স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব প্রস্তুতি থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান ২০১৮ আলফা এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার (ডিইও) ২০২০ ব্রাভো ব্যাচের কোর্স সমাপনী রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সব রকম প্রস্তুতি রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব রকম প্রস্তুতি আমরা নেব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান ২০১৮ আলফা এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার (ডিইও) ২০২০ ব্রাভো ব্যাচের কোর্স সমাপনী রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের সব ধরনের উদ্যোগ যেন থাকে এবং প্রশিক্ষণ থাকে, সেভাবে আমরা আমাদের প্রতিটি বাহিনীকে গড়ে তুলছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এই স্বাধীন দেশ সব সময় বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। আমরা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব রকম প্রস্তুতি নেব।’

শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়—এই পররাষ্ট্রনীতি নিয়েই আমরা চলব। আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ইতিমধ্যে ২৭টি যুদ্ধজাহাজ সংযোজন করেছে। ২০১৭ সালে নৌবহরে অত্যাধুনিক দুটি সাবমেরিন সংযোজন করেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে এভিয়েশন সিস্টেম সংযোজনসহ সরকার এই বাহিনীকে একটি পূর্ণ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে।

পাশাপাশি আরও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য নেভাল একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং নৌবাহিনীর সদস্যদের আবাসন সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর খুলনা শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীকে প্রদানের তথ্য উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড দুটিও নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। লক্ষ্য হলো, আমাদের নিজস্ব শিপইয়ার্ডেই আমরা যুদ্ধজাহাজও তৈরি করব, যার কাজ ইতিমধ্যে কিছু কিছু শুরুও হয়েছে।’

তা ছাড়া কক্সবাজার ও পেকুয়াতে সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে এবং রামনাবাদে নৌবাহিনীর ঘাঁটি সম্প্রসারণের কাজ চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান ২০১৮ আলফা এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার (ডিইও) ২০২০ ব্রাভো ব্যাচের কোর্স সমাপনী রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন
ছবি: পিআইডি

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের সমুদ্রসম্পদকে যেন উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারি, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। তিনি মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় প্রশিক্ষণে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

মিডশিপম্যান মেহরাব হোসেন অমি সেরা চৌকস মিডশিপম্যান হিসেবে সোর্ড অব অনার লাভ করেন। অনুষ্ঠানে মিডশিপম্যান ও ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসারদের শপথবাক্যও পাঠ করানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী নবীন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের ২০৪১ সালের উন্নত–সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্নসারথি আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আজকের কমিশনপ্রাপ্ত নবীন অফিসার সে সময় নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। তখন আপনারাই হবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কাজেই এ দেশের লক্ষ্য-২০৪১ অর্জনের ক্ষেত্রে আপনারাই মূল সৈনিক হিসেবে কাজ করবেন এবং দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, চাকরি বা ব্যক্তিজীবনের যে কোনো সংকট অতিক্রমে আমাদের এই নবীন অফিসাররা সবচেয়ে বেশি দক্ষ হবে। তোমরা যেন উন্নত জীবন যাপন করতে পারো এবং দেশের সেবা করতে পারো, সে জন্য আমার দোয়া থাকল তোমাদের জন্য।’

শেখ হাসিনা এ সময় জাতির পিতার নির্দেশনা সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘যে জাতি নিজেকে সম্মান করতে পারে না, আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না, সে জাতি দুনিয়ায় কোনো দিন বড় হতে পারে না। সে জন্য আজকে আমরা আত্মমর্যাদাবিশিষ্ট জাতি হিসেবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাস করতে চাই। আমরা অন্য কারও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। অন্য কেউ আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক, তাও আমরা সহ্য করব না। আমরা এই নীতিতেই বিশ্বাসী।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বানের পুনরুল্লেখ করেন।