হত্যা মামলার এজাহার বদলানোর অভিযোগ বাদীর

খুলনার দিঘলিয়া থানা-পুলিশের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার রাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় খুন হওয়া ইয়াসিন শেখের মা এই অভিযোগ তুলেছেন।

বুধবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত ইয়াসিনের মা হাফিজা বেগম। হত্যা মামলার এই বাদী অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ছেলে ইয়াসিনকে যারা হত্যা করেছে, ইন্ধন জুগিয়েছে, ষড়যন্ত্র করছে, তাদের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি এজাহার জমা দিয়েছিলেন তিনি। মোট ৩১ জনকে আসামি করেছিলেন; সাক্ষীদের নামও উল্লেখ ছিল। কিন্তু পুলিশ যে মামলা রেকর্ড করেছে, তাতে আসামি হিসেবে মাত্র ১৫ জনের নাম রয়েছে।

এ ছাড়া মামলার সাক্ষীর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে পুলিশ। যেসব আসামি ইয়াসিনকে কুপিয়েছিল, তাদের অনেকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২৫ জুলাই রাতে ইয়াসিন শেখকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৬ জুলাই বিকেলে জানাজা শেষে লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়। ২৭ জুলাই হাফিজা বেগম ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য দিঘলিয়া থানায় উপস্থিত হন। মামলা করার জন্য একটি লিখিত এজাহার থানায় জমা দেন। পুলিশ তাঁদের দুই ঘণ্টার বেশি সময় থানায় বসিয়ে রাখেন। এরপর পুলিশ একটি কাগজ এনে স্বাক্ষর করতে বলে হাফিজাকে। মামলা হয়েছে, তাই স্বাক্ষর করতে হবে বলে সে সময় পুলিশ তাঁকে জানায়।

হাফিজা সরল মনে স্বাক্ষর করে চলে আসেন। বাড়িতে এসে রাতে তিনি জানতে পারেন, তাঁর দাখিল করা এজাহারটি পাল্টে ফেলেছে পুলিশ। যে কাগজে তাঁর সই নেওয়া হয়েছিল, সেটি ছিল পুলিশের বানানো এজাহার। ওই এজাহারের ভিত্তিতে মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। এ অবস্থায় ছেলের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন মা হাফিজা। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচার দাবি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে ঘটনাটি একেক সময় একেকভাবে পক্ষপাতমূলক করার চেষ্টা চলছে। কোনো এক পক্ষ বাদীকে প্রভাবিত করে এসব বলাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহোদয়ের উপস্থিতিতে ২৭ জুলাই নিহত ইয়াসিনের মা হাফিজা বেগম যে এজাহার জমা দিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। বাদীকে তাঁর স্বজনেরা ওই এজাহার পড়ে শুনিয়েছেন। এজাহারে তিনি স্বাক্ষরও করেছেন। থানার সিসি ক্যামেরায় সেসব ফুটেজ সংরক্ষিত আছে।

নিহত ইয়াসিন শেখ (৪২) দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল গাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

পরিবারের ভাষ্য, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন ইয়াসিন। তিনি সেনহাটি ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আশরাফ মোল্লার চাচাতো ভাই এবং ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারহানা হালিমের সমর্থক ছিলেন।