হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের ধান

হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের ধান
হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের ধান

দাদখানি চাল কিংবা উড়কি ধানের মুড়কি—একসময় প্রচলিত থাকলেও এখন সেগুলো আর নেই বললেই চলে। আধুনিক কৃষিব্যবস্থার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের ধান। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ও কম খরচে চাষযোগ্য এসব ধানের জাত সংরক্ষণে ঠাকুরগাঁওয়ে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ১৯১১ সালে ১৮ হাজার জাতের ধানের একটি রেকর্ড আছে। ১৯৮৪ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে করা একটি জরিপে ১২ হাজার ৪৮৭ জাতের হিসাব পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০১১ সালের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে আট হাজার জাতের ধান আছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানভেদে নামের হেরফের থাকলেও একসময় যে ধানগুলো চাষ করা হতো, তার মধ্যে ছিল ভাদই, কাকুয়া, নাইজারশাল, এলাই, মালশালা, বিন্নি, শালি, দাদখানি, নীলকমল, মইন্দাগিরি, ডুমরা, ফুল বালাম, লক্ষ্মীবিলাস, লোহাজাং, লালচল্লিশ, চন্দনসহ আরও অনেক জাতের ধান। এসব ধান চাষ করতে কোনো বীজ বাজার থেকে কিনতে হতো না। বীজের জন্য কিছু ধান আলাদা করে ঘরে তুলে রাখলেই চলত; যা দিয়ে পরের বছর ধান চাষ করা যেত। জমিতে দিতে হতো না কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। বন্যার সময় পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচ থেকেও এসব ধানের মাথা দেখা যেত।
জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ব্রির বীজ ব্যাংক আড়াই হাজার জাতের মতো ধান বীজ সংরক্ষণ করতে পেরেছে। এ ছাড়া হারিয়ে যেতে বসা ধান সংরক্ষণ করে আশা জাগিয়ে রেখেছে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি)।
বিলুপ্তপ্রায় দেশি জাতের ধান সংরক্ষণে ঠাকুরগাঁওয়ে কাজ করছে মানবকল্যাণ পরিষদ (এমকেপি) নামের স্থানীয় একটি সংস্থা। সংস্থাটির পরিচালক রবিউল আযম জানান, একটি দাতা সংস্থার আর্থিক সহায়তায় ঠাকুরগাঁওয়ে ১৬টি প্রায় বিলুপ্ত ধানের জাত কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় করতে একটি প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তাঁরা। পরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন সীমিত আকারে বিলুপ্তপ্রায় দেশি জাতের ধান সংরক্ষণে কাজ চলছে।
হারিয়ে যাওয়া ধান সংরক্ষণে সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ভূপেশ কুমার মণ্ডল।