হজে যেতে চাইলে এখনই নিবন্ধন করুন

পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারাম (কাবা শরিফ)। ছবি: ফেরদৌস ফয়সাল
পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারাম (কাবা শরিফ)। ছবি: ফেরদৌস ফয়সাল

জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩০ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ইতিমধে্য প্রাক্‌–নিবন্ধন শেষ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক্‌–নিবন্ধনের সুযোগ এখনো রয়েছে। এবার যাঁরা হজে যেতে চান, তাঁদের এখনই প্রস্তুতি শুরু করা দরকার। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে এ বছর ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন সৌদি আরবে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন, অন্যরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।

এবার কত টাকা লাগবে

সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি হজ প্যাকেজ রয়েছে। একটি প্যাকেজে হজযাত্রীর খরচ হবে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয়টিতে খরচ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, অন্যটিতে খরচ হবে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া কোরবানির জন্য প্রতিটি প্যাকেজে আরও খরচ হবে ১২ হাজার ৭৫ টাকা (৫২৫ রিয়াল)। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানালেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় একাধিক প্যাকেজ রয়েছে। বেসরকারিভাবে কোরবানি ছাড়া একটি প্যাকেজে হজযাত্রীর খরচ হবে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা, দ্বিতীয়টিতে খরচ ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা।

.
.

পরামর্শ
* ভাষার ভিন্নতা, নতুন দেশ, নতুন পরিস্থিতির কারণে কিছুসংখ্যক হজযাত্রী সমস্যায় পড়ে থাকেন। কয়েকবার হজ পালন করেছেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কিছুটা ধারণা থাকলে, সচেতন হলে অনেক সমস্যা দূর করা যায়। হজযাত্রীদের সুবিধার্থে তাঁদের দেওয়া কিছু পরামর্শ:

১. সব ধরনের খরচ সম্পর্কে ধারণা রাখা: টাকা কমবেশির ভিত্তিতে নয়, প্যাকেজের সুবিধাদি দেখে, শুনে, বুঝে চুক্তি করবেন। বিমানভাড়া, বাসাভাড়া, হজের সময় মিনায় তাঁবুতে বা আজিজিয়ায় থাকা না–থাকা, ফিতরা ইত্যাদি আগে থেকে জেনে নিতে হবে।

২. হজ প্যাকেজ: হজ প্যাকেজ কত দিন, সৌদি আরবে অবস্থানের মেয়াদ কত দিন, কোথায় কত দিন অবস্থান এবং তা কীভাবে, বিস্তারিত জানতে হবে।

৩. মক্কা-মদিনায় বাসার অবস্থান: মক্কা-মদিনার বাসার ধরন এবং তা কাবা শরিফ থেকে কত দূরে, জেনে নেবেন।

৪. খাবার: সৌদি আরবে পৌঁছে তিন বেলা খাবার দেওয়া হবে কি না বা বিকল্প ব্যবস্থা কী, তা জানতে হবে।

৫. কোরবানি: প্রতারণা এড়াতে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবির কুপন কিনে দেওয়া ভালো।

৬. মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা: হজের সফরে মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা জরুরি।

৭. ফিতরা: ফিতরা বা স্থানান্তর (অর্থাৎ মক্কার বাসা কাবা শরিফের কাছে-দূরে একাধিকবার বদল করাকে ফিতরা বলে) আছে কি না। হজের আগে না পরে ফিতরা হবে, তা জানতে হবে।

৮. হজের দিনগুলো: মিনা, আরাফাতে খাবার, যাতায়াতে মোয়াল্লেম কী কী সুবিধা দেবেন, বিস্তারিত জেনে নেবেন।

৯. হজের নিয়মকানুন জানা: প্রয়োজনীয় বই-পুস্তক, হজ গাইড সংগ্রহ করে পড়ুন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘মক্কা মদিনার পথে প্রান্তরে’ বই পড়তে পারেন। www.prothomalo.com/hajj ওয়েবসাইটে হজের খবর সারা বছর পাওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে প্রথম আলো হজযাত্রীদের সহায়ক হজ গাইড প্রকাশ করে বিনা মূল্যে তা বিতরণ করে। এটি প্রথম আলোর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।

১০. ঘোষিত হজ প্যাকেজের চেয়ে কম টাকায় হজে গেলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

* হজযাত্রীদের সর্বশেষ নির্দেশনা, সংবাদ, প্রয়োজনীয় ফরম ডাউনলোড করা যাবে www.hajj.gov.bd ঠিকানা থেকে। তথ্যসেবাকেন্দ্র ০৯৬০২৬৬৬৭০৭

*  বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ২০২১ সালের প্রাক্‌-নিবন্ধিত হজযাত্রী চাইলে এ বছরই সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পরিচালক হজ, আশকোনা, ঢাকা বরাবর আবেদন করতে হবে।

.
.

প্রাক্-নিবন্ধন বাতিল করতে চাইলে
প্রাক্-নিবন্ধনের জন্য অগ্রিম টাকা প্রদান করে যদি কেউ হজে না যান, তাহলে ৫ হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। টাকা জমা দেওয়া ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে।

পাসপোর্ট বানাবেন যেখানে
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী হজযাত্রীরা নিজ নিজ জেলা অনুযায়ী পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে ওই জেলায় বসবাসকারীরা এমআর পাসপোর্ট বানাতে পারবেন। আবেদনপত্রসহ আরও তথ্য www.passport.gov.bd ঠিকানায় পাওয়া যাবে।

হজ প্যাকেজ
*  জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদ থাকতে হবে । পাসপোর্টের তথ্য পাতায় স্ট্যাপলার পিন বা ছিদ্র করবেন না।

* ৪৪ জন হজযাত্রীর জন্য ১ জন গাইড থাকবেন।

* কোরবানি বাবদ ৫২৫ রিয়াল পৃথকভাবে সঙ্গে নিতে হবে।

*  যদি কেউ আলাদা ফ্লাইটে সফর করতে চান, তাহলে অবশ্যই আলাদাভাবে নিবন্ধন করবেন।

*  নিবন্ধন করে হজযাত্রা বাতিল করতে চাইলে লিখিতভাবে হজ অফিস পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে ।

*  এজেন্সি ও হজযাত্রীর মধ্যে চুক্তির (ফরম-১৫) কপি হজযাত্রী সংরক্ষণ করবেন।

*  ট্রলিব্যাগ হজযাত্রীকে নিজ দায়িত্বে কিনতে হবে।

*  হজযাত্রীর অভিযোগ থাকলে (ফরম ১৭ ক বা ১৭ খ) জানাতে পারবেন।

*  প্রত্যেক হজযাত্রীকে তাঁর পাসপোর্টের সঙ্গে মক্কা ও মদিনার ভাড়াকৃত বাড়ি বা হোটেলের স্টিকার সংযুক্ত করতে হবে।

*  প্রাক্‌-নিবন্ধন, নিবন্ধন, ভিসা বা হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে তার দায়দায়িত্ব হজযাত্রী ও হজ এজেন্সির।

*  সরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনুসরণীয়: প্রাক্‌–নিবন্ধিত হজযাত্রী ২৮ হাজার টাকা সমন্বয় করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্যাকেজের অবশিষ্ট অর্থ (সোনালী ব্যাংক লি. স্থানীয় কার্যালয় শাখা মতিঝিল, ঢাকা, হিসাব নং ০০০২৬৩৩০০০৯০৮) জমা দেবেন। সনদ সংরক্ষণ করবেন।

 নিবন্ধনের পর যেতে না পারলে শুধু বিমান ভাড়া ও খাবার টাকা ফেরত পাবেন। হজযাত্রীদের জন্য ২ বেডের কোনো কক্ষ নেই, তাই স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা, কারও জন্য পৃথক কোনো কক্ষ নেই।

* বিস্তারিত হজ প্যাকেজ www.hajj.gov.bd ঠিকানায়

.
.

ভিআইপি হজ প্যাকেজে সাবধান
বিলাসবহুল হজ প্যাকেজ, যা ভিআইপি প্যাকেজ নামে বেশি পরিচিত। ভিআইপি প্যাকেজ ১৫ থেকে ২০ দিন। খরচ ৫ থেকে ১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। গত হজে এক দম্পতি ১২ লাখ টাকা খরচ করে মক্কায় পৌঁছে দেখেন, হিল্টন হোটেল তো দূরে থাক, কাবা শরিফ থেকে ১ হাজার ৩০০ মিটার দূরের এক বাসায় তাঁদের থাকতে দেওয়া হয়। এত টাকা দেওয়ার পরও কেন বিড়ম্বনা? মূলত তথ্য না জানা এবং কৌশলগত কারণেই হজযাত্রীরা প্রতারিত হন। মক্কায় যে কক্ষের ভাড়া ৩ জিলহজ পর্যন্ত ১০ হাজার রিয়াল, সেই কক্ষ জিলহজের ৪ তারিখ থেকে কয়েক গুণ বেশি হয়। অর্থাৎ তারিখ অনুযায়ী ভাড়া কমবেশি হয়। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা সরল মনে এজেন্সির লোকের কথা বিশ্বাস করেছেন। পাঁচ তারকা হোটেলে থাকার চুক্তিপত্র বা বুকিং আদৌ দেওয়া হয়েছিল কি না, তাও তাঁরা যাচাই করেননি। কারণ, বুকিং দিলে চুক্তিপত্র অথবা রিয়াল আদায়ের রসিদ থাকবে। বেশি টাকা দিয়েও হজ করতে এসে প্রতারিত হওয়া প্রসঙ্গে মক্কায় বসবাসকারী মাকসুদ সেলিম জানালেন, ভিসা হওয়ার আগে মক্কা-মদিনার বাসার কাগজপত্র ঠিক করতে হয়। বাসাভাড়ার চুক্তির ফটোকপি হজযাত্রী এজেন্সির কাছে চাইতে পারেন। হজযাত্রী তা সংরক্ষণ করবেন। তাহলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা কম। আরেকটি বিষয় হলো, কোন তারিখে, কোথায়, কত দিন থাকবেন, সংক্ষিপ্ত প্যাকেজ নাকি ফিতরা—এসব পরিষ্কার থাকা দরকার।

* ভিআইপি বলতে আপনি মক্কা, মিনা, মদিনা—তিনটি স্থানের জন্য ভিআইপি? নাকি একক স্থানের জন্য, তা জেনে নিন।

* এজেন্সি মালিকের সঙ্গে তথ্যগত কোনো অসংগতি (গ্যাপ) রাখবেন না। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না।

* রমজান মাসের মধ্যে আপনার কাঙ্ক্ষিত তারিখ অনুযায়ী হোটেল বুকিং, বিমান বুকিং, কাগজ দেখবেন ঠিক আছে কি না। মিনার চুক্তি, বাড়িভাড়ার চুক্তি আরবিতে থাকলে তা অনুবাদ করে মিলিয়ে দেখুন।

*  নিবন্ধিত কি না, ট্র্যাকিং নম্বর দিয়ে হজ ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করুন।

* সৌদিদের কাছে সব হজযাত্রী সমান । ভিআইপি হওয়ার প্রত্যাশা করলে প্রতারিত হতে পারেন। পদ–পদবি, সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে নয়, বিভিন্ন সেবা পেতে চাইলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিনতে হবে।

* সৌদি আরবে অবস্থানকালে পাসপোর্ট হাতে পাবেন না।

সব ধরনের খরচ সম্পর্কে ধারণা রাখুন
টাকা কমবেশির ভিত্তিতে নয়, প্যাকেজের সুবিধাদি দেখে, শুনে, বুঝে চুক্তি করবেন। বিমানভাড়া, বাসাভাড়া, হজের সময় মিনায় তাঁবুতে বা আজিজিয়ায় থাকা না–থাকা, ফিতরা ইত্যাদি আগে থেকে জেনে নিতে হবে।