স্বামীর লাশ দাফন করে বাড়ি ফেরা হলো না জাহিদার

মাত্র পাঁচ দিন আগে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন জাহিদা খাতুনের (৪৫) স্বামী। স্বামীর লাশ দাফন করতে সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে শ্রীমঙ্গলে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু স্বামীর লাশ দাফন করে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। গতকাল সোমবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় মারা গেছেন তিনি।

দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনে জাহিদার সঙ্গে তাঁর তিন সন্তান ইমন (১৮), সুমি (২০), মীম (৭) এবং মা সুরাইয়া খাতুনও (৬৫) ছিলেন। তাঁরা সবাই গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে মীমকে কুমিল্লার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা রাজধানীর শ্যামলীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

নিহত জাহিদার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাঁর স্বামী মুসলিম মিয়া (৫১) চট্টগ্রামের একটি জাহাজ কারখানায় কাজ করতেন। গত ৭ নভেম্বর কারখানায় এক দুর্ঘটনায় মারা যান মুসলিম মিয়া। স্বামীর লাশ দাফন করতে সন্তানদের নিয়ে গত শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের গাজীপুরে শ্বশুরবাড়িতে যান জাহিদা। দাফন শেষে সোমবার রাতে শ্রীমঙ্গল থেকে উদয়ন এক্সপ্রেসে করে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন। ফেরার পথে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি নিহত জাহিদার মেয়ে সুমি। ছবি: সংগৃহীত
আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি নিহত জাহিদার মেয়ে সুমি। ছবি: সংগৃহীত

একই ট্রেনে ছিলেন নিহতের বড় ছেলে সুমন মিয়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুমনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম ট্রেনের ড বগিতে। আমার মা, ভাই-বোন ও নানি ছিল ঝ বগিতে। সোমবার গভীর রাতে ট্রেনটি বিকট শব্দে ঝাঁকি দিলে আমার ঘুম ভেঙে যায়। পরে আমার মায়ের ছিন্নভিন্ন লাশ শনাক্ত করে নানার বাড়িতে দাফন করি।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাহিদা খাতুনের বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে পরিবারের দুজন সদস্যকে হারিয়ে সবাই শোকে বিহ্বল। পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। জাহিদা খাতুনের ননদ জ্যোৎস্না বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ভাইকে হারিয়েছি। পাঁচ দিনের মাথায় এখন ভাবিকেও হারালাম। আমার ভাইয়ের সন্তানগুলো এতিম হয়ে গেল।’

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৪৮ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। আর আহত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।