হাকালুকিতে ফিরছে হিজল-করচের বাগান
মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে একসময় ছিল প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা হিজল-করচসহ জলজ উদ্ভিদের বন। তাতে অবাধে বিচরণ করত বন্য প্রাণী। সময়ের বিবর্তনে সবই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। হারানো সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হিজল-করচের বাগান সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বন মন্ত্রণালয়ের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ হাওরের দুটি এলাকায় সাড়ে সাত লাখ হিজল-করচের চারা লাগিয়েছে।
বন বিভাগ, প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাওর-সংলগ্ন এলাকায় জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বনভূমি উজাড় হয়ে গেছে। এর ফলে জলাভূমির হরিণসহ (সোয়াম্প ডিয়ার) বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী হাওর থেকে প্রায় বিলুপ্ত। মেছোবাঘ, বন বিড়াল, সাপসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হওয়ায় এরা আশপাশের জনবসতিতে প্রবেশ করে নির্বিচারে মারা পড়ছে। গাছপালা না থাকায় স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখির বিশ্রাম ও বাসা তৈরির পরিবেশ নেই।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একটি প্রকল্পের (স্ট্যান্ডিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন প্রজেক্ট-এসআরসিডব্লিউপিপি) মাধ্যমে হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলার হাল্লা এলাকায় ১৫০ হেক্টর এবং কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা এলাকায় ১৫০ হেক্টর জমিতে হিজল ও করচের চারা লাগানো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে রোপণ করা হয় আড়াই হাজার চারা। সেই হিসাবে লাগানো হয়েছে সাড়ে সাত লাখ চারা। চারা উত্তোলন, রক্ষণাবেক্ষণ ও বাগান সৃজনে ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এদিকে এ বছর মরে যাওয়া ও নষ্ট হওয়া গাছগুলোর শূন্যস্থানে লক্ষাধিক চারা রোপণ করা হয়েছে।
গত এক বছরে হিজল ও করচগাছগুলোর উচ্চতা এক থেকে দেড় ফুট হয়েছে। পুরো বর্ষাকালে এগুলো পানির নিচে ছিল। তখন গাছে লেগে থাকা শেওলা থেকে মাছ সহজে খাবার পেয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমে পানি সরে যাওয়ার পর এলাকার মানুষ হাওরের মধ্যে গরু ও মহিষের বাথান (একসঙ্গে অনেক গরু বা মহিষ লালন-পালনের স্থান) গড়ে তোলে। শত শত গরু ও মহিষ সেখানে অবাধে বিচরণ করে। এগুলো হিজল-করচের চারা গাছ নষ্ট করে ফেলছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান বলেন, ‘বাথানের কারণে বাগান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বাধা দেওয়ায় বিভিন্ন সময় এলাকাবাসী আমাদের লোকজনকে লাঞ্ছিত করেছে। এতে মামলাও হয়েছে। হাল্লার বালিজুরী বিলের চারদিকে বনায়ন ভালো অবস্থায় আছে। তবে পলোভাঙা বিলের কাছে চারা নষ্ট হয়ে গেছে।