হাসপাতালে স্বাভাবিক সেবা ফেরাতে চান চিকিৎসকেরা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল
ফাইল ছবি

হাসপাতালে করোনা রোগী কমছে। সারা দেশে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে ৮৭ শতাংশ শয্যা খালি পড়ে থাকছে। জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা ছাড়া অন্য রোগীর চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক অবস্থায় আনা দরকার।

হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ কিছু হাসপাতালে অন্য রোগীর চিকিৎসা স্থগিত করা হয়। কোনো কোনো হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ আছে কয়েক মাস ধরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একই সঙ্গে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা চালু রাখার কথা বলেছে। এর জন্য যে অবকাঠামো দরকার, তা অনেক হাসপাতালে নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আট বিভাগের চিকিৎসকেরা কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দিয়ে বলেছেন, সারা দেশের রোগীদের ভরসাস্থল ঢাকা মেডিকেল। করোনা রোগীর চিকিৎসার কারণে অনেক নন-কোভিড বা অন্য রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

হাসপাতালে শুধু করোনা রোগীর শয্যা খালি থাকছে তা নয়, অনেক পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়মিতভাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত এক দিনে ২৮টি কেন্দ্রে কোনো করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়নি। ১৮টি কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১০টি বা তার কম।

অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হারও অনেক কম। সর্বশেষ এক দিনে ১৪ হাজার ৭৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ৩৯৬ জনের। শনাক্তের হার ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত প্রায় দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে। সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে দেশে গণটিকাদান শুরু হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে।

জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা পুরোপুরি দূর হবে না। করোনাকে রেখেই চিকিৎসাব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগী পৃথক করার আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। করোনার চিকিৎসা সংকোচন করে লাভ হবে না।’

চিকিৎসকদের যুক্তি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএমসিএইচ-২ ভবন ও বার্ন ইউনিটে মোট ৮০০ শয্যা করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত। ১১ ফেব্রুয়ারি পরিচালককে লেখা আবেদনে ঢাকা মেডিকেলের আটজন চিকিৎসক করোনা চিকিৎসা শুধু বার্ন ইউনিটে চালু রাখার জন্য বলেছেন। এই চিঠিতে সই করেছেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. বিল্লাল আলম, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক সোহেলী রহমান, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম, হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক অখিল রঞ্জন বিশ্বাস, নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক কাজী গিয়াস উদ্দিন আহমদ, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চিকিৎসক ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ এবং কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ইশতিয়াক আহমেদ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিএমসিএইচ ভবনে প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রোগী ভর্তি থাকেন। এই ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ হাজার রোগী সেবা নিতেন। এসব রোগী সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ডিএমসিএইচ-২ ভবন চালু হলে বিপুল জনগোষ্ঠীর সেবা আবার চালুসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি সচল রাখা সম্ভব হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকেরা যুক্তিসংগত কথা বলেছেন। তবে করোনা চিকিৎসা একেবারে গুটিয়ে ফেলা যাবে না। বরং যেকোনো সময় বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বেশি মানুষকে সেবা দিতে চাই। এ ব্যাপারে খুব শিগগির সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’

কত শয্যা খালি

গতকালের হিসাব অনুয়ায়ী, ঢাকা মেডিকেলে ৩৮৩টি শয্যা খালি ছিল। সারা দেশে করোনার জন্য নির্ধারিত ১০ হাজার ৩২৩টি শয্যার মধ্যে ৮ হাজার ৯৪৬টি অর্থাৎ ৮৭ শতাংশ খালি ছিল। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ১০টি শয্যার সব কটিই খালি বেশ কয়েক দিন ধরে। শয্যা খালি আইসিইউয়ের ক্ষেত্রেও। সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা আছে ৫৮২টি। এর মধ্যে ৪২৫টি বা ৭৩ শতাংশ গতকাল খালি ছিল।

তবে এখনই করোনা চিকিৎসাসেবা সংকুচিত করার কথা ভাবছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মো. ফরিদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেছি। বড় সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আসতে হবে।’