হইহই কাণ্ড, রইরই ব্যাপার

জেলা পর্যায়ে প্রতি ধাপে ছিল নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ, আর সেসব মোকাবিলা করতে হয়েছে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে
জেলা পর্যায়ে প্রতি ধাপে ছিল নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ, আর সেসব মোকাবিলা করতে হয়েছে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে

এলাহি কাণ্ড তো বটেই! শুরু হয়েছিল দুই হাজার স্কুলে ৮ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে৷ প্রায় ১১ মাসের বিরাট কর্মজজ্ঞ৷ এদের মধ্য থেকে সেরা হলো একটি স্কুল, পাঁচজনের আই-জেন দল৷ তবে এক অর্থে বিজয়ী সবাই৷ কারণ আই-জেন একটি নেহাত প্রতিযোগিতাই ছিল না, ছিল জানা আর জানানোর এক আলোর সফর৷ নতুন কিছু শেখা, শেখানো, গল্প-গান-বন্ধু-ক্যাম্প আর আনন্দ আড্ডায় আই-জেনের পরিধি ছাপিয়ে গিয়েছিল ‘শুধুই’ প্রতিযোগিতার সীমানা৷ আর এর পরিসর নিয়ে একটা আন্দাজ তো করাই যায়, সম্ভবত এটা বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আয়োজিত স্কুলভিত্তিক এ ধরনের কার্যক্রমের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়োজন৷ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইন্টারনেট সম্পর্কে সচেতনতা ও আগ্রহ তৈরির প্রয়াসে এবার তৃতীয়বারের মতো দেশব্যাপী এই আয়োজন হয়ে গেল গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোর আয়োজনে। সহযোগী ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

দুই হাজার স্কুলে ইন্টারনেট সচেতনতা

ক্যাম্পে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের রান্নাও করতে হয়েছে!
ক্যাম্পে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের রান্নাও করতে হয়েছে!

আই-জেন শুরু হয় দেশজুড়ে স্কুলভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রম ও আই-জেন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে৷ এক মাসে দুই হাজার স্কুলে অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিরাট এই কর্মযজ্ঞ সাধন করে প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা৷ স্কুলগুলোতে প্রায় তিন ঘণ্টার আয়োজনে প্রতিযোগিতা ছাড়াও ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া হয়৷ তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের নানা সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারে। অনুষ্ঠানটিতে আকর্ষণীয় অডিও ভিজুয়াল পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতিদিনকার জীবনে ইন্টারনেটের ভূমিকা, প্রভাব ও এর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়৷ শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল তিনটি বিষয়ে বিশেষ উপস্থাপনা৷ এর মধ্যে ‘শিক্ষা ও জ্ঞান’ অংশে ইন্টারনেটকে শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, তা তুলে ধরা হয়৷ ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তথ্য, সংবাদ ও বিনোদনের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে রাখার কৌশল শেখানো হয় ‘তথ্য-বিনোদন’ অংশে৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য ইন্টারনেট নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ শুধু ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই হবে না, জানতে হবে ইন্টারনেটে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়৷ এ বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ দেওয়া হয়ে ‘ইন্টারনেট নিরাপত্তা’ অংশে৷ এর পাশাপাশি ছিল ইন্টারনেট নিয়ে জানা-অজানার অনেক কিছু৷ মজার ও তাৎক্ষণিক আয়োজনে ছিল পুরস্কার জেতার সুযোগ৷

গ্র্যান্ড ফিনালের পথে
স্কুল পর্যায়ের আয়োজনের পর ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হয় জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা৷ স্কুল পর্যায়ে ২০০০ স্কুল থেকে ১০০০টি দল নির্বাচন করা হয়, যারা জেলা পর্যায়ে নিজের স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করে৷ দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় ইন্টারনেট সম্পর্কিত জানাশোনা যাচাইয়ের পাশাপাশি জীবনভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের, এভাবে আমরা পেয়ে যাই ৬৪ জেলার সেরা ৬৪টি আই-জেন স্কুল দল৷ এই ৬৪টি দল আট ভাগে আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়৷

বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় মনোযোগী শিক্ষার্থীদের দল
বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় মনোযোগী শিক্ষার্থীদের দল

আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা ও ক্যাম্প শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল একেবারেই নতুন এক অভিজ্ঞতা৷ তিন দিনের আবাসিক ক্যাম্পে­ শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বেশ কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ এর মধ্যে ছিল ইন্টারনেট কী, এটি কীভাবে কাজ করে, আলোচনা হয় ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো বিষয়গুলো নিয়ে৷ উইকিপিডিয়া কিংবা গুগল ট্রান্সলেটে নিজে অবদান রাখতে শিখেছে শিক্ষার্থীরা, তবে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ছিল প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি ও নিজের স্কুলের জন্য ওয়েবসাইট তৈরির বিষয়টি৷ গল্প-গান আর খেলার মধ্যেই হয় প্রতিযোগিতা৷ আট অঞ্চল থেকে নয়টি স্কুল দল বাছাই করা হয় চূড়ান্ত পর্বের জন্য৷
চূড়ান্তপর্বে নয়টি দল অংশ নেয় একটি টিভি রিয়েলিটি শোয়ে৷ এখানে প্রতিদিনই নতুন কোনো টাস্ক দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের৷ টাস্কগুলোতে নিজেদের বুদ্ধি ও ইন্টারনেটের শক্তি ব্যবহারের সুযোগ যেমন ছিল, তেমনি দেখা মেলে প্রিয় মানুষদের৷ দৈনন্দিন জীবনের পরিচিত নানান ঘটনা বা সমস্যার মোকাবিলা করবে তারা। আর সেটার সমাধান করতে হবে অবশ্যই ইন্টারনেটের সহায়তায়। এ নিয়েই প্রতিযোগিতা। টাস্কগুলোতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নম্বর পায় প্রতিটি দল। ছিল দর্শক ভোটও৷ এভাবে শীর্ষ চারটি দল নিয়ে হয় গ্রামীণফোন প্রথম আলো আই-জেনের গ্র্যান্ড ফিনালে৷ এবার প্রতিযোগিতা সরসারি দেখা যায় চ্যানেল আইয়ের পর্দায়৷ আমরা পেয়ে যাই আই-জেনের সেরা দল৷ অভিনন্দন সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আই-জেন স্কুল দলকে৷ অভিনন্দন পৌনে নয় লাখ শিক্ষার্থীদের, যারা আই-জেনে অংশ নিয়েছে৷