সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি হবে রাতে

বর্ষা মৌসুমে (মে থেকে সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কোনো সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। খননকাজ করতে হবে রাতের বেলা, দিনে কোনো খোঁড়াখুঁড়ি নয়। কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খননকাজ শুরু করলে মূল খরচের ৫ গুণ জরিমানা গুনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলেও দিতে হবে জরিমানা।

সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয় তদারকি এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করবে ‘ওয়ানস্টপ সমন্বয় সেল’। সড়ক খননের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) তৈরি করতে হবে এবং তা সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। আর বছরের খনন পরিকল্পনা এপ্রিল মাসের মধ্যে সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে।

সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনগণের ভোগান্তি কমাতে এমন বেশ কিছু বিধান রেখে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’ চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। রাজধানীতে নাগরিক সেবাদানকারী তিনটি মন্ত্রণালয় ও সাতটি সংস্থা কয়েক দফা সভা করে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, ডেসকো, বিটিসিএল নীতিমালায় তাদের মতামত ও সুপারিশ দিয়েছে।

চলতি বছর এই নীতিমালা অনুসরণ করতে পারেনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। রাজধানীর অনেক সড়কেই বর্ষাকালেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। করোনা সংকটের আগে খোঁড়া অনেক সড়ক এখনো সংস্কার করা হয়নি। কয়েক দিন ঘুরে দেখা যায়, মালিবাগে আবুল হোটেলের পেছনের এলাকা, মোহাম্মদপুর শেখেরটেক এলাকার প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন গলি, খিলগাঁও এলাকার বিভিন্ন সড়ক, রামপুরা বনশ্রী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নীতিমালাটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ইতিবাচক। জনগণের ভোগান্তি কমাতে নীতিমালাটি সময়োপযোগী। একটি সড়ক মেরামত করার কয়েক দিন পরেই আবার সেটি খোঁড়া বন্ধ হবে। একটি সড়ক খুঁড়ে মাসের পর মাস ফেলে রাখার সুযোগ থাকছে না।

মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর—বর্ষা মৌসুমের এই পাঁচ মাস সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। আর বর্ষার সময় কোনো সড়ক খুঁড়তে হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে মূল ক্ষতিপূরণসহ অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ফি জমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে পুরো জামানত জরিমানা হিসেবে বাজেয়াপ্ত হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে সমন্বয়হীনতা ও জনভোগান্তির যে চিত্র, তা বদলাবে। নীতিমালা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মতামত থাকায় এটি বাস্তবায়ন সম্ভব।

খননকাজের তদারকি ও সমন্বয় করবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ১৩ সদস্যের ওয়ানস্টপ সমন্বল সেল। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এই সেলের সভাপতি আর প্রধান প্রকৌশলী সদস্যসচিব। এই কমিটি প্রতি দুই সপ্তাহ পর সভা করে কাজের সমন্বয় করবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-১) আ ন ম ফয়জুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে এই নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশন নীতিমালা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। তারাও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ শুরু করবে।

সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সদিচ্ছা ছাড়া এই নীতিমালা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে মনে করেন নগরবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আকতার মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নীতিমালায় জরিমানার বিধান রাখায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার চাপ থাকবে। সংস্থাগুলো যেন তাদের দেওয়া বার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।