হাকিমপুরে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সহকারী মনোয়ারুল ইসলামের ভুল চিকিৎসায় গত মঙ্গলবার ফেন্সি আরা বেগম (৪২) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফেন্সি আরা উপজেলার খট্টামাধবপাড়া গ্রামের আবদুর রশিদ সরদারের স্ত্রী এবং ঢাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
আবদুর রশিদ জানান, ছয় মাস আগে ফেন্সির পিঠে একটি টিউমার দেখা দেয়। ওই টিউমারের চিকিৎসা করানোর জন্য মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ফেন্সিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সহকারী মনোয়ারুল ইসলাম জরুরি বিভাগে এসে টিউমার দেখে অস্ত্রোপচার করলে ভালো হবে বলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটসংলগ্ন নাজমা ফার্মেসিতে নিয়ে যান। এ সময় তিনি এক হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে অস্ত্রোপচার করার কথা বলেন। তাঁর কথায় রাজি হয়ে প্রথমে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়।
আবদুর রশিদ অভিযোগ করেন, এরপর মনোয়ারুল ইসলাম ওই ফার্মেসির একটি কক্ষে রোগীকে শুইয়ে টিউমারের পাশে একটি ইনজেকশন দেন। সঙ্গে সঙ্গে রোগীর পুরো শরীরে ঝাঁকুনি দেয় ও চিৎকার করতে থাকেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগী নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ঘটনা বুঝতে পেরে মনোয়ারুল সটকে পড়েন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সের চালক রায়হান বলেন, ‘জয়পুরহাটে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য মুঠোফোনে আমাকে ডাকা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এসে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর সময় দেখি, রোগী নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) গোলাম-উর রহমান বলেন, ‘রোগীকে আমার কাছে আনার পর দেখি, তিনি মারা গেছেন। এরপর আমি তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের চালককে বলি। পরে লাশ তাঁর স্বজনেরা দাফন করেন।’
এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে গিয়ে চিকিৎসা সহকারী মনোয়ারুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় তাঁর দায়িত্ব থাকলেও তাঁর পরিবর্তে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওগ্রাফার এনামুল হক দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ছাড়া একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
নাজমা ফার্মেসির মালিক মেহেদী বলেন, ‘অনেক চিকিৎসক আমার দোকানের ওই কক্ষে ছোট অস্ত্রোপচার করেন। সেদিন মনোয়ারুল ইসলামও ওই রোগীকে অস্ত্রোপচার করার জন্য কক্ষে নিয়ে গিয়ে লোকাল ইনজেকশন দেন। তারপর রোগী মারা যায়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সোলায়মান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার কথা শুনেছি। তবে তাঁকে কী ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে, তা লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। মনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দিনাজপুরের সিভিল সার্জনকে (ভারপ্রাপ্ত) জানানো হয়েছে। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ সিভিল সার্জনকে দেওয়া হয়েছে।’
থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আহসান হাবীব বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।