স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়িতে বৈসাবির প্রস্তুতি

পাহাড়ে চলছে এখন বৈসাবির প্রস্তুতি। বিপণিবিতান খোলার পর শুরু হয়েছে কেনাকাটা। বনরূপা মার্কেট, রাঙামাটি, ৯ এপ্রিল
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই ১২ এপ্রিল থেকে পাহাড়ের প্রধান উৎসব বৈসাবি শুরু হচ্ছে। গত বছরও করোনার কারণে উৎসব হতে পারেনি। পাহাড়ের বাসিন্দাদের আশা ছিল, এ বছর বাড়তি আয়োজনে সেটা পুষিয়ে নেবেন।

তবে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সেটা হচ্ছে না। তিন পার্বত্য জেলাতেই উন্মুক্ত স্থানে এবারও কোনো আয়োজন হচ্ছে না। এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া বৈসাবির সাংস্কৃতিক ও লোকজ খেলাধুলার আয়োজনও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে একেবারেই রংহীন হচ্ছে না উৎসব। দোকান ও বিপণিবিতান খোলা থাকায় বৈসাবির কেনাকাটা করেছেন বাসিন্দারা। বাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব করার প্রস্তুতিও চলছে।

বান্দরবান

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় বান্দরবানে এবার বৈসাবির মঙ্গল শোভাযাত্রা, ফুল ভাসানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলাসহ বিভিন্ন আয়োজন বাতিল হয়েছে। কিন্তু বছরের বিদায়-বরণের কেনাকাটা, ফুলের সাজে ঘরবাড়ি সাজানোর প্রস্তুতি চলছে। আগামী সোমবার (১২ এপ্রিল) ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে চার দিনের বৈসাবি উৎসব শুরু হবে জেলায়।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের (কেএসআই) পরিচালক মংনুচিং মারমা জানিয়েছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় জনসমাগম হয়, এমন কোনো আয়োজন করা যাবে না। এ জন্য সাংগ্রাইং উৎসব পারিবারিকভাবে উদযাপনের জন্য কমবেশি প্রস্তুতি চলছে। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসরণে আগামী সোমবার চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের ফুল বিজু। বর্মি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী মারমা, ম্রো, খুমি, খেয়াং ও চাকদের ফেইনসোয়ে (ফুল সাংগ্রাইং) অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার। তরুণ-তরুণীদের ফুল ভাসানো উৎসব না হলেও বাড়িঘর ফুলে ফুলে সাজানোর প্রস্তুতি চলছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বৌদ্ধবিহারে ছইং (ভিক্ষুমণ্ডলীর জন্য খাবার) প্রদান, ১৪ এপ্রিল বুদ্ধমূর্তি স্নানের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেছেন, বাইরে কোনো ধরনের উৎসব আয়োজন না করে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার ও প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সীমিত পরিসরে বাড়িঘরে যে যাঁর মতো উৎসব করবেন। তবে সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি জেলায় বৈসাবি উপলক্ষে চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ লেগেছে। তবে লকডাউনের কারণে উৎসব সীমিত হয়ে পড়েছে বাড়িতে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হওয়া লোকজ খেলাধুলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, এ বছর বৈসাবি উপলক্ষে প্রতিবছরের চেয়ে বৃহৎ আকারে আয়োজনের চিন্তা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা হচ্ছে না। জেলা পরিষদের সব আয়োজন বাদ দেওয়া হয়েছে।
লকডাউনের কারণে এবার ১২ এপ্রিল খবংপুড়িয়া এলাকায় ঐতিহ্যবাহী ফুল ভাসানোর অনুষ্ঠান হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রুপনা চাকমা বলেন, প্রতিবছর বৃহৎ আকারে ফুল ভাসানোর উৎসব হলেও এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হবে না। সীমিত আকারে নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেউ ফুল ভাসাতে পারেন, তবে কোনো প্রকার জনসমাগম করে নয়।
ত্রিপুরাদের পাড়ায় পাড়ায় এবার আর ঢোল, মাদল আর বাঁশির শব্দ শোনা যাবে না। হবে না কোনো গড়িয়া নাচ। বৈসু উপলক্ষে প্রতিবছর খাগড়াপুর এলাকায় মাঠে বৈসু মেলা, সাংস্কৃতিক উৎসব এবং শোভাযাত্রার আয়োজন করা হলেও এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে বাতিল করা হয়েছে।
মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবে জলকেলিতে এবারও ভিজবে না কেউ। পালন করা হবে না কোনো উৎসব। তবে সীমিত পরিসরে বাড়িতেই উৎসব হবে।
সীমিত আকারে বৈসাবি পালন করা হলেও দোকান ও বাজার খুলে দেওয়ার পর দেখা গেছে বিপুলসংখ্যক ক্রেতার সমাগম। আজ খাগড়াছড়ি বাজার, সেলিম মার্কেটসহ নানা বাজারে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।

রাঙামাটি

রাঙামাটিতে এ বছর সীমিতভাবে বৈসাবি উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পাহাড়িরা। আজ থেকে বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার পর কেনাকাটা করতে ভিড় জমিয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাঙামাটি শহরে বিভিন্ন হাটবাজার ও বিপণিবিতানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
পাহাড়িরা বলছেন, করোনার কারণে গত বছর বৈসাবি উদযাপন সম্ভব হয়নি। তাই এবার সীমিত পরিসরে ঘরোয়াভাবে উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। তবে বেশ কিছু গ্রামে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে বৈসাবি উৎসব ঘরোয়াভাবে চাইলে উদযাপন করতে পারবেন। তবে জনসমাগম হয়, এমন কোনো কিছু করা যাবে না। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া আছে।