হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার প্রধান শিকার দরিদ্ররা

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথামূলক বই হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: আ মেমোয়ার। বইটির ‘বাংলা ও বাংলাদেশের ধারণা’ শীর্ষক অধ্যায়ে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ঘিরে নানা স্মৃতি। অমর্ত্য সেন পশ্চিমবঙ্গে বেড়ে উঠলেও তাঁর ছোটবেলার একটি সময় কেটেছে ঢাকার ওয়ারীতে। চল্লিশের দশকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সেই সময়ে বাংলা রক্তাক্ত হয়েছিল হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায়। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভাজন ও তার বীভৎসতা দাগ কেটেছিল অমর্ত্য সেনের শিশুমনে। অভুক্ত সন্তানদের মুখে খাবার দিতে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে প্রাণ হারানো মানুষটির কী দোষ ছিল? অচেনা-অজানা একটি মানুষকে যাঁরা শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হত্যা করলেন, তাঁরা কেন এটা করলেন? এ রকম নানা প্রশ্ন ছিল স্কুলপড়ুয়া অমর্ত্য সেনের। গোষ্ঠীস্বার্থের জন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলেও তার প্রধান শিকার যে দরিদ্র মানুষ, তা বুঝতে বেশি দেরি হয়নি এই অর্থনীতিবিদের। তাঁর স্মৃতিকথার ‘বাংলা ও বাংলাদেশের ধারণা’ শীর্ষক অধ্যায়টির তিন পর্বের প্রথম অংশ আজ প্রকাশিত হলো। ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন আজিজ হাসান

১৯৪৮ সালে শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেন, বোন সুপূর্ণা ও তাঁদের চাচাতো বোন মীরা, আলোকচিত্রী: অমল কুমার সেন। ছবিটি অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথা হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: আ মেমোয়ার-এর প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়েছে।

১৯৪৪ সালের এক বিকেল। রক্তাক্ত এক ব্যক্তি দরজা পেরিয়ে আমাদের বাড়ির আঙিনায় ঢুকলেন। তিনি ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। স্কুল (পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন) বন্ধ থাকায় তখন আমি ছিলাম ঢাকায়। ওই বিকেলে আমাদের বাড়ি জগৎ কুটিরের বাগানে আমি একাই ছিলাম। ওই ব্যক্তি ছিলেন একজন মুসলমান দিনমজুর। নাম তাঁর কাদের মিয়া। তাঁর বুকে ও পিঠে গুরুতরভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। সামান্য কিছু মজুরির জন্য কাছের একটি বাড়িতে কাজ শেষ করে তিনি নিজের বাসায় ফিরছিলেন। আমাদের এলাকাটি ছিল হিন্দুপ্রধান। সেখানকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজরা রাস্তায় তাঁকে ছুরি মেরেছিল। গুরুতর আহত কাদের মিয়া ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে পানি খেতে চাইলেন, সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করলেন তিনি। তখন কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। চিৎকার করে মা-বাবাকে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে পানি আনতে গেলাম। আমার বাবা দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। কিন্তু হায়! কাদের মিয়াকে বাঁচানো গেল না।

তখন আমার বয়স ১১ বছর ছুঁই ছুঁই। আমি এটুকু বুঝতাম যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন খুবই খারাপ। তবে ওই বিকেলে রক্তাক্ত কাদের মিয়াকে সহায়তার চেষ্টা ও পানি পান করাতে গিয়ে বিষয়টি নতুনভাবে টের পেলাম।

যখন তাঁর নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠছিল, তখন আমার কাছে হঠাৎ আরোপিত এই বিভাজন এবং মানুষের তৈরি করা শত্রুতার পাশবিক নিষ্ঠুরতা ও ভয়ানক পরিণতি দৃশ্যমান হয়ে উঠল। আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে কেন এমন কিছু মানুষের হাতে কাদের মিয়াকে খুন হতে হলো, যারা তাঁকে চেনেও না। এসব খুনির শুধু একটি বিষয়ই জানা ছিল যে কাদের মিয়া একজন মুসলমান, তিনি একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ।

আমি যখন এই বেদনাদায়ক ঘটনার ধাক্কা থেকে পুরোপুরি বের হয়ে এলাম, তখন বিষয়টি নিয়ে আমার মা-বাবার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বললাম। আমার বাবা বললেন, ‘প্রতিটি খারাপ ঘটনার মধ্য দিয়ে তুমি বিষয়টি বুঝতে পারবে।’ বীভৎস ওই সময়ে ক্রমেই নৈরাশ্যবাদী হয়ে উঠছিলেন আমার বাবা। তিনি বললেন, সম্ভবত আরও ঘটনা আছে, যা এর চেয়েও জঘন্য। আমার মা বললেন, না। এ ধরনের পাশবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে মানুষ বাঁচতে পারে না। বাবা বললেন, এটা মানুষের আরেকটি চেহারা, যা বিচার-বিবেচনাহীন হিংস্রতায় ভরা। আমরা মানুষের দয়ালু ও মানবিক চেহারা খুব পছন্দ করি। কিন্তু যে হিংস্রতা দেখা যাচ্ছে, তা অস্বীকার করা যাবে না।

পরিচয়ের আড়ালে নিষ্ঠুরতা

মানুষের সম্প্রদায়গত পরিচয়ের আড়ালে কী নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে থাকে, তা নিয়ে আমি ভাবতাম। সেখান থেকে ওই বিকেলের স্মৃতি আমার কাছে বারবার ফিরে আসত।

সত্যিকার অর্থে, আমরা যদি ধর্মীয় সম্প্রদায়কেই প্রধান হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে মানুষ হিসেবে যে অনন্য পরিচিতি, তা মানুষকে শুধু মুসলিম বা শুধু হিন্দু বা এ রকম কোনো পরিচয়ে দেখার মধ্যেই শেষ হবে।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে মানুষের এ রকম একমাত্রিক হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে সহিংসতাই উসকে দেওয়া হয়। সারা জীবন আমি সম্প্রদায়গত দর্শনের বিষয়ে সংশয়ী। যদিও বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে তা বন্ধন ও সহানুভূতি তৈরি করতে পারে। সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে মানুষকে আলাদা করার যে অমানবিকতা ছোটবেলায় আমি দেখেছি, সে কারণেই আমার এমনটা হয়েছে। কোনো একটি বিশেষ পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে দেখার বিপদগুলো নিয়ে বেশ কয়েক দশক পর আমি একটি বই লিখি। আইডেনটিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স: দ্য ইলিউশন অব ডেসটিনি নামের বইটি ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়। এই বই লেখার সময় আমার কেবলই মনে হচ্ছিল, আমি নিছক একটি যাত্রা শেষ করছি, যেটা অনেক দশক আগে শুরু করেছিলাম, কাদের মিয়া হত্যাকাণ্ডের ওই রক্তে ভেজা বিকেলে।

দারিদ্র্য কেড়ে নেয় সব স্বাধীনতা

আমার বাবা যখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন, কাদের মিয়া তখন বলেছিলেন, স্ত্রী তাঁকে দাঙ্গার মধ্যে এই এলাকায় না আসার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কাজের খোঁজে, সামান্য কিছু উপার্জনের জন্য তাঁকে বের হতে হয়েছিল। কারণ, তাঁর পরিবারে খাওয়ার কিছু ছিল না। এর ফলে কী হলো? অর্থনৈতিক কারণে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় তাঁর প্রাণ গেল।

অমর্ত্য সেন
কাদের মিয়ার সামান্য ওই আয় ছাড়া পরিবার চলতে পারলে তাঁর ওই বিপদের সময় কাজের খোঁজে বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন পড়ত না।

কাদের আমার মাকে বলেছিলেন, অভুক্ত ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে তিনি আর থাকতে পারেননি। তাদের জন্য খাবার কিনতে কিছু উপার্জনের আশায় তাঁকে বেরোতে হয়েছিল। আমি বারবার কাদেরের স্ত্রীর কথা ভাবছিলাম, এ রকম ঝুঁকি না নিতে তিনি স্বামীকে অনুনয়-বিনয় করছেন। এই ঘটনা দীর্ঘদিন আমার চিন্তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এর মধ্য দিয়ে আমি দারিদ্র্যের সর্বগ্রাসী রূপ সম্পর্কে বুঝতে পারি। দারিদ্র্য যে মানুষের সব স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, তা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমনকি খুন হওয়ার মতো ঝুঁকি এড়ানোর স্বাধীনতাও কেড়ে নেয় দারিদ্র্য। এ ঘটনায় অর্থনৈতিক শ্রেণির বিষয়টি অনেক বড় পরিসরে আমার সামনে ধরা দেয়।

লোকজনকে ঘর থেকে বের না হতে বলাটা অবশ্যই উপদেশের (দাঙ্গার সময় আমরা বারবার যা শুনতাম) মতো শোনাবে। কিন্তু ঘরে থাকার অর্থ যদি সন্তানদের না খাইয়ে রাখা হয়, তাহলে আপনি কী করতে পারেন? এটা আশ্চর্য হওয়ার মতো নয় যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অধিকাংশই সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির। সব সময় তাদেরই সবচেয়ে সহজে হত্যা করা যায়।

ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ভয়াবহতা বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক শ্রেণি বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে আমার খুব বয়স হওয়া লাগেনি। ১৯৪০-এর দশকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত মানুষের অধিকাংশেরই একটি শ্রেণিপরিচয় রয়েছে (তারা এসেছে শ্রমজীবী বা বাস্তুচ্যুত পরিবার থেকে), যদিও তাদের ভিন্ন ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত (হয় মুসলিম বা হিন্দু) পরিচয় রয়েছে।

ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ভয়াবহতা বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক শ্রেণি বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে আমার খুব বয়স হওয়া লাগেনি। ১৯৪০-এর দশকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত মানুষের অধিকাংশেরই একটি শ্রেণিপরিচয় রয়েছে (তারা এসেছে শ্রমজীবী বা বাস্তুচ্যুত পরিবার থেকে), যদিও তাদের ভিন্ন ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত (হয় মুসলিম বা হিন্দু) পরিচয় রয়েছে।

দেশভাগের পক্ষে ছিলেন উচ্চবিত্তের হিন্দুরা

বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মোটেও নতুন কিছু ছিল না। ভারতের বাকি অংশের মতো এখানেও নানা গোষ্ঠীর উসকানিতে বিশ শতকের বিভিন্ন সময়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়েছে। তবে ১৯৪০-এর দশকে যা হয়েছে, তা ছিল সত্যিকারের ভয়াবহ ও নজিরবিহীন। দেশভাগের রাজনীতি—এক অংশের দাবি আর অপর অংশের বিরোধিতা হিন্দু-মুসলিম অনৈক্য নাটকীয়ভাবে উসকে দেয়। ওই দশকের তীব্র সহিংসতা, যার উপস্থিতি আমার ঢাকার জীবনে এড়ানোর সুযোগ ছিল না। শান্তিনিকেতনে থাকাকালে পরিস্থিতি তেমনটা ছিল না। তবে ১৯৪৭ সালের ঠিক আগে স্বাধীনতা ও দেশভাগ যখন উঁকি দিচ্ছিল, তখন এই হিন্দু-মুসলিম অনৈক্য চূড়ায় ওঠে।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ দেশভাগের দাবি তোলে, যেখানে মুসলমানদের জন্য আলাদা দেশ হবে। অবিভক্ত ভারতে হিন্দু ও মুসলিম ‘দুই জাতি’ তত্ত্বের ভিত্তিতে এই দাবির পক্ষে মুসলিম লীগের নানা বিবৃতিতে বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এই ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ নিয়ে আমার পরিবারে অনেক আলোচনা হয় এবং এটা যে একটি ভ্রান্ত ধারণা, সে বিষয়ে সবাই একমত হন। আমার নানা ক্ষিতি মোহন (খ্যাতিমান লেখক অধ্যাপক ক্ষিতি মোহন সেন) মনে করতেন, ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞানতা থেকে এই দ্বিজাতিতত্ত্ব এসেছে। আমার পরিবার মনে করত, হিন্দু ও মুসলমানের সম্পর্ক হবে গঠনমূলক ও আন্তরিক। শুধু ধর্মীয় চর্চা ছাড়া দুই সম্প্রদায়ের মধ্যকার ব্যবধানকে তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করত না।

দেশভাগের দাবির বিষয়টি মুসলিম লীগ থেকে শুরু হলেও বাংলার অনেক উচ্চবিত্ত হিন্দু (প্রধানত উচ্চবর্ণের) দ্রুত ভারত ভাগের অংশ হিসেবে প্রদেশটি বিভক্ত করার পক্ষ নিল।

বাংলা ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তাদের সবাই পাকিস্তানে চলে গেলেও তুলনামূলকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হিন্দুরা, যাঁরা সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে প্রভাবশালী ছিলেন এবং মোটের ওপর বেশ ধনী ছিলেন, তাঁরা তাঁদের ক্ষমতা ও আধিপত্য হারাতেন। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের সুবিধাভোগী হিন্দুরা কী মাত্রায় বাংলা ভাগের জন্য কাজ করেছিলেন, তা সম্প্রতি জয়া চক্রবর্তী তাঁর এক গবেষণায় ভালোভাবেই তুলে এনেছেন।

এর আগে ১৯০৫ সালেও ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন বাংলা ভাগের চেষ্টা করেছিলেন। পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে নতুন প্রদেশ গঠন করে রাজধানী করেছিলেন ঢাকাকে। অবিভক্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদ ব্রিটিশ শাসনবিরোধী মনোভাব তৈরিতে ভূমিকা রাখছে, এমন উদ্বেগও তাঁর ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল। বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ব্রিটিশদের আশা ছিল, বাঙালি মুসলমান (তারাই হতো ঢাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি) এটা সমর্থন করবে। তবে বাঙালি সমাজের সব অংশ থেকেই লর্ড কার্জনের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়। পরিণামে লর্ড কার্জন ওই উদ্যোগ থেকে সরে আসতে বাধ্য হন এবং ১৯১১ সালে বাংলা আবার এক হয়।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের একটি ফসল হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি এসেছিল। ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী এক সভায় এই গান প্রকাশ করেন ও গেয়ে শোনান তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এই গানকে জাতীয় সংগীত হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

১৯৪০-এর দশকেও প্রকৃতপক্ষে বাংলা অবিভক্ত থাকার একটি সম্ভাবনা ছিল। নিজেদের একটি দেশ হওয়ার আলোচনা ছিল। ভারতবর্ষকে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলা নামে তিন দেশে ভাগ করার প্রস্তাব উঠেছিল। কিছু বাঙালি রাজনৈতিক নেতা যেসব বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার একটি ছিল এটি। এই প্রস্তাবের পক্ষে মুসলমানদের একটি অংশের সমর্থনও ছিল। কিন্তু হিন্দু সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির কাছে এই প্রস্তাব তেমন সাড়া পেল না। বিভক্ত ভারতে অবিভক্ত বাংলা নিয়ে আমার নিজের পরিবারেও মতভিন্নতা ছিল, এর পক্ষে সীমিত সমর্থন ছিল। মূলত তাঁরা সবাই যেকোনো ধরনের ভারত ভাগের বিরোধী ছিলেন।