স্থলবন্দরে চলাচলই দায়

সোনাহাট স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও সংযোগ সড়ক। (ইনসেটে) ভূরুঙ্গামারী–সোনাহাট বন্দর সড়কের ছিটপাইকের ছড়ামুখী শহিদ মোড় এলাকা।  সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
সোনাহাট স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও সংযোগ সড়ক। (ইনসেটে) ভূরুঙ্গামারী–সোনাহাট বন্দর সড়কের ছিটপাইকের ছড়ামুখী শহিদ মোড় এলাকা। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়ক ও লোহার সেতু দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রাস্তার বিভিন্ন অংশে খোয়া উঠে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে এবং সেতুটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় তা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনায় স্থলবন্দরের সঙ্গে সারা দেশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্র জানায়, ভূরুঙ্গামারী জিরো পয়েন্ট থেকে সোনাহাট স্থলবন্দরের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ২০০৭ সালে সড়কটি মেরামত করা হয়। এরপর আর রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় সম্পূর্ণ রাস্তাই চলার অনুপযোগী হয়ে গেছে। বিশেষ করে দুই বছর আগে ভূরুঙ্গামারী স্থলবন্দরটি চালু হওয়ায় এ রাস্তা দিয়ে মালামাল পরিবহনকারী শত শত ট্রাক প্রতিদিন চলাচল করছে। এতে খোয়া উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে সড়কটি। সড়কটির মধ্যবর্তী স্থানে দুধকুমার নদের ওপর ব্রিটিশ আমলে তৈরি লোহার সেতুটির অবস্থাও খুব খারাপ। গত বছর বন্যার সময় পাশের নদের ভাঙনে সেতুটি হুমকির মুখে পড়ে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বোমা হামলায় সেতুটির পূর্বদিকের কিছু অংশ ভেঙে যায়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সেতুটি মেরামত করে হালকা যানবাহন এবং মানুষের চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু এখন সেতুটি আবার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, খানাখন্দ ও গর্তে ভরা সড়কটি দিয়ে কয়লা এবং পাথরবোঝাই ট্রাকগুলো হেলেদুলে আসছে। সড়কটির এমন দশা যে মোটরসাইকেলও ঠিকমতো চলতে পারছে না। কথা হয় ট্রাকচালক আবদুল ছালামের সঙ্গে। তিনি গাড়ি থামিয়ে বলেন, ‘এই পথে আর আসুম না। কিছুক্ষণ চলার পর গাড়ির চাকা আটকায়। স্থলবন্দর থেইকা জিরো পয়েন্টে যাইতে ২০ মিনিট সময় লাগার কথা। সেখানে লাগতেছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।’
আরেক ট্রাকচালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘এ রাস্তা দিয়া আসতে জান বার হয়া যায়। আর সোনাহাট ব্রিজ পার হইতে বুক কাঁপে। কখন যে ভাঙি যায়...।’ তিনি আরও বলেন, ব্রিজের ওপর মালবোঝাই ট্রাক উঠলেই কাঁপে। ব্রিজটি শত বছরের পুরোনো বলে ওই চালক বলেন।
নাগেশ্বরী কেদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ খ ম ওয়াজিদুল কবীর বলেন, এ রাস্তা দিয়ে শুধু স্থলবন্দর নয়, সাতটি ইউনিয়নের মানুষ ও যানবাহনও চলাচল করে। রাস্তার এই অবস্থায় ভ্যান, রিকশা, অটোরিকশা, পিকআপ ইত্যাদির চালকেরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সেই সঙ্গে ইউনিয়নগুলোর হাটবাজারে বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা কুড়িগ্রাম, ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী থেকে মালামালও পরিবহন করতে পারছেন না।
ফুটানী বাজার এলাকার বাসিন্দা এবং ভূরুঙ্গামারী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক লতিফুর রহমান বলেন, সড়ক ও সেতুর কারণে ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে যানবাহন চালকেরা পর্যন্ত সমস্যায় আছেন।
সোনাহাটের স্থায়ী বাসিন্দা ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই মাস্টার বলেন, ভাঙা আর গর্তের কারণে সড়কটি দিয়ে চলাচল করা এখন আর কারও জন্য নিরাপদ নয়। স্থলবন্দরের স্বার্থে মেয়াদ উত্তীর্ণ সোনাহাট ব্রিজের পরিবর্তে নতুন ব্রিজ নির্মাণ এবং পুরো সড়কটি মেরামত করা দরকার।
কুড়িগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সরকার রাকীব আহম্মেদ বলেন, সম্পূর্ণ সড়কটিই চলাচলের অনুপযোগী। ট্রাক আসতে চায় না। এলেও ভাড়া বেশি গুনতে হয়। আগে মালবোঝাই একটি ট্রাক ঢাকা যেতে ভাড়া নিত ২০ হাজার টাকা। এখন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা গুনতে হয়। ফলে হাজার হাজার টন পাথর, কয়লা বন্দরে স্তূপ হয়ে আছে। এতে স্থলবন্দরের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে।
আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ. রাজ্জাক বলেন, গত বছর এ বন্দর থেকে নয় কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এবার রাস্তা ও সেতুর কারণে আয় কমে গেছে। বন্দরটি ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। রাস্তা খারাপের কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা আসতে চান না। জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি মেরামত করা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম সড়ক ও সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, অনেক আগেই জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। এখনো অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন পেলে কাজ করা যাবে বলে জানান তিনি।