স্তন্যদানে কোভিডে আক্রান্ত মায়ের করণীয়

মাতৃত্ব এক অনন্য অনুভূতি। মা ও শিশুর বন্ধনের মতো আবেগময়তা সারা জীবনেও অন্য কোনো সম্পর্কের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। মায়ের গর্ভে তিল তিল করে বেড়ে ওঠা শিশু জন্মের পরও নির্ভরতা পায় মায়ের স্পর্শে। মায়ের দুধেই বাড়তে থাকে শিশু, মায়ের দুধ খেয়েই শক্তিশালী হয়ে ওঠে তার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। তবে করোনাকালে শিশুকে স্তন্যদানের ক্ষেত্রে নানান দ্বিধায় ভুগতে পারেন মা ও তাঁর আপনজনেরা। এসব দ্বিধা দূর করতে এবং মায়েদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে গত শনিবার মাদারস হরলিকস নিবেদিত ‘স্নেহের মাতৃত্ব’ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ‘স্তন্যদানের ক্ষেত্রে কোভিড আক্রান্ত মায়ের করণীয়’ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দেন ঢাকার ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ও শিশুরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মানিফা আফরিন এবং অভিনয়শিল্পী কাজী নওশাবা। একযোগে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।

মানিফা আফরিন বলেন, লক্ষণবিহীন কোভিড পজিটিভ মায়ের শিশুকে সরাসরি স্তন্যদানে কোনো বাধা নেই। তবে স্তন্যদানের সময় মাকে অবশ্যই সার্জিক্যাল মাস্ক পরতে হবে, স্তন্যদানের আগে ও পরে নিয়মমাফিক হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। স্তন্যদানের আগে মায়ের পোশাক বদলে নেওয়া উচিত।

তবে কোভিড পজিটিভ মায়ের সঙ্গে একই কক্ষে খুব বেশি সময় ধরে শিশুকে রাখা ঠিক নয়, কেবল স্তন্যদানের সময় মা ও শিশু একই সঙ্গে থাকবেন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত যেসব মায়ের কোভিডের লক্ষণ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সন্তানকে সরাসরি মায়ের কাছে নিয়ে বুকের দুধ না দেওয়াই ভালো। অর্থাৎ, এমন পরিস্থিতিতে একজন মা নিজের বুকের দুধ একটি পরিষ্কার পাত্রে সংগ্রহ করবেন এবং তাঁর কাছ থেকে পরিবারের এমন একজন তা সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রহণ করবেন, যিনি নিজে কোভিড-১৯ আক্রান্ত নন। এই ব্যক্তি যখন শিশুকে দুধটা খাওয়াবেন, তখনো তিনি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেবেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। সুযোগ থাকলে অন্য একজন স্তন্যদায়ী মা সরাসরি ওই শিশুটিকে স্তন্যদান করতে পারেন। নইলে তিনিও আলাদাভাবে তাঁর বুকের দুধ সংগ্রহ করে দিতে পারেন, এ ক্ষেত্রেও একই রকম সতর্কতামূলক নিয়ম মেনে চলতে হবে।

বাড়ির কোনো সদস্য কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হলে মায়ের কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। যে মা করোনা আক্রান্ত নন, কিন্তু বাড়িতে কোভিড রোগী আছে, তাঁদের থেকে মা ও শিশুকে আলাদা রাখতে হবে। বাড়ির অন্য সবাই আক্রান্ত হলে মা তাঁর শিশুকে নিয়ে নিজেই আইসোলেশনে থাকবেন। প্রয়োজনে তাঁকে তাঁর ঘরটি থেকে বের হতে হলেও অবশ্যই তিনি মাস্ক পরবেন এবং কোভিড-১৯ প্রতিরোধের অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মেনে চলবেন; মাকে সাহায্যকারী কোনো ব্যক্তির প্রয়োজন হলে এমন কাউকে বেছে নিতে হবে, যিনি কোভিড আক্রান্ত নন।

কাজী নওশাবা জানালেন নিজের মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা। করোনাকালে নিজের শিশুসন্তানকে নিরাপদ ও হাসিখুশি রাখতে সচেষ্ট এই মা। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাচ্ছেন না একেবারেই। পরিবারের সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো মেনে চলেন তিনি। শিশুকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখাটাও খুব জরুরি বলে শিশুকে নানান কিছুতে ব্যস্ত রাখেন তিনি। আনন্দময় সময় উপহার দিতে চেষ্টা করেন তাঁর সন্তানকে। করোনা প্রেক্ষাপট ছাড়াও যেকোনো সময় একজন মা তাঁর সন্তানকে স্তন্যদান করতে গিয়ে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।

স্তন বা স্তনবৃন্তে কোনো সমস্যা হতে পারে, দুধের পরিমাণ কম আসছে বলে মনে হতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা প্রথমবারের মতো মা হয়েছেন, তাঁরা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দ্বিধায় পড়েন। এসব সমস্যা ও সেগুলোর সমাধান নিয়েও আলোচনা হয় অনুষ্ঠানে। শিশু কাঁদলেই তা শিশুর ক্ষুধার বহিঃপ্রকাশ নয়—এ বিষয়টি বুঝতে হবে শিশুর পরিবারের সবাইকেই। মাকে মানসিক শক্তি জোগানো এবং সন্তান জন্ম নেওয়ার আগে থেকেই তাঁর অনাগত শিশুর জন্য মানসিক প্রস্তুতিতে সাহায্য করার দায়িত্ব নিতে হবে মায়ের আপনজনদেরই।