স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র সরবরাহের প্রস্তাব বাতিলের দাবি

তথ্য মন্ত্রণালয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চমূল্যে স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রের ১৫ খণ্ড সরবরাহের প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। একই সঙ্গে তারা দলিলপত্র ছাপাসংক্রান্ত আইনি জটিলতা নিষ্পত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

গতকাল সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নিয়ে ৪৪ কোটি টাকার বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রকাশক সমিতি এই বিবৃতি দিয়েছে। এই সমিতিতে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল), সাহিত্য প্রকাশ, আগামী, অ্যাডর্ন, অনন্যা, সময়, অন্য প্রকাশ, দিব্য প্রকাশ, বিদ্যা প্রকাশসহ বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে। সমিতির নির্বাহী পরিচালক মিলনকান্তি নাথ বিবৃতিতে সই করেন।

এতে বলা হয়েছে, দেশের বরেণ্য ঐতিহাসিক ও বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে সরকারি অর্থায়নে প্রকাশিত স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র গ্রন্থাবলীতে মুক্তিযুদ্ধের ৬ দফা ও ১১ দফাসহ বিভিন্ন দাবি, রাজনৈতিক দলের ইশতেহার, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বিবৃতি, স্বাধীনতার ঘোষণা, দেশে ও বিদেশের পত্রিকায় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিবেদন, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়ান, নিষ্ঠুরতার শিকার মানুষের ভাষ্য ইত্যাদি হাজারো তথ্যমূলক দলিল সন্নিবেশিত হয়েছে। ১৫ খণ্ডের এই দলিল সরকারি সম্পদ, কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এগুলোর একচ্ছত্র মালিকানা দাবি করতে পারে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি প্রকাশনা সংস্থা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এককালীন চুক্তি ব্যবহার করে এসব দলিলপত্র মুদ্রণ, প্রকাশনা ও বাজারজাতকরণের একচ্ছত্র মালিকানার দাবিদার হয়ে উঠেছে। তারা উচ্চমূল্যে ১৪ কোটি টাকা মূল্যের দলিলপত্র বিভিন্ন স্কুলে সরবরাহে তৎপর হয়ে উঠেছে।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রের সেট সরবরাহের প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রকাশক সমিতি থেকে বলা হয়েছে, দলিলপত্রের বৈধ অধিকারের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। বিষয়টির সুরাহার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে উদ্যোগী এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আদালতে বৈধ অধিকারের বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৫ খণ্ডের সেট সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিক হবে না। তদুপরি স্কুলপর্যায়ে এসব দলিলপত্র সরবরাহের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সমিতি। বলা হয়েছে, এসব দলিলপত্র ব্যবহারের জন্য উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষাগত মান প্রয়োজন এবং বিশেষজ্ঞরা সেই অভিমত ইতিমধ্যে দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্কুলে ২৫ হাজার সেট ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ সরবরাহের বদলে ওই অর্থে মুক্তিযুদ্ধ, এর ঐতিহাসিক পটভূমি, বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের বিচার, প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য ইত্যাদি বিষয়ে স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপযোগী প্রকাশিত বই সরবরাহের দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, এটি করা হলে স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত হতে পারবে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের প্রকাশকেরা প্রণোদনা পাবেন আর সরকার বড় ধরনের কেলেঙ্কারির হাত থেকে রক্ষা পাবে।