সড়কে মোটরসাইকেল বন্ধ করে দেওয়া সমাধান নয়, বরং ভোগান্তি তৈরি করা

দেওয়ান সোহান
ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঠিক পরের দিন সকাল ছয়টা থেকে সেতুটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। অন্যদিকে ফেরি না চলায় ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। এখানেই শেষ নয়। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের প্রস্তাবও পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তাই যদি হয়, তাহলে হয়তো সামনে আরও দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে মোটরসাইকেলের চালকদের জন্য। ঈদে বাসে যাত্রী কম পাওয়ায় এই মোটরসাইকেলের দিকেই আঙুল তুলেছেন বাসমালিকেরা।

আমাদের দেশে মোটরসাইকেল আমদানিতেও রয়েছে সিসি সীমা। ভ্যাট-ট্যাক্সের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি দামেও কিনতে হয় দুই চাকার বাহনটি।

আমাদের দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার বেশি এবং তা ঠেকাতেই হয়তো এই তোড়জোড়। কিন্তু এ যেন মাথা ব্যথা হলে তা কেটে ফেলার উপক্রম।

সবার আগে খতিয়ে দেখা উচিত, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সড়কে দুর্ঘটনার কারণ এবং তা থেকে পরিত্রাণ পেতে কী করণীয়। নিরাপদ সড়কের দাবি এখন পুরো জাতির। আর তার জন্যই আমাদের কাজ করা উচিত। সেই সঙ্গে মোটরবাইকের মতো স্বাধীন যানবাহন নিয়ে যাতে মানুষ নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে এবং দেশে এই শিল্পের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি ও প্রসার হয়, সে লক্ষ্যেই যথোপযুক্ত সিদ্ধান্তই সরকারের নেওয়া উচিত।

সরকার, গণমাধ্যম, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণ এক যোগে কাজ করলেই কেবল দেশে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দায়ভার না নিয়ে কোনো কিছু বন্ধ করে দেওয়া সমাধান হতে পারে না।

সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঠেকাতে কীভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করা যেতে পারে, তার জন্য আমার পাঁচটি সুপারিশ আছে। সেগুলো হলো—
এক. সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও আধুনিক হওয়া উচিত। রাস্তা অনুযায়ী গতিসীমা নির্ধারণ, সিগন্যাল লাইট, সঠিক লেনে চলা ইত্যাদি বিষয়কে অটোমেশন করা অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য দেশে বিভিন্ন সড়কে (বিশেষ করে, যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ) আধুনিক মেশিন/ ডিভাইস স্থাপন করা উচিত। ট্রাফিক আইন মেনে না চললে মামলার কপি যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালকের ঠিকানায় পৌঁছে যায়। সেনানিবাস এলাকাতে কোনো যানবাহন চালাতে যেমন সবাই খুব সাবধান হয়ে যায়, তেমনই একটা পরিবেশ তৈরি করা উচিত।

দুই. ভালো মানের সার্টিফাইড হেলমেট পড়া বাধ্যতামূলক করা উচিত। কারণ, মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় মৃত্যুর ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মারা যায় মাথায় আঘাত লাগার কারণে।

তিন. ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী মোটরসাইকেল চালকদের জন্য নীতিমালা কিছুটা কঠোর করা উচিত। কারণ, এই বয়সী রাইডারদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।
চার. বিশেষ করে সচেতন করতে হবে ছোট-মাঝারী ট্রাকচালকদের এবং যাঁরা দূরপাল্লার বাস চালান তাঁদের। মহাসড়কে অটোরিকশা পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কমিউনিটিভিত্তিক কাজ করে যেতে হবে প্রতিনিয়ত।

পাঁচ. নিরাপদ সড়কের দাবীতে যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন কাজ করতে চায়, তাদেরকে সরকারি ও আন্তর্জাতিক সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।
মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার নানা কারণ মাথায় রেখে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো সড়কে মোটরসাইকেল বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয় বরং মানুষের ভোগান্তি তৈরি করা।
আসুন সবাই মিলে নিরাপদ সড়ক গড়ি।

লেখা: দেওয়ান সোহান (প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, দেশিবাইকারডটকম)