্তরণ এবং ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কৌশলপত্র ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি বলেও উল্লেখ করেন হাবিবুল্লাহ তালুকদার। দরিদ্র ক্যানসার রোগীদের জন্য একটি সমন্বিত ক্যানসার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের অন্তর্ভুক্ত ১৭টি সংগঠন ও রোটারির ৪১টি ক্লাব মিলে গত ১০ অক্টোবর নবমবারের মতো সারা দেশে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস, মাসব্যাপী স্ক্রিনিং কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।

যথাযথভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলে ক্যানসার শনাক্ত বা স্ক্রিনিং নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হয়। স্ক্রিনিং ব্যথা বা কষ্টদায়ক কোনো প্রক্রিয়া নয়
মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার, বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী চিকিৎসক

আলোচনা সভার বিশেষ অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রোগীদের বলি, আসুন, চিকিৎসা নেন, সুস্থ হবেন। শুধু সরকারের একার পক্ষে মানুষকে ক্যানসার নিয়ে সচেতন করা সম্ভব নয়। এ কাজে ব্যক্তি ও বেসরকারি সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। স্তন না কেটে চিকিৎসা করার জন্য স্ক্রিনিং কার্যক্রম জরুরি। ক্যানসার রোগী থাকলে পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক নারী এখন পর্যন্ত পুরুষ অভিভাবক ছাড়া চিকিৎসাকেন্দ্রে আসতে পারছে না। তাই নারীর পরিবারের পুরুষ সদস্যদেরও সচেতনতা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে।

প্যানেল আলোচক হিসেবে কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টারের চেয়ারপারসন গাইনি অনকোলজিস্ট অধ্যাপক সাবেরা খাতুন বলেন, কমিউনিটি অনকোলোজি সেন্টার মাসব্যাপী স্ক্রিনিং কার্যক্রমে সহায়তা করেছে। ৫৩০ জন নারী স্ক্রিনিং কার্যক্রমে অংশ নেন। যে নারীদের ক্যানসার শনাক্ত হয়, তাঁদের বিনা মূল্যে ও কম মূল্যে বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

স্তন ক্যানসার সচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মানসুরা হোসাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাদিরা কিরন, শাহনাজ পলি, শাহনাজ শারমীন এবং সেবিকা দেবনাথ এই পাঁচজন নারী সাংবাদিককে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। এ ছাড়া তিনজন ক্যানসার সারভাইভার, দুজন সংগঠক ও সরকারি বেসরকারি পাঁচটি সংগঠন/প্রতিষ্ঠানকে কৃতজ্ঞতা স্মারক প্রদান করা হয়।