স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্তদের সম্মাননা উদীচীর
সমবেত জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর শোনা গেল ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ গানটি। সঙ্গে সমবেত নৃত্য। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উদীচীর ‘গুণীজন সম্মাননা, আনন্দ আয়োজন’ অনুষ্ঠানটি শুরুতেই মূল উদ্দেশ্যের মেজাজ পেতে দেরি হলো না। এখানে গান-নাচ-কবিতা আর শংসাবচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজনদের সম্মাননা জানাল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত সম্মাননা অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত ও উদীচীর সংগঠন সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী সংগীত বিভাগের শিল্পীরা। এরপর ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে আমন্ত্রিত গুণীজনদের মঞ্চে আহ্বান করেন উদীচীর নৃত্যশিল্পীরা। এরপর শুরু হয় সম্মাননা জ্ঞাপন পর্ব।
এ পর্বের শুরুতেই ২০১৮ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য বুদ্ধিজীবী রণেশ মৈত্রর প্রতি অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য মৌমিতা জান্নাত। এরপর গুণী রণেশ মৈত্রের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ। আর উত্তরীয় পরিয়ে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। এরপর সম্মাননা জানানো হয় ২০১৮ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য বুদ্ধিজীবী নাট্যকার নিখিল সেনকে। প্রয়াত নিখিল সেনের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর ছেলে সুজয় সেন। তাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ। আর উত্তরীয় তুলে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। এরপর একে একে সম্মাননা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং বিশিষ্ট অভিনেতা ও বাচিক শিল্পী আসাদুজ্জামান নূর; ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক কাজী মিসবাহুন নাহার (ডা. কাজী তামান্না) এবং কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক; ২০১৮ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার সুজেয় শ্যাম, রবিউল হোসেন এবং ২০১৯ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব লাকি ইনাম ও বিশ্বজিৎ ঘোষকে। তবে, শারীরিক অসুস্থাসহ নানা কারণে এদিনের আয়োজনে উপস্থিত হতে পারেননি সেলিনা হোসেন, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার সুজেয় শ্যাম এবং রবিউল হোসেন। উদীচীর পক্ষ থেকে সম্মাননা তুলে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি হাবিবুল আলম, প্রবীর সরদার, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, শিবাণী ভট্টাচার্য্য, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে গুণীজনদের প্রিয় গান পরিবেশন করেন শিল্পী ইকবাল খোরশেদ, মাসুম আজিজুল বাশার, মোস্তাফিজুর রহমান তুর্য, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, এ টি এম জাহাঙ্গীর, সুরাইয়া পারভীন। এছাড়া, আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন, পুষ্পিতা রায়, মিজানুর রহমান সুমন, মির্জা আতিকুজ্জামান, শিখা সেনগুপ্তা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম জানান, যাঁদের সযত্ন পরিচর্যায় এবং মেধা ও মননের প্রত্যক্ষ অবদানে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আজ বিকশিত হয়ে উঠেছে, তাঁদেরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ২০১৮ ও ২০১৯ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক’-এ ভূষিত হয়েছেন। সেই সব গুণীকে সম্মাননা জানানোর লক্ষ্যে উদীচী আয়োজন করেছে ‘গুণীজন সম্মাননা আনন্দ আয়োজন’।