সড়ক আইনের নমনীয় প্রয়োগেও তাঁরা অসন্তুষ্ট

নতুন সড়ক আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় তাঁরা অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচলে বাধা দেন। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। গতকাল বেলা একটায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিটি গেট এলাকায়।  ছবি: সৌরভ দাশ
নতুন সড়ক আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় তাঁরা অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচলে বাধা দেন। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। গতকাল বেলা একটায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিটি গেট এলাকায়। ছবি: সৌরভ দাশ

রাজধানীর ফার্মগেটে অটোরিকশাচালক মো. ইয়াছিনের লাইসেন্স ছিল না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে ৫০০ টাকা জরিমানা করে লাইসেন্স করে নিতে বলেন। গতকাল বুধবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ সাদিয়া তাজনীন বললেন, নতুন আইনের ধারণা দিতে ইয়াছিনের ওপর পুরোপুরি আইন প্রয়োগ করা হয়নি। নতুন আইনে চালকের লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার এক বছরের বেশি সময় পর গত ১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মৌখিকভাবে আইনের প্রয়োগ দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত সোমবার থেকে বিআরটিএ রাজধানী ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে আইনের প্রয়োগ শুরু করে। তবে পুলিশ এখনো মামলা দিচ্ছে না, কাউকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি।

আইনের বেশির ভাগ ধারাতেই সর্বোচ্চ শাস্তির কথা বলা আছে, সর্বনিম্ন শাস্তির উল্লেখ নেই। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালালে জরিমানা ৩ মাস কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা। অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা। জোরে হর্ন বাজালে শাস্তি ৩ মাস কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা। ফিটনেস সনদ ছাড়া গাড়ি চালানোর শাস্তি ৬ মাস জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা।

শ্রমিকদের যত দাবি
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নতুন সড়ক আইন সংশোধনসহ ৯ দফা দাবিতে সারা দেশে গতকাল থেকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ধর্মঘট পালন করছে। বিভিন্ন জেলার শ্রমিকদের একক কোনো দাবিদাওয়া নেই। তবে সবার মূল দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে শাস্তির অজামিনযোগ্য যে ধারা রয়েছে, তা জামিনযোগ্য করতে হবে। দুর্ঘটনার দায়ে শুধু চালককে দায়ী করা যাবে না। তদন্তকাজে পুলিশের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট, এমনকি মালিক-শ্রমিকদেরও সম্পৃক্ত করার দাবি করেছে তারা। চালকের লাইসেন্স না থাকলে বা ভুয়া লাইসেন্সধারীদের বিরুদ্ধে যে কারাদণ্ড ও জরিমানার কথা উল্লেখ রয়েছে, তা কমানোরও দাবিও শ্রমিকদের।

কোনো কোনো জেলার শ্রমিকনেতারা বলছেন, দুর্ঘটনার দায়ে চালকদের মৃত্যুদণ্ড হবে। তবে নতুন আইনে মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান নেই। ফৌজদারি আইন অনুসারে তদন্তের সময় যেকোনো ধারা পরিবর্তন হয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির দণ্ড হতে পারে। আগের আইনেও তা ছিল।

পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের দাবি, সব জেলা শহর ও মহাসড়কের পাশে, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্থানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড নির্মাণ করে দিতে হবে। টার্মিনাল করার আগে ভুল পার্কিংয়ের মামলা দেওয়া বা গাড়ির রেকারিং করা যাবে না। আইনে বলা আছে, অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

এ ছাড়া ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ তাদের ৯ দফা দাবির মধ্যে আইনের বাইরে কিছু কিছু দাবি তুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ‘সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা কমিটি’ সড়ক পরিবহন আইনশৃঙ্খলা কমিটি, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের গঠিত যেকোনো পণ্য পরিবহনসংশ্লিষ্ট কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
বিআরটিএ গতকাল ঢাকায় সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। পুলিশের সহায়তায় ফার্মগেট, উত্তরা, শ্যামলী, ডেমরা, আশুলিয়া, রূপনগর ও খিলগাঁও এলাকায় এসব আদালত পরিচালিত হয়। সব মিলিয়ে মামলা হয়েছে ৩৮টি। জরিমানা আদায় হয়েছে ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা।

দুপুর ১২টার দিকে ফার্মগেটে পুলিশ বক্সসংলগ্ন রাস্তায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ সাদিয়া তাজনীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত অভিযানে সড়ক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখতে পান মো. হাসানের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় (প্রাইভেট) মিটার নেই। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসানকে ৩০০ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বলেন, তিনি যেন দ্রুত মিটার লাগিয়ে নেন।